
রাজশাহীতে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার পিলার ঘিরে করা হয়েছে সিএনজি স্ট্যান্ড
রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহী শহরের অন্যতম প্রবেশদ্বার রেলগেট। মাত্র ৩ শত গজ অদুরে রয়েছে রেলওয়ে স্টেশন ও বাস টার্মিনাল। যেখান থেকে শত শত ভারি যাত্রিবাহী বাস ও মিনি বাস বের হয়ে রেলগেটে জড়ো হয়। এতে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহনের চাপ পড়ে পুরো রেলগেট এলাকায়। যার কারনে এই এলাকার সড়কের পরিস্থিতি দিন দিন নাজুক হয়ে উঠছে। আবার চলমান ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের কারণে রাস্তার একপাশ বন্ধ থাকায় যানবাহন চলাচলে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
রাজশাহী থেকে নওগাঁর মহাসড়কের (রেলগেট) মাঝ বরাবর বসানো হয়েছে ফ্লাইওভারের পিলার। এসব পিলারের চারপাশ এখন সিএনজি পার্কিংয়ের অন্যতম জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জমুখী রাস্তায় তিন ভাগের দুই ভাগ জায়গা দখল করে রেখেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এতে যান চলাচল আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
যানজটের আরেকটি বড় কারণ ফুটপাত দখল। রেলগেট এলাকায় ফুটপাতের ওপর গড়ে উঠেছে একাধিক বাস কাউন্টার ও বাহারি আইটেমের দোকান। তবে ফুটপাত দখলের ঘটনা শুধু রেলগেট নয় এটি পুরো শহরের চিত্র। এতে পথচারীরা ফুটপাত ব্যবহার করতে না পেরে মূল সড়কেই হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ফলে যানজটের পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়েছে বহুগুন।
এদিকে অপরিকল্পিতভাবে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, রিকশা ও ভ্যানকে লাইসেন্স বা নিবন্ধন দিয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। যার সংখ্যা (রাসিকের তথ্য মতে) অটোরিকশা রয়েছে ৮৯৭০ টি, রিকশা রয়েছে ৫৮১৯ টি, ভ্যান রয়েছে ২১০ টি। এখানেও রয়েছে ব্যাপক জটিলতা। একটি সূত্র বলছে, একই নিবন্ধনে তিনটিরও অধিক অটোরিকশা ও রিকশা চলছে এই শহরে। সিটি কর্পোরেশন বলছে, তারা নিবন্ধন দিয়েছে প্রায় ৯ হাজার, অথচ গাড়ির নিবন্ধন প্লেটে দেখা গেছে ২০ হাজারের অধিক সিরিয়াল নাম্বার রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে কে সঠিক, সিটি কর্পোরেশন, নাকি গাড়ির লাইসেন্স নাস্বার? এর উপর সিএনজি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং মালিক সমিতির দৌরাত্ম্যে যানজট পরিস্থিতিকে যেন আরও বিপাকে ফেলেছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, দলীয় নেত্রীবৃন্দ ও সিএনজি মালিক সমিতির প্রভাবের কারণে ট্রাফিক পুলিশ কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। নিয়মিত অভিযান না চালিয়ে তারা উদাসীনতা দেখাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার কারণে এসব বিশৃঙ্খলা নিরসনে তারা উদ্যোগ নিচ্ছেন না।
ভুক্তভোগী এক যাত্রী বলেন, রেলগেট পার হতে এখন আধা ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। ফ্লাইওভার পিলারের পাশে সিএনজি সারি, অটোরিকশার দৌরাত্ম্য আর ফুটপাত দখল করে কাউন্টার, সব মিলিয়ে রেলগেট এখন কঠিন বিভীষিকাময়।
এমন অভিযোগের ব্যাপারে রাজশাহী জেলা মিশুক, বেবী টেক্সি, ট্যাক্সিকার ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির সাথে যোগাযোগ করলে কথা হয় সাধারণ সম্পাদক শ্যামল শেখের সাথে। এসময় প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমানে গাড়িগুলো রাখার জায়গা নেই, তাই যে যেখানে পারে গাড়ি রেখে দেয়। আমরা খুব দ্রুত সিএনজি গাড়িগুলো সরিয়ে নিব। এর জন্য আলাদা টার্মিনাল বা পার্কিং জোন বানানোর চেষ্টা করছি। আশাপাশে সরকারের বড় কোন জায়গা লীজ পেলে খুব ভাল হতো। তারপরও আমার জোর চেষ্টা চালাচ্ছি, এক মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলা হবে। তবে আপনাদের মানতে হবে এই গাড়ি আছে বলে মানুষ ২৪ ঘন্টা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে। তাই সরকারের আমাদের প্রতি নজর দেওয়া উচিত।
