ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : রবিবার, ১১ জুলাই, ২০২১ , আজকের সময় : রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

লকডাউন শাটডাউনের ফাঁদে অসহায় আজ চা দোকানি

মাজহারুল ইসলাম চপল, ব্যুরো চীফঃ রোদ বৃষ্টির অসম ছন্দে চা দোকানি পারভিন এর চলছে জীবন যুদ্ধ। এই সুন্দর পৃথিবীর নিষ্ঠুর খেলায় বার বার হার মানলেও হাল ছাড়েননি তিনি। জীবন যুদ্ধে মরিয়া এই চা দোকানি পারভিন খাতুন। নগরীর ১৯ ওয়ার্ডের শিরইল কলোনী এলাকার জাকির হোসেনের স্ত্রী পারভিন খাতুন (৪৫)।

অনেক কষ্টে মাথা গোঁজার ঠাই করেছে শিরইলে ( কলোনী) অবস্থিত খাদ্য গোডাউনের পেছনে। পারভিনের পাঁচ সদস্যের পরিবারে দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে সংসার। জোড়াতালির সংসারে উপার্জনের একমাত্র ভরসা ছিল স্বামী জাকির হোসেন। তিনি পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। এই অটো চালিয়ে পাঁচ সদস্যদের সংসারের বোঝাটা যেন দিন দিন ভারি হতে শুরু করে।

অবশেষে খুব অল্প বয়সেই বড় মেয়ের বিয়ে দেয় সংসারটাকে হালকা করার জন্য। কিন্তু মেয়ের সংসারেও গোঁজাতালি দিতেই হয় পারভিনকে। তাই অভাব যেন জীবনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অভাবকে দোপাট্টা বানিয়ে স্বামির পাশাপাশি আয়ের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছে পারভিন। পারভিন বেসরকারি লোন তুলে স্বামিকে একটি অটোরিকসা কিনে দেয় এবং নিজের ব্যবসার কাজে লাগায়, যেন তাদের অভাব মোচন হয়।

অটোরিকসা কিনার পর অটো চালিয়ে বেশ ভালই চলছিল তাদের সংসার। আর পারভিন রাজশাহী রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় ফুটপাতে চা দোকান দেয়। তাতে দুইজনের আয় রোজগার বেশ ভালই হচ্ছিলো। পারভিনের স্বপ্ন এখন ছোট মেয়েকে নিয়ে। ছোট মেয়ে জাকিয়া আক্তার মীম, সে এখন চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ছে। মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করবে।

কিন্তু তাসের ঘরের মত ভাংতে বসেছে পারভিনের সেই স্বপ্ন। বিশ্বে মহামারি করোনর ঢেউ বাংলাদেশকে লন্ডভন্ড করতে শুরু করেছে। যদিও শুরু থেকেই সরকার অনেক তৎপর। তবুও দেশের মানুষ দিন দিন বেকার হয়ে পড়ছে। কারন স্কুল কলেজ, হাট বাজার, ছোট বড় দোকানপাট সকল কিছুই বন্ধ রয়েছে। সরকার জনগনকে বাঁচাতে প্রানপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। মানুষজন না থাকায় ও দোকানপাট বন্ধের কারনে আজ দিশেহারা চা দোকানি পারভিন।

ফুটপাতে ছোট্ট একটি দোকান, তিনি দাঁড়িয়ে চা, সিগারেটসহ ক্ষুদ্র আইটেম গুলো বিক্রয় করতেন। কিন্তু প্রশাসনের চাপে সেই ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়েছে আয় রোজগারের পথ। প্রবাদ রয়েছে “এমনিতেই কুঁজো বুড়ি, তার উপর বোঝার ভারি” গত রোজার ঈদের এক সপ্তাহ আগেই স্বামির অটোরিকসাটাও চুরি হয়েছে। থানায় অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হয়নি।

এরপর থেকে পারভিনের সাথেই চা দোকানে সময় দেয় স্বামি জাকির হোসেন। কিন্তু সেই রাস্তাও আজ বন্ধ, পুলিশ কোনভাবেই দোকান চালাতে দিতে রাজি নন। তাই চোরের মত লুকিয়ে লুকিয়ে (ভ্রাম্যমান) চা বিক্রয় করছে স্বামি-স্ত্রী। এই অভাবের উপর আবার কিস্তির চাপ। প্রতি সপ্তাহে তাদের কিস্ত রয়েছে তিন হাজার টাকা। আবেগাপ্লুত কন্ঠে এই প্রতিবেদককে পারভিন বলেন, সরকারের এই লকডাউন শাটডাউনের কারনে আজ আমাদের বেহাল দশা।

এটা বাস টার্মিনাল ও ষ্টেশন এলাকা। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার লোকের সমাগম হতো, কিন্তু সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারনে এখন জনশূণ্য। যদিও কোথাও চা এর ফ্লাক্স নিয়ে বসি, সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এসে চলে যেতে বলে। তাহলে আমরা কি করে চলবো। সরকার অনেক মানুষকে অনুদান বা ত্রাণ দিয়েছে, কিন্তু আমাকে কেউ চোখে দেখেনা। এখন পর্যন্ত কারো কোন সহযোগিতা আমি পাইনি।

এই দুর্দিনে আমি বড় অসহায়। দেশে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি, কোন কিছুই কিনে খাওয়ার জো নাই। দেশের এই দিনে আমাদের আত্নহত্যা করা লাগবে দেখছি। বিষয়টি নিয়ে টার্মিনাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাসির উদ্দনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমাদের আর কি করার? সরকারে নির্দেশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে হবে।

কোন গণজমায়েত করা যাবেনা। চা দোকান বসতে দিলে জনসমাগম বাড়ে তাই উর্ধ্বতনের নির্দেশে শুধু চা দোকান নয়, কোন দোকানপাট খুলতে দিচ্ছি না। তারপরও পারভিন গরীব, তাকে আমরা যথেষ্ট সহযোগিতা করি।