ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : শনিবার, ২৬ জুন, ২০২১ , আজকের সময় : শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪

রাবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে সংবাদ সম্মেলন

রাজশাহী ব্যুরো চীফ: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ১৩৮ জন শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী। শনিবার (২৬ জুন) দুপুর ১২ টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ( রাবিসাস)  এর সামনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ অভিযোগ করেন তারা। একই সঙ্গে দ্রুত পদায়নে  আবারও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করলেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্তরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিবিরের হামলায় পা হারানো ছাত্রলীগ নেতা এবং সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষে সদ্য বিদায়ী উপাচার্য প্রফেসর আব্দুস সোবহান ৭৩ এর অধ্যাদেশ ১২(৫) অনুযায়ী তার উপর অর্পিত ক্ষমতা বলে শুন্য পদের বিপরিতে ১৩৮ জন জনবল নিয়োগ দেন।

পরের দিন ৬ মে আমরা দপ্তরে যোগদান করি। কিন্তু প্রফেসর আব্দুস সোবহান এর মেয়াদ শেষ হলে রুটিন দায়িত্ব প্রাপ্ত উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা আমাদের যোগদানকে অবৈধ আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে নানা অজুহাতে আমাদের কর্মস্থলে যোগদান থেকে বিরত রেখেছেন। ৭৩’ এর অধ্যাদেশ মতে রুটিন উপাচার্য এ ধরণের সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না।

তিনি আরো বলেন, আমাদের রুটি রুজির উপর অমানবিক নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত নিতে মরিয়া বর্তমান রুটিন দায়িত্ব প্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা।তিনি এই নিয়োগ বাতিলে প্রতিনিয়ত মিথ্যার আশ্রয় এবং ৭৩ এর এ্যাক্ট লঙ্ঘন করে আসছেন। আমরা হতবাগ হয়েছি রুটিন দায়িত্ব প্রাপ্ত উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা গত২৪ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর এই নিয়োগ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন যা আমাদের নজরে এসেছে।

প্রতিবেদনটি মিথ্যার আলোকে সাজানো এবং ৭৩ এর এ্যাক্টের ভুল ব্যাখ্যায় ভরপুর। এধরণের ভুল ব্যাখ্যায় ভরা প্রতিবেদন মন্ত্রনালয়কে দেওয়া ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ এবং উক্ত প্রতিবেদন প্রত্যাহারের দাবী জানাই। মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন- ৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপাচার্য এ্যাডহকে নিয়োগ দিতে পারেন, তবে নিয়োগ দেওয়ার পর রিপোর্ট করতে হয়।

কিন্তু এক্ষেত্রে সিন্ডিকেটে রিপোর্ট করা হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের বক্তব্য হল- বর্তমান রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়েছেন। মূলত নিয়ম হলো- এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার পর পরবর্তী সিন্ডিকেটে রিপোর্ট প্রদান করতে হয়। গত ৫ মে এই নিয়োগ হওয়ার পর অদ্যবধি কোনো সিন্ডিকেট হয় নাই। এধরনের তথ্য গোপন ও মিথ্যাচারে আমরা নিজেরাই লজ্জিত।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়- রেজিষ্ট্রার মহোদয় উপস্থিত থাকা সত্তেও অন্য একজনকে দায়িত্ব দিয়ে নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে,যা ৭৩ এর এ্যাক্টের ব্যতয়। অথচ এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার গত ৫ ও ৬ মে অজ্ঞত কারনে আত্মগোপনে ছিলেন এমনকি তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ ছিলো।

