বাগমারায় সুদের টাকা দিতে না পারায় ৪টি বাড়ি ভাঙচুর করেছে সুদ সন্ত্রাসীরা: মানবেতর দিন কাটছে ভুক্তভোগীদের
রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহীর বাগমারায় সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়াকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ৪টি বাড়িঘর ভাংচুর করেছে সুদ কারবারিরা। ঘটনাটি গত ২৭ অক্টোবর রাতে উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামে ঘটেছে। এই ঘটনায় বাগমারা থানায় মামলা হলেও থামানো যাচ্ছে সুদ সন্ত্রাসীদের। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও উক্ত মামলায় তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও ২ নভেম্বর, ৬ নভেম্বর ও ১৪ নভেম্বর রাতে চারটি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। সর্বস্ব হারিয়ে এখন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো শরনার্থীর মত জীবনজাপন করছে। সুদকারবারিদের এমন কর্মকান্ড থেকে দেখে মনে হচ্ছে এ যেন মগের মুল্লুক।
মামলা সুত্রে জানা যায়, প্রায় ৩ বছর আগে ভ্রমন সমিতি থেকে ১০০০০/(দশ হাজার) টাকা সুদের উপর কর্জ (ধার) নেয় বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামের মৃত ছদের আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম। প্রথম থেকে সেই টাকার সুদ পরিশোধ করলেও সময় মত আসল টাকা পরিশোধ করতে পারেনি শরিফুল। সেই রেস ধরে গত ২৭ অক্টোবর সুদকারবারি টিপু সুলতান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা শরিফুলের ভাই ছেনামুল’কে ঘিরে ধরে এবং ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টিপু সুলতান বারইপাড়া গ্রামের তাকবর আলীর ছেলে।
এসময় ছেনামুল টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে সুদকারবারি জয়নাল, ভুট্টো, সামছুল, মাসুদ রানা, রমজান আলী গংরা। এঘটনার রেস ধরে ২৭ তারিখ রাতেই দলবল নিয়ে ছেনামুল ও তার ভাইদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাংচুর করে এবং টাকা পয়সা, স্বর্ণালংকারসহ সম্পদ লুট করে সুদ সন্ত্রাসীরা। ঘটনায় পরের দিন অর্থাৎ ২৮ অক্টোবর ছেনামুল বাদি হয়ে বাগমারা থানায় একটি ১৪৩/ ৪৪৮/ ৩৮০/৪২৭/ ৫০৬ (২) পেনাল কোডে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নাম্বার ২৮/২৫ বাগমারা।
এরপর আসামিরা জামিনে বের হয়ে এসে আবারও দফায় দফায় হামলা চালিয়ে বাড়িঘর গুড়িয়ে দিয়েছে সেই সুদ সন্ত্রাসীরা। কিন্তু পুলিশ এসব ঘটনা জেনেও ভুক্তভোগীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে কথা উঠেছে এলাকাবাসির মুখে মুখে। এলাকাবাসি বলছে, স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ সুদের কারবার করছে। তারা সাধারণ মানুষকে উচ্চ সুদের দেনায় জড়িয়ে জিম্মি করে রেখেছে।
এঘটনায় ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, আমরা মামলা করেছি। তবুও তারা থামছেনা। কয়েক দফায় আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়েছে। এমনকি রাতে বাড়ি ঘেরাও করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে তারা। আমাদের ঘর-বাড়ি ভেঙে দিয়েছে, জান-মালের রক্ষা করতে পারিনি। পুলিশ শুধু ঘটনা শোনছে, কিন্তু রক্ষা করতে পারেনি। পুলিশও ভয় পাচ্ছে, কারন তারা (হামলাকারি) ডিএম জিয়ার লোকজন। আমরা গ্রামের অশিক্ষিত মানুষ, তাই মামলা তেমন বুঝিনা। এতবড় নাশকতামূলক হামলা হওয়া সত্ত্বেও মামলায় ‘চুরি’ ধারা ব্যবহার করে ঘটনাকে হালকা করা হয়েছে বলে সবাই বলছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হামলাকারিরা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি মনোনয়নপ্রাপ্ত ডিএম জিয়াউর রহমানের অনুসারী। তারা দাবি করে, ডিএম জিয়ার ছায়া থাকায় হামলাকারিরা বেপরোয়াভাবে তাণ্ডব চালাচ্ছে। এমনকি টিপু সুলতান জিয়ার পালিত ছেলে বলে সরব রয়েছে।পরে সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে ভুক্তভোগীরা দাবি জানান ১. মামলাটি চাঁদাবাজি / লুটপাট / সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে পুনরায় রেকর্ড করতে হবে। ২.দফায় দফায় হামলার ন্যায়সঙ্গত তদন্ত করতে হবে। ৩. চারটি ভাঙচুর হওয়া বাড়ির ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। ৪. হামলাকারিদের গ্রেফতার করা অতি জরুরি হয়েছে তারা মনে করেন।
স্থানীয় সাংবাদিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ডিএম জিয়াকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হলে তিনি জানান,
আমি বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। তবে জিয়ার এমন কথায় প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, সমাধানের চেষ্টা চললেও ভাঙচুর হওয়া চারটি বাড়ির ক্ষতিপূরণ কে দেবে?
আর সমাধানের অপেক্ষায় ভুক্তভোগীরা কতদিন আতঙ্কে থাকবে? পরে রাজশাহীর সাংবাদিকরা ডিএম জিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,আমি ঘটনাটি জানি। তারা উভয় আমার লোকজন। পুলিশকে সমাধানের জন্য বলেছি। আশাকরি দ্রুত এটার সমাধান হবে।
এদিকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্য বিরূপ মন্তব্যের সৃষ্টি হয়ছে। তারা প্রশ্ন তুলছে,
গত ৫ আগস্টের পর কেন পুলিশের তৎপরতা কমে গেল? ফোন দিলে পুলিশ আসছে ঘটনা শেষে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি এলাকাবাসীর দাবি, হামলাকরিদের গ্রেপ্তার এবং মামলা পুনরায় যথাযথ আইনি ধারায় রেকর্ড না করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।
জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা ও পুলিশের কার্যক্রম নিয়ে কথা বলা হয় রাজশাহী জেলা পুলিশের সহকারি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) হেলেনা আক্তারের সাথে। তিনি জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। আমি এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিচ্ছি। পুলিশ জনগণের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব সময় বদ্ধপরিকর।