
অগ্রণী ব্যাংকের জমি নিলামে প্রতারণা, সাংবাদিকের কাজে দালাল চক্রের বাধা ও হুমকি
রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) শাখার অগ্রণী ব্যাংকে জমি নিলামকে ঘিরে প্রতারণা ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সকালে ব্যাংকে উপস্থিত এক ক্রেতা অভিযোগ করেন, নিলামে অংশগ্রহণ করতে গেলে ব্যাংক ম্যানেজার নানা অজুহাতে গড়িমশি করতে থাকেন। কারন, আগের রাতেই জমির মালিক হামজা ও আক্তার নামের এক প্রতারকের যোগসাজশে রফাদফা করেন ব্যাংক ম্যানেজার।
জানা গেছে, নিলামে তোলা জমিটির মূল্য নির্ধারন হয় ৭১ লাখ টাকা। অথচ জমিটির ওপর ব্যাংক ঋণ রয়েছে মাত্র ২৬ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টাকা। এরই মধ্যে সোমবার (২৫ আগস্ট) রাতে প্রতারক আক্তার ও মালিক হামজা একজন নারী ক্রেতার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা বায়না গ্রহন করে এবং কথা হয় পরের দিন সকালে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করবেন। সেই প্রতিশ্রুতি অনুয়ায়ী পরের দিন সকালে সেই নারী ক্রেতা নিজের ১১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লোকসানে বিক্রি করে, ডিপিএস ভাঙে এবং গরু বিক্রি করে নগদ টাকা সংগ্রহ করে ব্যাংকে যান। কিন্তু তখন প্রতারক আক্তার ও হামজা জানিয়ে দেন যে তারা জমি বিক্রি করবেন না। এতে ক্রেতার মাথায় যেন বাজ পড়ে। মহিলা নিলামে অংশগ্রহন করতে টেন্ডারড্রপের সিদ্ধান্ত নেন এবং এতেও তাকে বাধাগ্রস্ত করা হয়। অথচ গোপনে অন্য একজন ক্রেতার নিকট উচ্চ দামে জমিটি বিক্রয় করেন। ঘটনাটি জানতে পেরে মহিলাটি আরও ১০ লক্ষ বেশি দাম দিতে চান। কিন্তু প্রতারক আক্তারের ইশারায় ব্যাংক ম্যানেজার সাঁড়া না দিয়ে তাকে নিরাস করেন।
এ ঘটনায় ব্যাংকের ভিতরে হট্টগোল শুরু হলে খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তখন প্রতারক আক্তার নিজেকে রাজশাহীর স্থানীয় একটি সুনামধন্য পত্রিকার মালিক পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের হুমকি দেন। এমন ঘটনায় ব্যাংক ম্যানেজার সবাইকে বাইরে গিয়ে সমাধানের পরামর্শ দেন। তারা সবাই ব্যাংকের বাইরে একটি চায়ের দোকানে গিয়ে হট্টোগোল শুরু করেন। উপস্থিত সাংবাদিকদের একজন আক্তারের পরিচয় দেওয়া সেই পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে কথা বললে প্রতারক আক্তারকে আইনের হাতে সোপর্দের পরামর্শ দেন। এতে আক্তার ক্ষিপ্ত হয়ে ওই সাংবাদিকের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এসময় সাংবাদিকরা তাদের বাকবিতন্ডার ভিডিও ধারন করতে থাকে। এতে প্রতারক আক্তার আরও ক্ষিপ্ত হয়ে এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ছুঁড়ে ফেলে দেন।
এই ঘটনার খবর পেয়ে অন্য সাংবাদিকরাও সেখানে ছুটে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অবস্থা বুঝে প্রতারক আক্তার সেখান থেকে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় নগরীর শাহমুখদুম থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ব্যাংকের এমন কারসাজিতে অসন্তোস ও হতাশা প্রকাশ করেছেন তাদের গ্রাহকরা। কারন, ঋণ আদায় আদালত আইন, ২০০৩ এর ধারা ৩৩-৩৫ অনুযায়ী: # ব্যাংক একবার নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে আদালতের অনুমতি ছাড়া তা বাতিল করতে পারবে না। # বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর কোনো প্রকার গোপন সমঝোতা বা প্রভাব খাটানো আইনত দণ্ডনীয়। # নিলাম প্রক্রিয়ায় অসদাচরণ হলে আদালত সেটি বাতিল করতে পারে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।
এব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা বলছে: নিলাম প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা বাধ্যতামূলক। ক্রেতাদের সমান সুযোগ দিতে হবে; অন্যথায় এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