গত ৭ মে তিনি রাবিতে এসে তাঁর আত্মগোপনে যাওয়ার রহস্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। এখানে বর্তমান রুটিন উপাচার্য সত্যকে লুকিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। রেজিস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনে বাধ্য। কিন্তু তার দীর্ঘ সময় অনুপস্থিতি এক্ষেত্রে উপাচার্য অধিনস্থ কোন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে কার্য সম্পন্ন করতে পারেন। আরো উল্লেখ করা প্রয়োজন.৭৩ এর এ্যাক্ট অনুযায়ী উপাচার্য মহোদয়ের উপর অর্পিত ক্ষমতা বলে রেজিস্ট্রার উপস্থিত থাকা সত্বেও অন্য কোন কর্মকর্তা দিয়ে কার্য সম্পাদন করতে পারেন।

এছাড়া যে সকল পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে এবং প্রক্রিয়াধীন সে সকল জায়গায় এ্যাডহক দেওয়া আইনসিদ্ধ নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু উল্লিখিত পদের বিপরীতে এডহকে নিয়োগ দেওয়া হয় নি। রাবির ৭৩ এর এ্যাক্ট অনুযায়ী কোন বিভাগে বা অফিসে জনবল নিয়োগ দেওয়া হলে বিভাগ বা অফিসের প্লানিং কমিটির বা কর্তৃপক্ষের চাহিদা পত্র থাকতে হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন আনন্দ কুমার সাহা।

কিন্তু এটিও মিথ্যাচারের একটি অংশ। প্রতিবেদনের সবশেষে তিনি উল্লেখ করেছেন- মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির নিয়মিত নিয়োগ এবং এ্যাডহক নিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। অথচ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে সুস্পষ্টভাবে লেখা ছিল স্থগিত রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো। তবে অনুরোধ কখনও নিষেধাজ্ঞা হতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয়, নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার দিনই তাৎক্ষনিকভাবে মন্ত্রনালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন তদন্ত কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। আমাদের জানামতে তদন্ত কমিটি এ নিয়োগকে অবৈধ ঘোষনা করেনি বা শিক্ষা মন্ত্রনালয় এ নিয়োগকে অবৈধ বলেনি। একজন রুটিন উপাচার্য পদায়ন, বদলি, ফাইন্যান্স কমিটির মিটিং ও সিন্ডিকেট করতে পারেনা।

ইতিমধ্যে তিনি পদায়ন এবং বদলি করেছেন এখন তিনি ফাইন্যান্স ও সিন্ডিকেট মিটিং করতে মরিয়া। তিনি নীলনকশা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে প্রগতিশীল সমর্থিত অফিসার কর্মকর্তাদের সরিয়ে সেই জায়গায় জামাত-বিএনপি কর্মকর্তাদের পদায়ন করেছেন। আপনারা জানেন আমরা কর্মস্থলে যোগদানের লক্ষ্যে লাগারতার আন্দোলন করছি এই আন্দোলন নস্যাৎ করতে রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এবং তাদের গুন্ডাবাহিনীর দ্বারা ইতিমধ্যে আমাদের আন্দোলনের আহবায়ক ওমর ফারুক ফারদিন কে কে হত্যার চেষ্টা করেছেন।

আমরা প্রতিনিয়ত হুমকির শিকার হচ্ছি। আমাদের কাছে তার প্রমান আছে নিরাপত্তার সুবিধার্থে এখন প্রকাশ করছিনা যথা সময়ে তা প্রকাশ করা হবে।
উক্ত সমস্যা নিরসনে এবং দ্রুত প্রদানের দাবিটি সার্থকভাবে সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন নিয়োগপ্রাপ্তরা।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি আতিকুর রহমান সুমন, রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারদিন, রাজশাহী মহানগর যুবলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক একেএম আরকান উদ্দিন বাপ্পি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ফিরোজ মাহমুদ, মাসুদ রানা, দেলোয়ার হোসেন ডিলস, বর্তমান সহ-সভাপতি মাহফুজ আল আমিন, তৌহিদ মোরশেদ, সদস্য বোরহানউদ্দিন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির রাবি শাখার সাবেক আহ্বায়ক মতিউর রহমান মর্তুজাসহ নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। তাবে এবিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রুটিন উপাচার্য ড. আনন্দ কুমার সাহার সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের  চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।