রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল কাদের জিলানী আরমান। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকায় বই-খাতার ব্যাগ ছেড়ে সংসারের হাল ধরতে কাঁধে তুলে নিয়েছে বাদাম ও তিল খাঁজার ঝুড়ি। মাথায় উসকো-খুসকো চুল, ছিপছিপে পাতলা গড়ন। পরনে ময়লা কাপড়, পায়ে ছেঁড়া চটি স্যান্ডেল। বাবার যা আয় তাতে সংসার চলে না। নিজের উজ্জল ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্নকে পেছনে ফেলে সংসার ও বোনের বিয়ের খরচ যোগাতে নীলফামারীর সৈয়দপুরের পাড়া-মহল্লা ও বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে আট বছরের এ ছোট্ট ছেলেটি।
উদ্দেশ্য বাদাম ও খাঁজা বিক্রির আয় দিয়ে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকা। আরমানের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। সে বসবাস করে শহরের সাহেবপাড়ার একটি ঝুপড়িতে। তার বাবা মিন্টু রিক্সা চালক। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতায় তিনি আর রিক্সা চালাতে পারেন না। তার মা রেহানা খাতুন সংসার চালাতে বেছে নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ। অর্থাভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে একমাত্র বড় বোনের পড়ালেখাও। বিয়ে দিতে খোজা হচ্ছে তার জন্য পাত্র।
কিন্তু চাইলেই তো আর বিয়ে দেয়াও যায়না। বিয়ের জন্য প্রয়োজন অর্থের। তাই মা-বাবা আর বড় বোনকে নিয়ে চিন্তা থেকেই ছোট্ট হাতে রোজগারে নেমেছে আরমান। শিশু বয়সেই এখন তার কাঁধে দায়িত্বের বোঝা। এ বয়সেই সে জেনে গেছে জীবন খুবই কঠিন। এখানে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হবে। আয় রোজগার যে খুব একটা বেশি তাও নয়। তারপরও দিন শেষে যা আয় হয় তা হাসিমুখে তুলে দেয় মায়ের হাতে। তার মা ওই টাকার একটি অংশ সংসারের খরচ করেন, বাকিটা মেয়ের বিয়ের জন্য সঞ্চয় করছেন।
আরমান এ প্রতিবেদককে আরও জানায়, পড়া লেখা করার বেশ ইচ্ছে তার। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বন্ধুরা যখন বই খাত নিয়ে স্কুলে ছুটবে তারও হয়ত স্কুলে যেতে মন চাইবে। কিন্তু তাতো আর হবে না। অসুস্থ্য বাবা আর আয় রোজগার করতে পারবে কিনা তার নেই কোন নিশ্চয়তা। আরমানের ভাষ্য, যেখানে আমাদের ঠিকমতো খাবারই জোটে না সেখানে পড়া-লেখার খরচ পাবো কই। আমার বড় বোনটারও খুব ইচ্ছে লেখাপড়া করার। তার স্বপ্ন সে একদিন বড় অফিসার হবে কথাটি বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষন। তার দু’চোখ বেয়ে দু’ফোটা অশ্রু পড়েছে কিনা তা খেয়াল করার আগেই সে ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণে হাঁক দেয়- ওই
বাদাম আছে, বাদাম বাদাম…।