বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি: আম মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় দশ হাজার মানুষ আসায় বুক বাধেন। আম বাগান পরিচর্যা, সংগ্রহ ও পরিবহন, বিক্রিসহ অন্যান্য ধরনের কাজে যুক্ত হন তারা। সারাবছরে তাদের আয়ের অন্যতম মৌসুম এটি। তবে গত কয়েক বছর থেকে হতাশায় ও দুঃচিন্তায় আছেন তারা।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় আমের মধ্যে আমের রাজা ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হিমসাগর (খিরসাপাত), ফজলি , মহনভোগ, বিখ্যাত। এছাড়া বৌ-ভোলানি, রাণিপছন্দ, জামাই খুশি, বৃন্দাবন, তুতাপরি, লখনা, বোম্বাই, দাউদ ভোগ, সিন্দুরি, আম্রপালি, আশ্বিনা, ব্যানানা, মল্লিকা, ক্ষুদি খিরসাপাত, কালীভোগসহ শতাধিক জাতের আম রয়েছে।
মেসার্স শাহদৌলা ফল ভান্ডারের সরকার দুলাল হোসেন বলেন, এই বছর আমের মূল্য অন্যান্য বছরের থেকে অনেক কম। বাজারে আমের চাহিদা নেই বললেই চলে। মোকামে আমের চাহিদা তেমন নেই এতে ব্যবসায়ীরা লোকসানের সম্মুখীন হতে পারে। আমের দাম এত কম কেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজারে আমের আমদানি বেশি। সে তুলনায় ব্যবসায়ীরা কম এসেছেন। ক্রেতা কম থাকায় আমের দামও তুলনামূলক কম।
বাঘা পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বালিকা বিদ্যালয়ের দক্ষিণে পাইকারী ও খুচড়া আম বিক্রেতা রবি শেখ জানান, এ বছর শ্রমিকদের মজুরি, সার ও কীটনাশক বেশি দিতে হয়েছে। ফলে আম উৎপাদনে খরচ বেশি হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় দাম পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বাজারে না আসা পর্যন্ত আমরা ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হব।
মোকামে হিমসাগর ( খিরসাপাত) আমের চাহিদা ব্যতীত অন্যান্য আমের তেমন চাহিদা নেই। বাজার খবর নিয়ে জানা যায়, দুই সপ্তাহ আগে হিমসাগর আম ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে ৪০-৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তবুও এই আম ছাড়া বাকি আমের মূল্য পাচ্ছে না ব্যবসায়ী গন।এছাড়া গত কয়েক বছরের থেকে চলতি বছরে অনলাইন আমের ব্যবসা অনেকগুন বেশী। এই করোনার কারণে বাজারে প্রায় ক্রেতা শুন্য।বাজারে লকনা আম ২০-২২ টাকা প্রতি কেজি ও ন্যাংড়া আম ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাগান মালিক মিজানুর রহমান সাহিন বলেন, বাঘা উপজেলার অধিকাংশ মানুষের আয়-রোজগার আমের উপর নির্ভর করে। গত কয়েক বছর থেকেই আমের দাম পাচ্ছেনা চাষিরা। ৫/৬ লক্ষ্য টাকায় বিক্রি হওয়া আমের বাগান, তিন বছর হলে আড়াই লক্ষ্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। তারপর আম পরিচর্যা খরচ দিন দিন বেরেয় যাচ্ছে। এমনটা চলতে থাকলে আমের ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হবে না বাগান মালিকদের।
বিভিন্ন ব্যবসায়ী দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমের এমন দাম তাদের ব্যবসার প্রতি আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। আমের দাম বছর পার হচ্ছে কম হচ্ছে। এমন ভাবে চললে তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ঋণের চাপ মাথায় উঠব। দেশে যে কয়েকটি আমের মোকাম রয়েছে, সবগুলোয় একই সঙ্গে আমবাজারে উঠেছে ও মোকাম গুলো চালু হয়েছে। বাজারে আম বেশি থাকলে ও ক্রেতা কম রয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা দাম পাচ্ছেন না।
সর্বপরি এই বছরে রাজশাহীর বাঘায় ব্যাপক আমের উৎপাদন হয়েছে তার যদি সঠিক দাম আম চাষিরা পেত তাহলে তারা অনেক লাভবান হত।কিন্তু আমের চাহিদা অন্যান্য বছরের মত এ বছর কম।