মোঃ বেল্লাল হোসেন: পরিবেশবান্ধব মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে অসময়ে তরমুজ উৎপাদনে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের রিপন মন্ডল। ৮শ চারা ৪০ শতাংশ জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে ২০ হাজার টাকা খরচ হলেও ইতিমধ্যে ৪শ তরমুজ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।
সাধারণত এ পদ্ধতিতে তরমুজের ফলন বছরে একবার হয়ে থাকে। কিন্তু রিপন বাস্তবে দেখিয়েছেন যে, বছরের যেকোনও সময় একাধিকবার তরমুজ উৎপাদন করা যায়। দেশীয় বীজ দিয়ে বছরে তিনবার তরমুজের আবাদ করতে পারবেন। এতে তিনি বারো মাস তরমুজ বাজারে সরবরাহ করতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন।
রিপনের সফলতায় নিজস্ব জাতের লাল ও হলুদ তরমুজ চাষে আশপাশের গ্রামের কৃষকেরা বারি-১ ও বারি-২ জাতের তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন । সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মালচিং মেথড’ ভারত ও ইসরাইলে খুবই জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। স্থানীয় কৃষি বিভাগ এ পদ্ধতিতে তরমুজ উৎপাদনে রিপনকে উৎসাহিত করে।
প্রচলিত পদ্ধতিতে তরমুজের বীজ সরাসরি জমিতে লাগানো হয়। কিন্তু মালচিং মেথড অনুযায়ী মালচিং পেপারে মুড়িয়ে অঙ্কুরিত বীজ জমিতে রোপন করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রথমে মালচিং পলিথিন দিয়ে একটি বীজতলা নির্মাণ করা হয়। এরপর তরমুজের বীজ সেখানে স্থাপন করা হয়। এবার মালচিং পেপার ছিদ্র করে বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার পর, তা মাচায়
প্রতিস্থাপন করা হয়।
যেহেতু বীজগুলো পলিথিন দিয়ে মোড়ানো থাকে, তাই কোনও কীট-পতঙ্গ আক্রমণ করতে পারে না। ফলে কীটনাশক ব্যবহারেরও প্রয়োজন হয় না। একই কারণে ক্ষতিকর সূর্যালোকও এর ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। সাধারণ পদ্ধতিতে অনেক সময় বৃষ্টি হলে বীজতলা বা ক্ষেত থেকে সার ধুয়ে যায়।
মালচিং পেপার দিয়ে মোড়ানো থাকায় এখানে সেই সম্ভাবনাও নেই। সাধারণ পদ্ধতির চেয়ে নতুন এই পদ্ধতিতে গাছগুলো দেড়গুণ তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে বলে জানা যায়। রিপনকে অনুসরন করে অসময়ের তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পটুয়াখালীর আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ধসঢ়;ব গবেষণা কেন্দ্র উদ্ভাবিত তরমুজের বারি-১ ও বারি-২ জাত কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ
নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে মালচিং পদ্ধতিতে অসময়ের চাষে ভালো ফলন পেয়ে খুশি তরমুজচাষিরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাফর আহমেদ জানান, এ উপজেলায় এই প্রথম মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ হয়েছে।
৬ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে ১৫শ চারা বিতরণ করা হয়। কৃষকরা সাফল্যও পেয়েছেন। তাদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহায়তা করা হচ্ছে। আশা করা যায় দশমিনায় খুব দ্রুত মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষের ব্যাপক প্রসার ঘটবে।