এদিকে রাসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় যানজট সমস্যা নিয়ে কথা হয় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহোঃ নূর-ই- সাঈদ এর সাথে। তিনি জানান, যানজট নিরসন আমাদের কাজ নয়, এটি ট্রাফিক পুলিশের কাজ। আপনারা পুলিশকে বলেন। আমরা অটোরিকশা ও রিকশা লাইসেন্স তালিকা তাদের কাছে দিয়েছি। এর বাইরে যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে বহু দোকান পাট বসানো হয়েছে, এগুলোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, আমারা মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করি। উচ্ছেদ করলেও কয়েকদিন পর আবারও একই অবস্থা হয়ে যায়। আর যারা সেখানে দোকান করে বেশির ভাগ খুব নিম্নবিত্ত মানুষ। তাই তাদের সাথে খুব বেশি আইন প্রয়োগ করা সম্ভব হয়না। তবে নির্বাচিত সরকার ও রাসিক মেয়র আসলে এগুলো ঠিক যাবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এরপর যানজট সমস্যা ও আইন প্রয়োগ নিয়ে কথা রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ মহিবুল ইসলামের সাথে কথা হয়। তিনি দাবি করেন, প্রায় ত্রিশলাখ মানুষের বসবাস এই শহরে। সেখানে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য লোকবল রয়েছে মাত্র ২শত। যা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরও পুলিশ রাত দিন কাজ করে চলেছে। এর উপর বাড়তি ঝামেলা চাপানো হয় পুলিশের উপর। ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে নানা কাজ করছে মানুষ। সেগুলোর পেছনে এই পুলিশকে ব্যবহার করছে। অথচ এগুলো পুলিশের কাজ নয়। তারপরও পুলিশ নিষ্ঠার সাথে কাজ করছে। ইতিমধ্যে চালক ও যানবাহনের মালিকদের নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মশালা করছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। সাহেব বাজারে রোড ডিভাইডার স্থাপন, হকারদের জন্য নির্ধারিত স্থান নির্ধারণ, লাল ও সবুজ রং এর মাধ্যমে অটোরিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিক আইন ও অন্যান্য সচেতনতামূলক বিষয়ে লিফলেট বিতরণ, ট্রাফিক আইন ও সড়ক ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করতে স্কুল ভিজিটিং কর্মসূচি, হেলমেটবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে “নো হেলমেট, নো ফুয়েল” কার্যক্রম, বেপরোয়া বাইকারদের বিরুদ্ধে ও শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনা এবং চেকপোষ্ট পরিচালনা এবং বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেট এর সাথে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
সড়কে শৃংখলা ফেরাতে আরএমপির ট্রাফিক বিভাগ ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে গত জুলাই ৮৭৩টি যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে- মোটরসাইকেল ২৬৩টি, অটোরিকশা: ৪৯৭টি, ট্রাক: ৭৪টি, প্রাইভেট কার: ২৬টি, পিকআপ/জীপ: ১০টি, সিএনজি: ২টি, বাস: ১টি রয়েছে। নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ
ট্রাফিক আইন মেনে চলুন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন এবং ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতা করুন। আপনার সচেতনতাই একটি নিরাপদ, শৃঙ্খল ও আধুনিক নগর গ