নিয়ম বহির্ভূতভাবে চলছে পশ্চিমাঞ্চল রেলের জিএম দপ্তর
মাজহারুল ইসলাম চপল, ব্যুরো চীফঃ পশ্চিমাঞ্চল রেলের ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনের মাস্টাররোলের চাকরি করা এক মহিলা খালাসিকে নিজ অফিসে বসিয়ে রেখে বেতন দিচ্ছেন দপ্তরের জেনারেল ম্যানেজার ( জিএম) মিহির কান্তি গুহ। আবার অলৌকিক ক্ষমতা বলে অবসর প্রাপ্ত পিএস’কে স্বপদে বহাল রয়েছেন জিএম এর পিএস কাওসার আলীকে।
তার এমনই কার্যক্রমের অভিযোগে ক্ষুব্ধ জিএম অফিস ও ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও রেল অঙ্গনে অভিযোগ উঠেছে জিএম এর আস্থাভাজন এই পিএস কাউসার আলী জিএম’র নানা অনিয়মের স্বাক্ষী। আর ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনের মাস্টাররোলের একজন মহিলা খালাসিকে দিয়ে তার ব্যক্তিগত সকল কাজ করিয়ে নেন।
কাজ না থাকলে জিএম অফিসে বসে থেকে বেতন নিচ্ছেন মহিলা খালাসী মনিরা রানী রায়। নির্ভরযোগ্য একটি সুত্র নিশ্চিত করেন, জিএমের নানা অনিয়ম দুর্নীতি লেনদেন করে থাকেন এই দুইজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনের এক কর্মকর্তা বলেন, এই মনিরা রানী রায়ের দাপটে আমরা অতিষ্ঠ। তার বেতনটাও তাকে জিএম অফিসে গিয়ে দেওয়া লাগে। কাজ তো করেই না উল্টো জিএমের ভয় দেখায়।
কাজ করেন ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনের খালাসি পদে, অথচ বসে থাকেন জিএম দপ্তরে। সূত্র আরও জানায় , পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মিহির কান্তি গুহ’র পিএস হিসাবে বর্তমানে আছেন কাওসার আলী। তিনি পুর্ন অবসরে গেলেও ক্ষমতাবলে জিএম তাকে এখনও স্বপদে বহাল রেখেছেন।
অত্যন্ত ‘গোপনীয়’ এই শাখায় অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তাকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বহাল রাখায় রেল ভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টিকে তারা ‘রহস্যজনক’ বলেই মনে করছেন। অবসরের আগেও রাজশাহীতে জিএম এর পিএস হিসাবে ৮ বছর যাবত কর্মরত ছিলেন এই কাওসার।
সূত্রটি জানান, ইতোপূর্বে রেলওয়ের জিএম-এর পিএস হিসেবে নতুন একজনকে নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্ট দফতরের নথিতে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু পদায়ন করে পিএস হিসেবে এখনো কাউকেই নিয়োগ দেয়া হয়নি। কারণ হিসেবে সূত্রটি বলছে, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাওসার আলী রেলওয়ের বর্তমান জিএম মিহির কান্তি গুহ’র অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত।
জিএম-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত পিএস কাওসার আলীর মুঠোফোনে জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় জেনে তিনি বলেন, “আমি কাওসার না তার ছোট ভাই, কিছু জানতে চাইলে পরে ফোন দিয়েন আবার,বলেই ফোন কেটে দেন । কিন্তু পরবর্তীতে তাকে বার বার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে পশ্চিম রেলের জেনারেল ম্যানেজার মিহির কান্তি গুহ বলেন, পিএস কাউছার আলী তো কনট্যাক্ট বেসিসে কল্যাণ ট্রাস্টের এডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার । পিএস হিসেবে একজন এসিসট্যান্ট অফিসার লাগবে, কিন্তু এখানে চার-পাঁচজন এসিসট্যান্ট অফিসার নাই, জুনিয়র পার্সোনাল অফিসার একজনও নাই, ওয়েলফেয়ার অফিসার নাই… টোটালি রেলভবনে ৭ / ৮ জন নাই, থাকলে তাদের থেকে কাউকে নেয়া যেত “।
কিছু দুষ্ট লোক আছে, তারে পছন্দ করে না, সে এখানে আছে এটা সহ্য হচ্ছে না। তারে খোঁচায়ে কিছু সুবিধা আদায় করতে পারে না। সে রিটায়ার্ড, অনেষ্ট আর আন ম্যারিড। মনিরা রাণী রয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি, প্রথমে না চিনতে না পারলেও পরে বলেন এরকম একটা আছে ঐযে মন্ত্রী মহোদয়ের একটা সুপারিশে একটা বোধহয় আছে, এগুলি দপ্তরে জিগ্যাসা করুন।
উল্লেখ্য যে, আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে পশ্চিমাঞ্চল রেলের তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- সাবেক কন্ট্রোলার অব স্টোরস (সিওএস) প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন সরকার, সাবেক চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) এএমএম শাহনেওয়াজ, সাবেক সহকারী কন্ট্রোলার অব স্টোরস (এসিওএস) মো. জাহিদ কাওছার।
দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত আরও এই জিএম সহ ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। অভিযুক্ত ১০ জন হলেন-পশ্চিমাঞ্চল রেলের এসিসিএমসিআর শেখ আবদুল জব্বার, ডেপুটি সিওপিএস মোছা. হাসিনা খাতুন, ডিএমএ হেডকোয়ার্টার শ্যামলী রানী রায়, এফএএন্ডসিএও মো. শরিফুল ইসলাম, ডেপুটি সিসিএম ফুয়াদ হোসেন আনন্দ, ডিএফএ অর্থ মো. আলমগীর, এফএএন্ডসিএও মো. মসিহ-উল-হাসান, অতিরিক্ত এফএএন্ডসিএও মো. গোলাম রহমান, অতিরিক্ত এফএএন্ডসিও গোলাম রাব্বানী ও সাবেক সিসিএম ও বর্তমানে পশ্চিমাঞ্চল রেলের জিএম মিহির কান্তি গুহ। ২৯ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলের জন্য ২০টি আইটেম কেনায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি ট্রেন পরিচালনায়ও ঝুঁকি বাড়ে। কেনাকাটার ঘটনা তদন্তে ২০ সেপ্টেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাসকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি গত বছরের ৯ ডিসেম্বর রেলপথমন্ত্রীর কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়। রিপোর্টে ১৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল।