কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় নির্মানাধীন মেডিকেল কলেজ প্রকল্প সংক্রান্ত আইএমইডি’র তদন্ত রিপোর্টের সূত্র ধরে করা প্রতিবেদনে সংক্ষুব্ধ যুবলীগ নেতার দায়ের করা তথ্য প্রযুক্তি নিরাপত্তা আইনের মামলায় “ভয়েজ অব কুষ্টিয়া” নামের স্থানীয় একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রকাশক ও সম্পাদক মুন্সী শাহীন আহমেদ জুয়েল এবং বার্তা সম্পাদক অঞ্জন কুমার শীল শুভ’কে গ্রেফতার করেছে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ।
বুধবার ভোর রাতে তাদের নিজ বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসে গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম। পরে বিকেলে তাদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের প্রযুক্তি নিরাপত্তা আইনে মামলা রেকর্ড করে সন্ধ্যায় আদালতে সৌপর্দ করে পুলিশ।
বুধবার বিকেল ৫টায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার দুই আসামীকে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে সৌপর্দ করলে আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন বলে নিশ্চিত করেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক সঞ্জয় কুমার।
গ্রেফতারকৃত দুই সাংবাদিকের বাড়ি সদর উপজেরার নলখোলা পাটিকাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মৃত: মুন্সী মখলেসুর রহমানের ছেলে মুন্সী শাহীন আহমেদ জুয়েল(৪২) এবং কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়াস্থ এসভিপি সড়কের বাসিন্দা মৃত: অখিল কৃষ্ণশীলের ছেলে অঞ্জন কুমার শীল শুভ(২৮)।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও মামলা বাদি মিজানুর রহমান মিজুর দেয়া এজাহার সুত্রে জানা যায়, গত ২৮জুন “ভয়েস অফ কুষ্টিয়া” নামে সরকারের অনুমোদনহীন একটি নিউজ পোর্টাল সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে বাধাগ্রস্ত ও ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার হীণ উদ্দেশ্যে “কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে রডের পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠ ব্যবহার” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে।
উক্ত মিথ্যা খবরের শেষাংশে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে একটি ভবন নির্মানে রডের পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠ ব্যবহারের কথাও উঠে আসে প্রতিবেদনে। ২০১৯ সালের ১জানুয়ারী ভবনের একটি অংশ ধ্বসে পড়ে এতে ১ শ্রমিক নিহত ও ১০ শ্রমিক আহত হন। মেডিকেল কলেজের নির্মান শেষ হওয়া কোন অংশ ধ্বসে পড়েনি।
নির্মান কাজ চলাবস্থায় দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে’। এজাহারে এমনটি দাবি করে মিথ্যা বানোয়াট ও হীনউদ্দেশ্য মূলক সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ এনেছে এজাহারকারী। মামলাটিতে দুইজনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত অঞ্জন কুমার শীল শুভর স্ত্রী স্মৃতি বানী শীলের অভিযোগ, “গত ১১জুন গভীর রাতে নারীর উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ২১জুন কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগে মামলা করেন আহত ওই নারীর মা। এই ঘটনার নিউজ প্রকাশ হয়েছিলো ভয়েস অব কুষ্টিয়ায়। ওই মামলায় এজাহারে মিজানুর রহমান মিজুর নাম ছিল। ওই সংবাদের প্রতিশোধ নিতেই আমার স্বামীর বিরুদ্ধে এই বানোয়াট অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা করে হয়রানি করছে”।
শাহীন আহমেদ জুয়েলের স্ত্রী সেলিনা আক্তারের জানায়, বুধবার ভোর রাতে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমাদের থানাপাড়াস্থ বাসা তাকে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশ আমাকে জানায় জুয়েলের সাথে আমরা একটু কথা বলতে চাই। কিছু তথ্য জানা দরকার সেজন্য নিয়ে যাচ্ছি। বিকেলে শুনি জুয়েলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা হয়েছে।
দেখুন, কুষ্টিয়া মেডিকেলের অনিয়মের বিষয়ে সারা কুষ্টিয়াবাসী জানে, আপনারাও জানেন, তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে তদন্তেও প্রমান পাইছে অনিয়মের কথা, সরকারের তদন্ত রিপোর্ট ধরিই ভয়েস অব কুষ্টিয়া অনলাইন পত্রিকায় নিউজ হইচে। মামলা যদি করতিই হয় সরকারের ওই তদন্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে করুক। এটা হয়রানি করার জন্যই মামলা করেছে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি পুলিশ পরিদর্শক সাব্বিরুল আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পূর্বের কোন সংবাদ প্রকাশের সাথে এই মামলার সম্পর্ক নেই। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে রডের পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে বলে একটি সংবাদ প্রকাশ করে তাঁরা ফেসবুকে ভাইরাল করেছে।
এঘটনায় দুইজনের নামে তথ্য প্রযুক্তি নিরাপত্তা আইনে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তদন্তে সবকিছু বেড়িয়ে আসবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।