নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ যখন চারদিকে অসৎ লোকের ছড়াছড়ি, সমাজে ধর্ষণ, খুন, হানাহানি, মারামারি বেড়েই চলছে। সৎ মানুষের সংখ্যা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। সেখানে দীর্ঘ ১১ বছর নাম ঠিকানা বিহীন মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েকে লালন পালন করে তার পরিবারের নিকট তুলে দিয়ে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন উপজেলার ধুবড়িয়া গ্রামের কৃতি সন্তান আসাদুজ্জামান রনি। সমাজে এমন মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপনের নজীর বিহীন ঘটনা ঘটেছে টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার ধুবড়িয়া গ্রামে।
উপজেলার কৃতি সন্তান আসাদুজ্জামান রনি দীর্ঘ প্রায় ১ যুগ মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে আশ্রয়, খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসা দিয়ে দেখাশোনা ও সেবাযত্ন করে পরিবারের সন্ধান করে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েটিকে ২০১০ সালের দিকে ধুবড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এলোমেলো ঘুরতে দেখা যায়। এর মধ্যে ডিজিটাল বলরামপুর বাজার, পুরাতন বাজার, ধুবড়িয়া তেরাস্তা বাজারে উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে ঘুরতে দেখা যায়। মেয়েটিকে স্থানীয় লোকজন নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করলে সে কিছুই বলতে পারত না। মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েটি যখন কোথাও আশ্রয় পাচ্ছিল না তখন মেয়েটি ধুবড়িয়া তেরাস্তা বাজারে এসে আশ্রয় নেয়।
সেই সময় মেয়েটির লালন পালনের দ্বায়িত্ব ভার স্বেচ্ছায় নিজের কাধে তুলে নেন রনি “স” মিলের মালিক। ধুবড়িয়া তেরাস্তা বাজার কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান রনি। তিনি নাম পরিচয়হীন মেয়ের নাম দেন লাইলী। সেই সাথে মেয়েটিকে পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন। অবশেষে দীর্ঘ ১১বছর পর মেয়েটির পরিবারের সন্ধান পান তিনি। জানা যায় লাইলীর আসল নাম দূর্গা রানী। স্বামীর নাম রমেশ, বাড়ি দিনাজপুরের সস্তীতলা শহীদুল কলোনী। দূর্গার বাবার বাড়ি বগুরা জেলার সান্তাহারের সুইপার কলোনী। এব্যাপারে রনি অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, মেয়েটিকে তার পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।
মেয়েটি যেন বাকি জীবনটা তার পরিবারের সাথে সুখে দিন কাটাতে পারে। সৃষ্টিকর্তার নিকট সেই প্রার্থনা করি। তিনি আরোও বলেন, দূর্গার সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে সকল প্রকার সাহায্য সহায়তা আমি করবো। এ বিষয়ে বগুড়া শান্তাহারে রতন হরিজনের ছেলে নাদিম হরিজন, আরমান হরিজন, শাকিল হরিজন, প্রদীপ হরিজন, রিপন হরিজন বলেন, ১১ বছর রনি ভাই আমাদের বোনকে স্বযত্নে লালনপালন করে আজ আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছে, এটা মানবতার এক অনন্য উদাহরণ। আমাদের বোনকে ফিরে পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। রনি ভাইকে ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা আমাদের জানা নেই।
এ বিষয়ে নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মো. আওলাদ হোসেন লিটন বলেন, আমরা যে কাজটি করতে পারিনি রনি তা করে দেখিয়েছে। মানবতা আজোও বেঁচে আছে এটা তারই সাক্ষ্য বহন করে। দিনাজপুরে বসবাসকারী আমার ভাই দীলিপ এর সাথে দূর্গা (লাইলী) এর বিষয়ে আলাপ করলে, দিলিপ তার ফেইসবুকে ছবি সহ শেয়ার করলে তার ফেইসবুকের শতশত বন্ধুরা বিষয়টি শেয়ার করার একপর্যায়ে, হরিজন সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে যোগাযোগ হওয়ায়, পরিচয় নিশ্চিত হয়ে আজ দূর্গা (লাইলী) কে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হলো।
ধুবড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শাকিল হোসেন ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মতিয়ার রহমান বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করেছেন। তাই আজ দূর্গা তার পরিবারকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকের সহয়তা খুঁজে পেয়েছে। নাগরপুর থানার এসআই মো. আমিনুল বলেন, মানবতার কাছে পৃথিবীর সকল আইন তুচ্ছ। রনি ভাইয়ের মানবতায় মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েটি আজ তার পরিবার ফিরে পেয়েছে। এটা মানবতার এক অনন্য উদাহরণ। আজ ১৪ জানুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের ধুবড়িয়া তেরাস্তার মো. জাকিরুল ইসলামের অফিসে উইলিয়ামের পরিবারের সকলকে পেয়ে দূর্গা আনন্দে আপ্লূত হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে।