ডেইলি নিউজ বাংলা ডেক্স: কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পানের বাম্পার ফলন সত্বেও বাজার মূল্য কম হওয়ায় হাসি নেই পান চাষীদের মুখে। আবহমান কাল ধরে দৌলতপুর পদ্মা উপকূলীয় এ জেলার সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে আছে পান।
ফলে চলতি সময়ে পান চাষ করে লাভের পরিবর্তে ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে পান চাষীদের। পানের বাম্পার ফলন হলেও দাম না পাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
উপজেলার শালিমপুর এলাকার পানচাষী আব্দুল লতিফ বলেন, বর্তমান সময়ে পানের দাম একেবারে কম থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো ডাল ভাত যোগাড় করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। পূর্বে যে পানের পোন বিক্রি হতো ১শ’৫০ থেকে ১শ’ ৮০টাকা তা এখন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪০ থেকে ৬০/৬৫ টাকায়।
আগে যে পান ৪০/৬০টাকা বিক্রি হতো এখন সেই পান পোন প্রতি ৮/১২ টাকা। মথুরাপুর ইউনিয়নের বাগোয়ান গ্রামের পানচাষী সাজু আহমেদ বলেন, ঋণ নিয়ে দুই বিঘা জমিতে বরজটি দাঁড় করেছি। পানের বাজারের যে অবস্থা, এতে ঋণের টাকা পরিশোধ দুরের কথা- এখন সংসার চালাতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে।
উপজেলার ব্রাক পাড়া গ্রামের শিক্ষিত যুবক পানচাষী শাহিন রেজা জানান, বরজে কাজ করা দিনমজুরের দাম লাগামহীন ভাবে বেড়ে গেছে। সে তুলনায় বর্তমান যে পানের দাম তাতে পান বিক্রি করে মজুরির টাকা পরিশোধ করাও দুস্কর হয়ে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে পানচাষীরা পানচাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৫অক্টোবর) সকালে উপজেলার সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী পানের হাট তারাগুনিয়া সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে কাক ডাকা ভোর থেকেই তারাগুনিয়া বাজারে পান বিক্রেতারা বিভিন্ন বাহন ও মাথায় করে তাদের উৎপাদিত পান নিয়ে বাজারে আসছেন। ক্রেতারাও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন পান ক্রয়ের জন্য।
আড়ৎদার ইদ্রিস আলী বলেন, দৌলতপুর,শালিমপুর, শশীধরপুর, কায়ামারী, হোসেনাবাদ, ফারাকপুর এলাকার পানচাষীরা বিক্রি করার জন্য প্রতি দিন সকালে নিয়ে আসলেও পানের দাম কম থাকায় সঠিক দাম দিতে পারছি না। ভরা মৌসুমেও পানের দাম না পেয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা। পাশের দেশ ভারত থেকে পান আমদানী করায় পানের দাম কম হওয়ায় চাষীদের চরমভাবে লোকসান গুনতে হচ্ছে। পানচাষী মহির উদ্দিন জানান, গত ১০ বছর যাবৎ ৩ একর জমিতে পানচাষ করছি এখন পর্যন্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সরকারি কোনো বরাদ্দ পাইনাই।
দৌলতপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর , কৃষি কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম জানান, উপজেলার প্রায় ৫’শ৫৪ হেক্টর জমিতে চাষিরা পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা বলেন, সরকারিভাবে পান চাষিদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। তারপরও আমাদের কর্মকর্তারা চাষিদের বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়ে থাকেন।