ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : রবিবার, ৪ জুলাই, ২০২১ , আজকের সময় : শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪

রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি এখন ব্যাবহার অনুপযোগী

মাজহারুল ইসলাম চপল, ব্যুরো চীফঃ রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে গরীব অসহায় ও ভূমিহীনদের দেওয়া বাড়ি বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেখানে নেই রাস্তা, নেই বিদ্যুৎ, নেই খাবার পানির ব্যবস্থা। আবার ভাল নেই টয়লেট ব্যবস্থাও।

এমন দৃশ্য চোখে পড়ে বাগমারা উপজেলার আউচ পাড়া ইউনিয়নের হাটগাঙ্গোপাড়া গ্রামে ভূমিহীনদের নতুন গুচ্ছ গ্রামে। এই অভাগা অসহায় পরিবারগুলোর সাথে কথা বলে জানা যায় আরও অনেক কিছু। ভুমিহীনদেন জন্য নির্মিত ১২টি বাড়ি এখন বর্ষার পানিতে ভাসছে। তাদের যাওয়া আসার মত নেই কোন রাস্তা। কারন ঐ বাড়ি গুলো করা হয়েছে বিলের মাঝে।

বিলটির বুকচিরে বয়ে গেছে ছোট্ট একটি নদী, যদিও কালের বিবর্তনে প্রায় হরিয়ে গেছে নদীর মুলধারা। নাম তার “কম্প”। এই কম্প নদীর পাড় ঘেঁষে ফসলের ক্ষেত। আর ক্ষেতের মাঝে এই ঘর গুলো। সব মিলিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সেখানে আশ্রয় পাওয়া ১২টি পরিবার।

অসহায় মানুষের দুর্ভোগের সংবাদ পেয়ে গত ১জুলাই (বৃহস্পতিবার) ঘটনাস্থলে মিডিয়া কর্মিরা উপস্থিত হলে আবেগাপ্লুত কন্ঠে ভুক্তভোগীরা জানান, আমরা কত কষ্টে জীবন জাপন করছি যা দেখার কেউ নাই। মাত্র কয়েকদিন হলো বাড়িতে আসা, এরমধ্যে এই বিপদে পড়েছি। কবে এসেছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, গত ২০ জুন ২০২১ আমাদের ১২টি ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ির কাগজ বুঝিয়ে দেয়।

কিন্তু আমরা কেউ এখানে বসবাস করতে পারছি না। এখানে খাবার পানির ব্যবস্থ নেই, টয়লেট যেটা করে দিয়েছে, তাতে ঢোকার অবস্থা নাই, কারন জানতে চাইলে তারা বলেন, সামান্য বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাচ্ছে পুরো এলাকা। এখানে পানি নামানোর কোন ব্যবস্থা নাই। তাই বৃষ্টির পানি টয়লেট উপছে উপরে উঠে আসছে।

এছাড়াও সেখানে বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। “এমনিতেই কুঁজো বুড়ি, তার উপর বোঝার ভারি” বাড়ি গুলো পাওয়ার বিনিময়ে তাদের নিকট থেকে দলিল বাবদ ১৭০০ টাকা নেয়, এরপর ঘরের চাবি দেবার সময় ১০০০ টাকা নেয়, সর্বশেষ বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য ৪৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগের টাকা নিলেও এখনও মিলেনি বিদ্যুৎ। এরপর কঠোর লকডাউন যেন তাদের বুক আরও ভারি করে ফেলেছে। লকডাউনের কারনে কোথাও কাজে যেতে পারছেনা।

ভিক্ষা চাইলেও পাচ্ছেনা, অশ্রু ভেজা নয়নে কেঁদে কেঁদে কথা গুলো বলছিলেন জুলেখা। এবং বিধবা রহীমা জানান, আমি খাবার জোগাড় করতে পারিনা, কেউ কোন সহযোগিতা করছেনা, পানির মধ্যে বাড়ি নিয়ে কি হবে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। বাড়ি গুলো করেছে বিলের নিচু জমিতে। স্থানীয়দের মতামত উপেক্ষা করে নিচু জায়গাতেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে উপজেলা প্রশাসন।

এরই খেসারতের ফল এখন সামান্য বৃষ্টিতেই পানিতে ভাসছে গৃহহীন মানুষের কষ্টের সংসার। ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, অল্প বৃষ্টিতেই পানি ঘরে ঢুকে গেছে। রান্নাঘর, টয়লেট, যাতায়াতের রাস্তা সব কিছুই পানিতে ভাসছে। সামনে বন্যা আছে, সামনে আবার কোন দুর্গতি অপেক্ষা করছে আল্লাহ জানে।

আশ্রয়ণের আরেক বাসিন্দা আক্কাস আলী বলেন, আমাদের ঘরবাড়ি নাই, তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ঘর দিয়েছে। ৩ দিন ধরে ঘরের মধ্যে পানি। সাপ, ব্যাঙ, পোকামাকড়ের ভয়ে দিন কাটছে।’ তাই স্থায়ী সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন ভুক্তভোগী ১২টি পরিবার।

তবে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের বাড়ি শুধু বাগমারা নয় এই অবস্থা জেলার অন্যান উপজেলাতেও। এসব বাড়ি নিচু জায়গায় নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলে স্থানীয়রা আপত্তি তোলেন। এ ছাড়া বাড়ি গুলো নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারেরও অভিযোগ তোলেন এলাকাবাসি।

অসহায় মানুষের দুর্ভোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহাম্মেদ (ইউএনও) বলেন, সাংবাদিকের যোগাযোগ মাধ্যমে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের বিষয়টি জানার পর পরই গত বৃহস্পতিবার আমি খোঁজ-খবর নিয়েছি। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে আপাতত পানি নামানোর ব্যবস্থা করছি। পরবর্তী সময়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এ বিষয়টি আমার জানানেই।