বটিয়াঘাটায় দ্বিতিয় বৃহত্তর ফসল তরমুজ চাষ হয়েছে ২ হাজার বিঘা জমিতে বিক্রির আশা ৪৪কোটি
বটিয়াঘাটা খুলনা: দক্ষিন খুলনার অন্যতম লবনাক্ত এলাকার নাম বটিয়াঘাটা উপজেলা, যেখানে কিছু দিন আগে যে, জমিতে লবণ পানি থই থই করতো, সেই জমিতে আমন ধান ছাড়া অন্য কোন ফসল হতো না। কিন্তু লবণ পানি বন্ধ হলে ঐ সকল জমিতে তিল চাষ শুরু হয় যা বটিয়াঘাটায় দ্বিতীয় বৃহত্তর ফসল হিসেবে পরিচিতি পায়।
গত দুবছর যাবৎ অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে কৃষকেরা কৃষি অফিসের পরামর্শে তিল চাষ বাদ দিয়ে তরমুজ চাষে ঝুকে পড়ে। প্রথমে জমিতে ভালো ফসল হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবছর ৩ গুণ বেশি জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। যে কারণে নতুন নতুন স্বপ্ন দেখছে হাজার হাজার কৃষকেরা, তরমুজ বটিয়াঘাটার দ্বিতীয় বৃত্তম ফসল হিসেবে পরিচিত, যে এলাকা লবণের করালগ্রাসে যখন দক্ষিণ অঞ্চল মানুষের ভাগ্য ছিলো ধোয়াশা ও পতিত থাকতো হাজার হাজার হেক্টর জমি।
দুবেলা খেয়ে জীবন চলতো বেশির ভাগ কৃষকের, ঠিক তখনই বটিয়াঘাটা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ রবিউল ইসলামের সঠিক দিক নির্দেশনায় এবং কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আবু বক্কর সিদ্দিকী ও শরিফুল ইসলামসহ ২১জন যোগ্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার বারংবার পরামর্শ,আলোচনা সভা ও বিভিন্ন এলাকায় দিনরাত ছুটে চলার কারণে আজ প্রায় ২২শ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির তরমুজ চাষ হচ্ছে।
আর এই লাভজনক চাষে উপজেলার ৭ ইউনিয়নের হাজার হাজার চাষিরা ঝুকছে। উপজেলার সব থেকে বেশি চাষ হচ্ছে গঙ্গারামপুর ইউনিয়নে,২য় পর্যায় সুরখালী ইউনিয়ন, ৩য় পর্যায় বটিয়াঘাটা ইউনিয়ন, ৪র্থ পর্যায় ভান্ডারকোট ইউনিয়নসহ সব কটি ইউনিয়নে। সুত্রে প্রকাশ,তরমুজের জীবনকাল ৯০/১২০দিন তবে ফল ধরা শুরু হয় ৬০ দিন পর থেকে। তবে এই উপজেলায় ব্যাপক হারে চাষ হচ্ছে গ্রাগন, পাকিজা, বীগ ফ্যামিলি,হানি কুইন, বাদশা ও ব্লাক মাষ্টার জাতের তরমুজ।
এরমধ্যে বেশি চাষ হচ্ছে ড্রাগন ও পাকিজা। গত বছরে এ উপজেলায় তরমুজ চাষ হয়েছিলো ৭৮০ হেক্টর জমিতে এবছর চাষ হচ্ছে তার তিনগুন অর্থ্যাৎ ২২শ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে অনুঃ খরচ হয় ১লাখ ২০ বা ৩০ হাজার টাকা এবং বিক্রি হতে পারে প্রায় ৪ লাখ টাকা সে অনুযায়ী উপজেলা ব্যাপি প্রায় ৪৪ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রির আশা করছে কৃষকরা।
বটিয়াঘাটা কৃষি অফিসারের নির্দেশ মতে কাকডাকা সকাল থেকে কৃষকদের পাশে পরামর্শ ও উৎসাহিত করে চলেছে একঝাঁক উপসহকারী কৃষি অফিসার যথাক্রমে (জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত) সরদার আব্দুল মান্নান, দীপংকর মন্ডল, আঃ হাই খান, জীবনানন্দ রায়, কৃষ্ণপদ বিশ্বাস, দীপন কুমার হালদার, মিহির কুমার বৈরাগী, আঃ গফফার গাজী, বিষাদ সিন্দু মন্ডল, পিন্টু মল্লিক, মোস্তাফিজ প্রমুখ।
বটিয়াঘাটা হাটবটি গ্রামের শোরুপ কাঠির সুন্দর আলী,বারোআড়িয়া গ্রামের কৃষক মিরাজ শেখ, সাংকেমারি গ্রামের কৃষক প্রিয়ব্রত রায়,রায়পুর গ্রামের কৃষক মান্নান শেখ, সুখদাড়া গ্রামের কৃষক নিউটন বিশ্বাস ও সন্জয় মন্ডল জানান, উপসহকারী কৃষি অফিসার সরদার আব্দুল মান্নান স্যারের পরামর্শে গতবছর তরমুজ চাষ করে বেশ লাভ হয়েছিলো যেকারণে এবছর অনেক বেশি জমিতে তরমুজ চাষ করেছি।
আশা করি অনেক বেশি লাভ আমরা পাবো। তারা আরও জানান, পোকামাকড় দমনে উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে সঠিক কিটনাশক ব্যবহার করে থাকি যে কারণে আমরা বেশি ফসল পাই। তরমুজ বিক্রি গাড়ী ভাড়া পানখালী ফেরিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারনে ন্যাজ্য মুল্যো গারাচ্ছে কৃষক,এব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি দিলে ভালোহয়, সার্বিক বিষয় বটিয়াঘাটা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, প্রথমে কৃতজ্ঞতা জানাই কৃষি বান্ধব সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মাননীয় কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক স্যার’কে।
তারা যেভাবে সুযোগ সুবিধা দিয়ে চলেছে কৃষি দপ্তরকে যে কারণে অনেক অসম্ভব কাজ কষ্ট করে আমরা সম্ভবে পরিনত করতে পারছি। আমার ২১ জন উপসহকারীদের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে কৃষকদের উৎসাহিত করেছি এবং মাঠে বসে বসে কৃষকদের সরোজমিনে পরামর্শ প্রদান করে তরমুজ চাষে অধিক লাভের কথা বুঝালেই কৃষকরা বুঝতে পেরে। যে কারণে গত বছরের তুলনায় ৩ গুন চাষ এবার বেশি হয়েছে। আশা করি যদি কোন রকম দুর্যোগ না হয় তাহলে অধিক লাভবান হবে হাজার হাজার কৃষকেরা।