তাপস কর,ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের নান্দাইল শুভখিলা রেল সেতুতে বধ্যভুমি-নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপজেলার শুভখিলা বধ্যভূমিটি অযত্ন-অবহেলা আর উদাসীনতায় পড়ে ছিল দীর্ঘ ৫০ বছর। এজন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে শহীদ হওয়া মানুষ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি বিজড়িত ইতিহাস নষ্ট হতে বসেছিল।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের এক সভায় সেই বধ্যভূমিটি চিহ্নিত করে স্মৃতি ফলক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে সভা শেষে ইউএনওর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জায়গাটি সরজমিনে দেখার জন্য শুভখিলা রেল সেতু পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নান্দাইল উপজেলার মুশুলী ইউনিয়ন এলাকায় ময়মনসিংহ-ভৈরব রেলপথে নরসুন্দা নদীর ওপর কালীগঞ্জ ব্রিজটি অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদাররা স্বাধীনতাকামী নিরীহ লোকজনকে ধরে এনে এই ব্রিজের কাছে হত্যা করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও এদের দোসর রাজাকার, আল-বদররা দূর-দূরান্ত থেকে লোকজনকে ধরে ট্রেনে করে নিয়ে আসত।
এরপর ব্রিজের পাশে তৈরি করা বাংকারে নির্যাতন শেষে হাত, পা বেঁধে ওই ব্রিজের ওপর দাঁড় করিয়ে গুলি করে লাশ নদীতে ফেলে দিত। কখনো কখনো এক রশিতে অনেককে একত্রে বেঁধে গুলি চালাত হানাদাররা। প্রতিরাতে চালাত হত্যাকান্ড। এখানে কতজনকে হত্যা করা হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন এখানে অনুমান ১০ হাজার মানুষকে এনে হত্যা করা হয়।
নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন ভুঁইয়ার বাড়ি সেতুর কাছেই। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি নবম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। আশরাফ উদ্দিন ভুঁইয়া জানান, পাকিন্তানিদের প্রবেশ রুখতে তারেরঘাট সেতু ও কালীগঞ্জ রেলসেতু ধ্বংস করেও পাকিস্তানিদের প্রবেশ রোখা যায় নি।
পাকিস্তানিরা ট্রেন থামিয়ে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। পরবর্তীতে রেল সড়কটি মেরামত করে চলাচল শুরু করে পাকিস্তানিরা। যুদ্ধকালীন সময় ট্রেন যোগে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষকে কালীগঞ্জ রেল সেতুতে নিয়ে আসা হতো। এখানে এনে নির্মম ভাবে হত্যা করে লাশ গুলো খরস্রোতা নরসুন্দায় ভাসিয়ে দেওয়া হতো।
মুক্তিকামী ও সাধারণ মানুষ ভর্তি ট্রেন গুলো থামার পর মানুষ বাঁচার জন্য আত্মচিৎকার শুরু করতো। কিন্তু নিমিষেই গুলির শব্দে মিলিয়ে যেতো সেই আত্মচিৎকারের আওয়াজ। নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ উদ্দিন বলেন, আজ মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসনের এক সভায় নিদ্ধান্তের পর জায়গাটি পরিদর্শন করেছি।