ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : মঙ্গলবার, ৯ মার্চ, ২০২১ , আজকের সময় : সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

রাজশাহী পদ্মাপাড়ে দর্শনার্থীদের হয়রানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ

রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহী পদ্মার পাড়ে ঘুরতে আসা মানুষদের মোটরসাইকেল রাখার নামে দীর্ঘদিন যাবত হয়রানি ও চাঁদাবাজি করে আসছে শান্ত ও তার দলবল। সর্বশেষ সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে জাতীয় পত্রিকার দুই সাংবাদিক কথিত গ্যারেজ মালিক তথা চাঁদাবাজ শান্তর খপ্পরে পড়েন। টিকিট নিতে আপত্তি জানানোই তাদের আটকিয়ে রাখা হয় সেখানে। পরে ‘৯৯৯’ এ কল দিয়ে রক্ষা পান তারা।

সোমবার (০৮ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে রাজশাহীর পদ্মাপাড়ের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র বড়কুঠি কফিবারের সামনে এমন অপ্রীতিকর ঘটনার স্বীকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুই সাংবাদিক। এ নিয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন তারা, যার জিডি নাম্বার- ৪২২/২১।

ঘটনাটির স্বীকার দুই সাংবাদিক হলেন-দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার ব্যুরো প্রধান শাহিনুর রহমান সোনা ও দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিনের ব্যুরো প্রধান মো. আল-আমিন হোসেন । অন্যদিকে, হামলাকারী কথিত ওই গ্যারেজের মালিক হলেন শান্ত (৩২)। বড়কুঠির সামনে দলবল নিয়ে চাঁদাবাজি করেন বলে জানা গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ। ঘটনাটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাংবাদিক শাহিনুর ও তার সহকর্মী আল-আমিন পেশাগত কাজে কফিবারের যান। সেখানে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়ানোর সাথে সাথেই শান্ত ও তার এক সহকর্মী টিকিট দিতে আসে।

টিকিট না নেওয়ায় চাঁদাবাজ শান্ত ও তার আরো ২-৩ জন লোক মোটরসাইকেল তাদের গ্যারেজে রাখার জন্য জোর খাটায়। সংবাদের জন্য কিছু ছবি ও সাক্ষাৎকার নিয়ে দু’এক মিনিট পরই চলে যাবার কথা বলেন ওই দুই সাংবাদিক। তারপরও তারা টিকিট নিতে জোরখাটান। সাংবাদিক আল-আমিন তাদের এ অশোভন আচরণের প্রতিবাদ করলে তারা একপর্যায়ে গায়ে হাত তোলেন ও আরোও গালিগালাজ করেন।

তিনি জানান, শান্তর হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনে উপায় না পেয়ে জাতীয় জরুরী সেবা ‘৯৯৯’ -এ পুলিশের সহযোগিতা নেন সাংবাদিক শাহিনুর রহমান সোনা । খবর পেয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানার টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন। পুলিশ দেখে তাৎক্ষণিক সটকে পড়েন শান্ত ও তার দলবল। অত:পর সাংবাদিকদের উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে থানায় এসে তাদের নামে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ভুক্তভোগীরা ।

এ বিষয়ে ভূক্তভোগি সাংবাদিকেরা জানান, পদ্মা পাড়ের বিনোদন বিষয়ক একটি নিউজে সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে কোনো গ্যারেজ নেই। তারপরও শান্ত নামের এক ব্যবসায়ী জোরপূর্বক সেখানে গ্যারেজের নামে টাকা তোলেন যা অবৈধ। তার গ্যারেজের বাইরে কফিবারে বাইক রাখার পরও তার কাছে সামান্য সময় চাওয়া হয়। কিন্তু শান্ত অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমাদের বলেন- ‘সাংবাদিক আর পুলিশকে গ্যারেজে মোটরসাইকেল মাংনা রাখার জন্য ব্যবসা করছি না। টিকিট নিতে হবে, না হলে বাইক নিয়ে এসেছেন ঠিকই, টাকা ছাড়া যেতে দিব না’।

সে আরোও গালমন্দ করে বলেন, ‘তোর কোন বাপ আছে, যা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ কর, পারলে লেখালেখি কর। এর আগেও তোদের অনেক সাংবাদিক আমার বিষয়ে লিখেছে, আমার কিছুই করতে পারেনি’।

সাংবাদিকেরা জানান, উপায় না দেখে ‘৯৯৯’ এ কল দিয়ে পুলিশি সহায়তা নেই। পরবর্তীতে পুলিশ ও অন্যান্য সাংবাদিক ঘটনাস্থলে আসা দেখে শান্ত ও তার দলবল সেখান থেকে পালিয়ে যায়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘শান্তর সাথে প্রায় পদ্মাপাড়ে ঘুরতে আসা মানুষের সাথে গন্ডগোল হয়। তার অবৈধ গ্যারেজে রাখা কোন মোটর সাইকেলের যদি টিকিট হারিয়ে যায়, তাহলে ওই বাইকারকে পড়তে হয় বেশ বিড়ম্বনায়। অনেক সময় ঝামেলা করে মোটা অঙ্কের টাকাও হাতিয়ে নেয় সে।

এতে সহযোগিতা করে তার সাথে থাকা সাঙ্গ-পাঙ্গরা । তার এমন চাঁদাবাজির কারণে এলাকার মানুষদের পড়তে হয় অনেক লজ্জায়। শান্ত মাদকসহ বিভিন্ন মামলার আসামী বলেও জানিয়েছেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা।

ঘটনার পর সেখানে উপস্থিত অনেক ভুক্তভোগি মানুষ শান্তর অশালীন আচরণ ও চাঁদাবাজির বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। শুধু তাই নয়- মালোপাড়া ফাড়ি ইনচার্জ ইফতে খায়ের আলমসহ অনেক পুলিশই তার এমন দূর্ব্যবহারের স্বীকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র আরো বলেন, ‘এমন ঘটনা অত্যন্ত দু:খজনক। বিয়টি শোনার পরপরই সেখানে পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়েছিল। এমনকি আজও সেখানে পুলিশ গিয়েছিলো। তারা পলাতক রয়েছে এবং তাদের অবৈধ গ্যারেজও বন্ধ আছে। দ্রুতই ঘটনার তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’