ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ , আজকের সময় : শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

রাজশাহী হাসপাতালে ডেপুটি নার্স সুপারের নিয়মবহির্ভূত ভাবে চলছে নার্সিং সেবা

মাজহারুল ইসলাম চপল, রাজশাহীঃ উত্তর অঞ্চলের আশা ভরসার একমাত্র চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই হাসপাতালে উত্তর অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি জেলা – উপজেলার থেকে অসহায় হতদরিদ্র মানুষ আসে চিকিৎসা নিতে। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও বেপরোয়া ভাবে চলছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম ।

এর আগে সাংবাদিকরা এই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিয়ে একাধিকবার প্রতিবেদন করলে কতিপয় কিছু স্বার্থান্বেষী ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার আতে-ঘা লাগে প্রতিবেদনে। এরপর থেকে রামেক হাসপাতালে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিষেধ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । সাংবাদিকরা হারিয়ে ফেলে হাসপাতাল নিয়ে প্রতিবেদন করার ক্ষমতা। উর্ধ্বতন মহলে বার বার বলার পরও কোন কাজ হয়নি, বরও উল্টো দুর্নীতির খড়ম পরে নিয়মের বেড়াজাল ভেদ করে অনিয়মের রাজ্যে পরিনত করেছে এই হাসপাতাল টিকে।

এরপর থেকে যে যার মত পারছে সে তার মত করে বগলদাবা করে নিচ্ছে সকল কিছু। এরই ধারাবাহিকতায় মাত্র কয়েকদিন আগে ঘটে যায় অপ্রীতি ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এই রেস ধরে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে থলের বিড়াল। ভাবিয়ে তুলেছে সুশীল সমাজকে। গত ১৮ জানুয়ারি সকাল ৮ টায় নার্সিং ডে শুরু করেন কারিমা ( ছদ্মনাম)। এরপর আইসিইউ এর দায়িত্ব ও কর্তব্যরত এনেস্থিসিয়া বিভাগের ডাঃ মামুন দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হন কারিমা। কারিমা তার ইনচার্জ শরিফা ও সুফিয়া ম্যাডামকে জানান এবং এর সুষ্ঠ সমাধান চান।

অভিযোগ শুনার পরে তাকে শান্তনা দিয়ে বলে কাজ করতে গেলে একটু আধটু হয়েই থাকে, এগুলো কিছু মনে করা যাবেনা। পরের দিন কারিমা ঐ ওয়ার্ডে ডিউটি করতে না চাই জোর করে আবার তাকে ঐ একি ওয়ার্ডে ডিউটিতে পাঠান নার্সিং ইনচার্জ। আবার কারিমাকে যৌন হয়রানি করে বসে ডাঃ মামুন। কারিমা বিচলিত ও বাধা দিলে ডাঃ মামুন বলে কারিমা তুমি এমন করছো কেন? এক সাথে কাজ করতে গেলে এগুলো মেনে নিতে হবে। এরপর সেখান থেকে কারিমা তার সহকর্মীদের সহযোগিতায় পরিচালক বরাবর অভিযোগ করে এবং বিচার দাবি করে।

বিচার চলমান…..( আগামী পর্বে চোখ রাখুন )কিন্তু মজার বিষয় এই নার্সিং ইনচার্জ সুফিয়া বেগমের ব্যবহার দেখে মনে হচ্ছে তিনি দীর্ঘদিন থেকে ডাক্তারদের থেকে মোটা উৎকোচ নিয়ে ডাক্তারদের যৌন সুবিধা দিয়ে আসছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ২০০৫ সালে রামেকের ভায়া সেন্টারে সাধারণ নার্স হিসেবে যোগদান করেন। তিনি শুরু থেকেই একটু একটু করে নানা অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। ধিরে ধিরে গড়ে তোলেন কোটি টাকার সম্পদ। সুফিয়ার গ্রামের বাড়ি চাপাই নবাবগঞ্জ গোমস্তাপুর থানার চৌডালা ইউনিউনের বেনিচক এলাকায়।

অতি সাধারণ পরিবারের মেয়ে। তার ডাক নাম হিলু। পারিবারিকভাবে শিক্ষিত হলেও আর্থিকভাবে সাদামাটা ছিল তার পরিবার। সেখান থেকে রাজশাহী নগরীর বহরমপুর ব্যাংক কলোনীতে করেছেন বিলাসবহুল বাড়ি। যার ছবি সংরক্ষিত রয়েছে। রামেক হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি নিজের সেচ্ছাচারিতায় নার্সিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন দীর্ঘদিন থেকে। এমনকি নার্সিং ষ্টাফদের সাথেও অশালীন আচরন করেন তিনি। এছাড়াও নিজের ফাইদা হাসিলের জন্য নিজের মন মত নিয়মও চালু করে বসেন অনায়াসে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সদ্য ঘটে যাওয়া কোভট-১৯ এ সেবা দানকারী সকল নার্সদের জন্য ব্যবহারি জিনিসপত্র আলাদা আলাদা বরাদ্দ আসলেও একজনের জিনিস পাঁচজনকে ভাগ করে দেন ডেপুটি নার্স সুপার সুফিয়া। বরাদ্দকৃত বাঁকি জিনিসগুলো লোপাট হয়ে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ইনচার্জ সুফিয়ার অনিয়ম ও অশালীন আচরনে অতিষ্ঠ হয়ে একাধিক নার্স লিখিত অভিযোগ করে বাংলাদেশ নার্সিং এসোসিয়েশনে। এই লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বিএনএ প্রধান দপ্তর থেকে রামেক হাসপাতালের ৪ জনকে শোকজ ও কইফিওত জারি করে কর্তৃপক্ষ।

কারন দর্শানোর নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারির শুরুতে বিএনএ প্রধান কার্যালয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। সরেজমিন তথ্য ও লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডেপুটি নার্স সুপার সুফিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আপনারা যেটা জেনেছেন ও শুনেছেন তা সম্পন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। বিএনএ কর্তৃপক্ষের নোটিশের কারন জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। এবং বলেন আমি যা করি তা নার্স সুপারের নির্দেশে করি। আপনাদের যা জানার নার্স সুপার আনোয়ারা ম্যাডামের থেকে জেনে নিবেন বলে ফোন কেটে দেন।পরে নার্স সুপার আনোয়ারা ম্যাডামের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এবিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলাম এর সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি বলেন, একটি নার্স যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছে। এবিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তবে নার্স সুপার ও ডেপুটি নার্স সুপারের বিষয়ে আমার জানা নাই। আর এরকম অভিযোগ পেলে অবশ্যই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবে।