মাজহারুল ইসলাম চপল, ব্যুরো চীফঃ বাংলা সনের জৈষ্ঠ্য মাস আসলেই মনে পরে আম, লিচু ও কাঁঠালসহ মৌসুমী ফলের কথা। এসময়ে বাজারে সয়লাব হয়ে যায় বিভিন্ন নামের ও জাতের আম ও লিচু। দেশিও ফলের মধ্যে আম ছোটবড় সকলের কাছে প্রিয় একটি ফল।
আর এই আমের জন্য বিশ্বব্যাপি খ্যাতি রয়েছে ঐতিহ্যবাহি রাজশাহীর। রাজশাহীর আম দেশ ও বিদেশের মানুষের নিকট আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা করেছে বহু বছর আগে থেকেই। তাই রাজশাহীকে আমের রাজ্য বলা হয়ে থাকে। প্রতি বছর দেশের প্রতিটি জেলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী হয় রাজশাহীর সুমিষ্ট আম।
এরমধ্যে রাজশাহীতে উঠতে শুরু হয়েছে বাহারি আম, বসতে শুরু করেছে আমের বাজার।
তবে ইতোমধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে গুটি ও আঠি জাতের আম। শুরুতে বাজারের আমের দাম কিছুটা বেশী। বাজার ঘুরে দেখা যায় আঁঠি ও সোঁয়াসে জাতের আম প্রতি কেজি আশি থেকে একশত (৮০-১০০) টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কয়েকজন আম বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা এই আম সংগ্রহ করছে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে।
সেখান থেকে আম নিয়ে আসতে খরচ বেশী হচ্ছে। তবে বাজারে এখনও পর্যাপ্ত আম নেই বলে জানান তারা। এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আম পাড়ার সময় নির্ধারন করেছে। সকল প্রকার গুটি আম পাড়া যাবে ১৫ মে, গোপাল ভোগ ২০ মে, লক্ষনভোগ বা লখনা ২৫ মে, রানিপচন ২৫ মে, খিরসাপাত বা হিমসাগর ২৮ মে, ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রোপালি ১৫ জুন, ফজলি ১৫ জুন, আশিনা ১০ জুলাই, বারি-৪, ১০ জুলাই।
তবে সকল প্রকার গুটি আম ১৫ মে থেকে গাছ থেকে নামানো শুরু হয়েছে। আর আগাম গুটি জাতের এ আম নামানোর মধ্য দিয়েই চলতি মৌসুমে প্রথম আম বাজারে এসেছে। এবারও গাছ থেকে পরিপক্ব আম নামানের জন্য আগেই সময় বেঁধে দিয়েছিল রাজশাহী জেলা প্রশাসন।
ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুসরণ করে সেই অনুযায়ী এখন রাজশাহীর বিভিন্ন বাগান থেকে আম নামাচ্ছে। যদিও বাজারের সব আম রাজশাহীর নয়। রাজশাহীর নাম ভাঙ্গিয়ে বিক্রি হচ্ছে অন্য জেলার বিস্বাদযুক্ত আম। তাই বাজার থেকে পাকা আম কেনার আগে কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
কারণ আমের অনেক জাত রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না কোন আম কোন সময় বাজারে পাওয়া যায়। তাই অনেক সময় আম কিনতে গেলে সন্দেহ হয় যে, আম আসলেই পাকা তো? এ সময়ে বেশিরভাগ আম ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে পাকানো হয়ে থাকে। বাজারে আম কিনতে গেলে আম উপরে দেখে বোঝার উপায় নেই পাকা নাকি কাঁচা।
আর কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কেমিক্যাল মানুষের শরীরে ক্যান্সারসহ মারাত্মক রোগ হতে পারে। তাই পাকা আম দেখে কিনতে হবে। আর চেনার সহজ উপায় হচ্ছে বেশি চকচকে দেখায় এমন আম কখনোই কেনা যাবে না। গাছপাকা আমের গায়ে মিষ্টি গন্ধ থাকবেই। এ বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে গন্ধ শুঁকে পরখ করে দেখে নিতে হবে। জানতে হবে কোন আম কখন পরিপক্ব হয়।
রাজশাহীর বিশিষ্ট লেখক ও আম গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী ‘আম’ নিয়ে তার প্রকাশিত গ্রন্থে বলেছেন, পোক্ত, পুষ্ট ও পরিপক্ব আম চাইলে আরও একটু সময় অপেক্ষা করতে হবে। দেশের মাটিতে ফলা নির্দিষ্ট ধরনের আমের রয়েছে সুনির্দিষ্ট জীবনচক্র। ক্যালেন্ডারের নিয়ম মেনেই আম পরিপক্ব হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মে মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় আমের এ মৌসুম। চলে আগস্ট পর্যন্ত। তাই গুটি আম দিয়ে শুরু হলেও গোবিন্দভোগ, গোপালভোগসহ ভালো জাতের আমের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও ১০-১৫ দিন। আমে যাতে ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো না হয় সেজন্য হাইকোর্ট থেকে আগে থেকেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থাগুলোকে বাগানগুলো ধনজরদারি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যেই গত ১৫ মে জ্যৈষ্ঠ্য মাসের প্রথম দিন থেকে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় আম পাড়া শুরু হয়েছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ও বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ১৫ মে থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে।
রাজশাহীতে সাধারণত সবার আগে পাকে গুটি জাতের আম।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন বলেন, গুটি আম প্রতিবছরই একটু আগে পাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
তাই অনেকেই গুটি আম নামাতে শুরু করেছেন। তবে আঁশযুক্ত এ আমের স্বাদ তুলনামূলক কম। বিভিন্ন জাতের জনপ্রিয় আমের পরিপক্বতা আসার সময়কালের মধ্যে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহের পর উঠবে গোপালভোগ ল্যাংড়াসহ সুস্বাদু, আঁশবিহীন, আঁটি ছোট আম। আঁটি ছোট ও পাতলা, খোসা খুব পাতলা, রসালো, মাংসল ও সুস্বাদু হয়। এভাবে পর্যায়ক্রমে রাজশাহীর সব আম নামতে শুরু করবে বলেও জানান রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।