ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক , আপলোডের সময় : শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০২১ , আজকের সময় : শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

কৃষকের মুখে হাসি নওগাঁয় আউশ ধানের বাম্পার ফলন

মো.আককাস আলী, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: শস্যভান্ডার হিসাবে খ্যাত নওগাঁয় আউস ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা এবং দাম ভালো থাকায় আউশ চাষীদের মুখে হাসির ঝিলিক ঝরছে। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার প্রধান অর্থকরী কৃষিপণ্য হিসেবে অর্থনীতিতে ধান উৎপাদন ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে।

সেই ধারাবাহিকতায় চলতি মৌসুমে মহাদেবপুর উপজেলায় ১৫০ কোটি টাকার আউশ ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। এখানকার মানুষের অন্যতম আয়ের উৎস ধান-চাল। দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম ধান উৎপাদনকারী এ উপজেলায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে আউশের আবাদ হয়েছে।

এবার ৬৫ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ১৫০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আউশ আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে।

ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় রোধ করে বৃষ্টির পানি কাজে লাগিয়ে আউশ আবাদ জনপ্রিয় করতে কৃষি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারে এবং কোন সমস্যায় না পড়েন এ জন্য তারা সার্বক্ষণিক নজর রাখছে। এবারও বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন তিনি।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি আউশ মৌসুমে নওগাঁ সদরে ৪ হাজার ২৭৫ হেক্টর, মহাদেবপুরে ১৫হাজার ৬৭০হেক্টর, পত্মীতলায় ৯ হাজার ২৪০হেক্টর, ধামইরহাটে ৩ হাজার ৬৯০হেক্টর, সাপাহারে ১ হাজার ৮১৫হেক্টর, পোরশায় ১ হাজার ১২০হেক্টর, মান্দায় ১৯ হাজার ৭০০ হেক্টর, নিয়ামতপুরে ১১হাজার ৭০০ হেক্টর রাণীনগরে ১ হাজার ৪২৫হেক্টর, আত্রাইয়ে ১ হাজার ৫৩৫হেক্টর, বদলগাছীতে ১হাজার ৫২০হেক্টর, জমিতে চাষ করা হয়েছে।

কৃষি বিভাগ আউশের প্রণোদনা হিসেবে জেলায় ৩০ হাজার ২৬৮জন কৃষকদের মধ্যে ৫ কেজি উন্নত জাতের বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার সরবরাহ করছেন। কৃষি বিভাগ আশা করছেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আউশের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
ধামইরহাট উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের চৌঘাট গ্রামের কৃষাণী সেলিনা বলেন, ইরি ধানের দাম ভালো পেয়েছি।

চলতি বছরে দুই বিঘা জমিতে আউশ ধান চাষ করেছি ধানের ভালো দাম পাওয়ার আশায়। চকমহেশ গ্রামের কৃষক দুলাল হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে বীজ, সার বিনামূল্যে প্রদান করায় আমরা এ ধান চাষ করেছি। বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের পরেই আউশ ধান চাষ করা হয়ে থাকে। ফলে জমি পতিত না থাকায় জমিতে আগাছা জন্মাতে পারে না।

অন্যদিকে প্রাকৃতিক বৃষ্টিতেই প্রায় এই আউশ ধান চাষ সম্পন্ন হয়। এই ধান ঘরে তোলার পর আমন ধান চাষ করা হয়। বছরে বোরো, আউশ ও আমন ধান চাষ করায় কৃষকদের বেশি লাভ হয়ে থাকে। মহাদেবপুর উপজেলার স্বরসতীপুর গ্রামের খাঁপাড়ার কৃষক আব্দুস ছাত্তার জানান, গত বছর ৪ বিঘা ধান লাগিয়েছিলেন।

প্রতি বিঘায় ১৭ মণ করে ধান উৎপাদন হলেও ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছিলেন। লাভ বেশি না হলেও কিছু লাভ হয়েছিল। তবে গত ইরি-বোরো ধানের কাটা মাড়াইয়ের শুরু থেকে প্রকার ভেদে ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০ টাকা দরে প্রতি মণ ধান কেনা-বেচা হচ্ছে। বোরো ধানের ধানের নায্য মূল্য পাওয়ায় এ বছর ৬ বিঘা আউশ লাগিয়েছেন। কৃষি প্রণোদনা না পাওয়ায় অভিযোগ করে বলেন, আগামীতে তাদের মতো অনেক কৃষকই সরকারি এই সহযোগিতা পাননি। সঠিক কৃষকদের এই সহযোগিতা দেওয়ার দাবি জানান।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামছুল ওয়াদুদ জানান, আউশ ধান চাষে তেমন সেচ ও সারের প্রয়োজন হয় না। নওগাঁয় আউশ মৌসুমে প্রায় ৩০ হাজার কৃষকদের মধ্যে কৃষি প্রণোদনা হিসেবে সার ও ধান বীজ দেওয়া হয়েছে যাতে কৃষকরা বেশি করে আউশ ধান চাষ করেন।

বন্যায় জেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান নষ্ট হলেও কৃষি বিভাগ আশা করছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আউশের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। অপর প্রশ্নে তিনি আরো বলেন, জেলার বাকি কৃষকদের কৃষি সুবিধা দিতে পারলে আগামীতে নওগাঁয় আরো ধান উৎপাদন চাষে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হবে। ফলে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।