নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের খামারের জায়গায় প্রকল্পের নামে গাছ হরিলুট
এ জেড সুজন, প্রতিনিধি লালপুর (নাটোর): উত্তরবঙ্গের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান নাটোরের নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের খামারের জমিতে বিএডিসির পানশি সেচ প্রকল্পের আওতায় “ভ্যালী ইরিগেশন” নামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে। ঐ গাছ স্থানের ৮০০ শত গাছের মধ্যে ৫ শতর বেশি গাছ কেটে একে অপরের দোষারোপ করে হরিলুট করার চেষ্টা করছে সুগার মিলের ও বিএডিসির কর্তৃপক্ষরা। স্থানীয় বাসিন্দা, পরিবেশবাদী সংগঠন এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিল কর্তৃপক্ষের অনুমতি আছে কি না অথবা প্রকল্পটি সরকারি নাকি ঠিকাদারি উদ্যোগের এসব বিষয়ে কোনো স্পষ্ট তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই খামার এলাকার মূল্যবান মেহগনি, শিশু, খয়ের, খেজুরগাছসহ বহু বছরের পুরোনো গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। নিয়ম রয়েছে বনবিভাগ থেকে মূল্য নির্ধারণ করিয়ে , কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে নিলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গাছ বিক্রি করতে হবে। কিন্তু মাত্র ১৩২টি গাছের মূল্য নির্ধারণ করে হাজারো গাছ কাটা হচ্ছে।
এ বিষয়ে এলাকার একাধিক কৃষক জানান, ইরিগেশন প্রকল্পের নামে যে পরিমাণ গাছ কাটা হচ্ছে, তা প্রকল্পের প্রয়োজনের তুলনায় অসঙ্গত ও অযৌক্তিক বলে মনে হচ্ছে। “খামারের পরিবেশ পুরোপুরি বদলে যাবে।
এই গাছগুলো শুধু ছায়াই দিত না জীববৈচিত্র, মাটি রক্ষা, এমনকি খামারের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বড় ভূমিকা রেখেছে,” বলেন এক স্থানীয় কৃষক।
পরিবেশ অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের ব্যাপক বৃক্ষ নিধনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অনুমোদন থাকা বাধ্যতামূলক। অনুমোদনবিহীনভাবে গাছ কাটলে তা পরিবেশ আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী গ্রীন ভয়েজে লালপুর উপজেলা শাখার সভাপতি সজিবুল হৃদয় বলেন, “সেচের জন্য জমি উন্নয়ন করা লাগতেই পারে, কিন্তু এজন্য বিপুল সংখ্যক গাছ কাটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রকল্প থাকলে তা টেকসই ও পরিবেশসম্মত হওয়া প্রয়োজন।” এদিকে এলাকাবাসী দ্রুত গাছ কাটার এ কার্যক্রম বন্ধ এবং ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন।
অপরএকজন পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, কোন বিশেষ প্রয়োজনে একান্তই যদি গাছগুলো কাটার প্রয়োজন হয় তাহলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় মূল্যনির্ধারণ, দরপত্র আহ্বানসহ সকল প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি করে তবেই সেটা করা উচিৎ। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে ইক্ষুর আড়ালে হাজারো গাছ কেটে সাবার করে দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এখানে আগে ভুতুরে আগুনে প্রতিবছর ইক্ষু পোড়ানো হতো। যার কোন ফলপ্রসু তদন্ত আজও করা হয়নি। এবার শেষ পেরেক ঠুকছে গাছ কাটার মাধ্যমে। তিনি আরও বলেন শুনেছি সব গাছ কাটবে। ইতিমধ্যে মেহগনি, শিশু, রেন্টি কড়াই, খেজুর মিলে ৫ শতাধিকের বেশি গাছ কাটা শেষ হয়ে গেছে।
ভবানিপুর খামার ব্যবস্থাপক মাহাবুবুর রহমানের সাথে তার মোবাইলে কল, এসএমএস দিয়ে উত্তোর মেলেনি। তার অফিসে গিয়েও তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে। ঠিক একই অবস্থা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফরিদ উদ্দিনের। তার সাথেও কল ও এসএমএসের মাধ্যমে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সুগার মিলের জিএম প্রশাসন আনিসুর রহমান জানান, ভ্যালি ইরিগেশন নামে এক অস্ট্রিয়ার সেচ প্রকল্প যা বাংলাদেশে এই প্রথম হওয়ায় আমাদের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে জায়গায় আমরা তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছি কিন্তু এই গাছ কর্তন বা অনুমতি পত্র সব বিএডিসি করছে।
বিএডিসি বড়াইগ্রামের সহকারী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান বলেন, মিল কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
বিএডিসি নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেনের বলেন, গাছ কাটার বিষয়ে বন বিভাগের অনুমোদন, টেন্ডার প্রক্রিয়াকরণ ও বিক্রয় এ জাতীয় বিষয়ের সাথে বিএডিসি র কোন সম্পর্ক নাই। বিএডিসি শুধুমাত্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
বিএডিসির পানাসি সেচ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মাহমুদুল হাসান কে একাধিকবার ফোন সাথে তার মোবাইলে কল, এসএমএস দিয়ে উত্তোর মেলেনি।
বিএডিসির কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ বলেন, সুগার মিলের খামারের কর্মকর্তাদের মৌখিক কথায় তাদের অনুমতি।
নর্থবেঙ্গল সুগার মিলসের মহাব্যবস্থাপক (খামার) বাকী বিল্লাহ বলেন, ভালো একটা প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে বনবিভাগ, বিএডিসিসহ সকল প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের মাধ্যমেই গাছ কাটা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ভ্যালি ইরিগেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এলাকাবাসী, মিল ও দেশ উপকৃত হবে।
বনবিভাগ নাটোরের রেঞ্জার জাহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান বড়াইগ্রামের কর্মকর্তা নাশারাত হোসেন সরেজমি তদন্তসহ বিষয়টি অবগত। নাশারাত হোসেন বলেন, তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৩২টি গাছের মূল্য মোট ২ লাখ ৬০ হাজার ৪০৪ টাকা নির্ধারন করা হয়কিন্তু অজ্ঞাত কারনে ইক্ষুর আড়ালে হাজারো গাছ কেটে সাবার করে দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এখানে আগে ভুতুরে আগুনে প্রতিবছর ইক্ষু পোড়ানো হতো। যার কোন ফলপ্রসু তদন্ত আজও করা হয়নি। এবার শেষ পেরেক ঠুকছে গাছ কাটার মাধ্যমে। তিনি আরও বলেন শুনেছি সব গাছ কাটবে। ইতিমধ্যে মেহগনি, শিশু, রেন্টি কড়াই, খেজুর মিলে ৮ শতাধিক গাছ কাটা শেষ হয়ে গেছে।
বনবিভাগ নাটোরের রেঞ্জার জাহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান বড়াইগ্রামের কর্মকর্তা নাশারাত হোসেন সরেজমি তদন্তসহ বিষয়টি অবগত। নাশারাত হোসেন বলেন, তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৩২টি গাছের মূল্য মোট ২ লাখ ৬০ হাজার ৪০৪ টাকা নির্ধারন করা হয়। তিনি আরও বলেন, আমরা শুধু মূল্য নির্ধারনই করি।
ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক 













