ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫ , আজকের সময় : শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫

ঘোড়াঘাটে ৭ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ভাঙাচোরা সাঁকো

ঘোড়াঘাটে ৭ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ভাঙাচোরা সাঁকো

মো. সুলতান কবির, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে ৭ টি গ্রামের মানুষের ৩০ বছরের দাবি-দেউলী ঘাটে একটি সেতু। বর্ষা এলেই সিমেন্টের পিলারের ওপর ভাঙাচোরা বাঁশ-কাঠের সাঁকো পেরিয়ে জীবন বাজি রেখে চলাচল করতে হয়। দুর্ঘটনার ঝুঁকি সবসময় করছে এ এলাকার জনসাধারণ।

উপজেলার ৩নং সিংড়া ইউনিয়নের সীমানা ঘেঁষে মাইলা নদীর ওপর দেউলী ঘাট। দীর্ঘ ৩ দশক ধরে এখানে একটি সেতুর জন্য আকুল আবেদন করে আসছে প্রায় ৭টি গ্রামের মানুষ। বর্ষা মৌসুমে শিশু, শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ ও রোগীদের যাতায়াত যেন চরম দুর্ভোগ ও উৎকণ্ঠার আরেক নাম হয়ে দাঁড়ায়। নৌকা কিংবা ভাঙাচোরা বাঁশ-কাঠের সাঁকোই এখনো তাদের একমাত্র ভরসা। যা প্রতিদিনই হয়ে উঠছে মৃত্যুফাঁদ্
জানা গেছে, দেউলী ঘাট এলাকাটি কৃষিনির্ভর একটি জনবহুল অঞ্চল এবং  উপজেলা সদর ওসমানপুরের সাথে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগপথ। এখানে প্রতিদিন নদীর ওপারের ৭টি গ্রামের হাজার-হাজার মানুষ কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া, চিকিৎসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য নদী পার হন। বর্ষা মৌসুমে কৃষি পণ্য আনা নেওয়ার জন্য বিরাহিমপুর গুচ্ছগ্রাম হয়ে  প্রায় ৫ কি.মি রাস্তা অতিক্রম করতে হয়। এতে সময় ও অর্থ দুটোই অপচয় হয়। অপরদিকে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। সেতু না থাকায় ভাঙাচোরা সাঁকোই তাদের একমাত্র ভরসা।

খাইরুল গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব বয়োবৃদ্ধ তারাপদ সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, “যৌবনকালেই ব্রিজ পাইনি, এ বুড়া বয়সে আসে হামরা (আমরা) সেতুর আশা ছাড়া দিছি। সাংবাদিক হেরক কয়া আর কি হবি, তারা কি করবার পাবি! কত এমপি, মন্ত্রী, চেয়ারম্যান, মেম্বর গেলো আলো হামাহরের অবস্থা উঙ্কাই (একই রকম) থাকলো।”

নদীর এপারের শ্যামপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বয়বৃদ্ধ শচীন সহ শাহারুল, বিষ্ণু নামের একাধিক বাসিন্দারা বলেন, “এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে লোকজন এসে এখানে এক সপ্তাহ ধরে তাঁবু ফেলে বিভিন্ন মাপ যোগ করে মাটি পরীক্ষা করে। এক সপ্তাহ থাকে তারা চলে গেছে আর কখনো আসেনি। এ সেতু আসলে হবেকিনা জানি না, এখন আমরা আশাই ছাড়ে দিছি। বন্যার সময় হামাহরে (আমাদের) এমনি কষ্ট, সাঁকো ডুবা যায়া কাঠ ভাসা দুরে চলে যায়। তখন সাঁতরে নদী পার হওয়া লাগে।”

স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম  বলেন, আমরা বছরের পর বছর ধরে ব্রিজের দাবি জানিয়ে আসছি, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বর্ষা এলেই নদী পারাপারে মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয় ।

এলাকার শিক্ষার্থী নাসরিন আক্তার বলেন,
“বর্ষায় সাঁকো দিয়ে স্কুলে যাওয়া খুব ভয় লাগে। অনেক সময় পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।”

এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিরা ব্রীজ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। ফলে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে এই গুরুত্বপূর্ণ সংযোগপথ। তাদের দাবী, দ্রুত এই ঘাটে একটি বড় আকারের পাকা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করা হোক এবং নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করতে ২ দিন তার কার্যালয়ে গিয়ে তার দেখা পাওয়া যায়নি। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তিনি অফিসিয়াল কাজে রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। সেকারণে প্রকৌশলী অফিস থেকে তথ্য যাচাই করে জানা যায় সেতুটির ব্যাপারে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার অধিদপ্তরের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে কিন্তু কোন সংবাদ বা নির্দেশনা আসেনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সার্ভেয়ার জহুরুল ইসলাম।

এ বিষয়ে ৩নং সিংড়া ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন জানান, বিগত সরকারের আমলে এমপি থেকে শুরু করে উপজেলা পরিষদ থেকে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল কিন্তু কোন কাজ হয়নি। এ পর্যায়ে আমার নিজ উদ্যোগে নতুন করে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের মাধ্যমে আবারও প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে, আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি আমরা একটি সুসংবাদ পাবো।

এ ব্যাপারে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি দেউলী ঘাটে গিয়েছিলাম। আসলে এখানকার মানুষের জন্য সেতুটি খুবই দরকার। সেতু না থাকার কারণে কয়েকটি গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভাগ্য রয়েছে যেমন বন্যা আসলে যাতায়াতের সমস্যা, শিশু বাচ্চাদের পারাপারে সমস্যা, কৃষি পন্য পারাপারে সমস্যা, বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাতায়াত সহ জরুরী প্রয়োজনে খুব তাড়াতাড়ি নিশ্চিন্তমনে পারাপারের কোন উপায় নেই। সবসময় দূর্ঘটনার একটি আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও উপজেলায় আসতে হলে বহুদূর ঘুরে আসা সহ নানা সমস্যার কারণে সেতুটি খুব জরুরী। প্রয়োজনে আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করবো।”