রাজশাহী ব্যুরোঃ ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বার্থ হাসিলের জন্য নানা রকম কুট কৌশল করতে গিয়ে নিজেই পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ৫ নং আউচপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সরদার জান মোহাম্মাদ। গত ২৬ মার্চ ঐ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বাগমারা থানায় একটি চাঁদাবাজীর মামলা হলে তিনি নিজেকে বাঁচানোর জন্য গাঁঢাকা দেন এবং ৩০ মার্চ রাতে নগরীর হেঁতেম খাঁ এলাকার নিজ ভাঁড়া বাসা থেকে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশের সহযোগিতায় গ্রেফতার করতে সক্ষম হন বাগমারা পুলিশ।
মামলা সূত্রে জানাযায়, গত ২৫ মার্চ বিকাল আনুমানিক সাড়ে তিনটা দিকে ব্যবসায়ীক কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার হরীদাগাছী গ্রামের বাবুলের ছেলে জুবাইয়ের হুসাইন (২২) ( স্বর্ণ ব্যবসায়ী)। বাগমারা থানাধীন মির্জাপুর,বিরোহী ( বটতলা মোড়) পৌছালে পথ রোধ করে সাবেক চেয়ারম্যান সরদার জান মোহাম্মাদ ও তার গুন্ডাপান্ডা। চেয়ারম্যান জান মোহাম্মাদের নির্দেশে হাসুয়া দিয়ে জুবাইয়েরকে কোপ মারে এবং ১,৭২,৮০০ /=( এক লাখ বাহাত্তর হাজার) ছিনতায় করে। পরে চিকিৎসা শেষে জুবাইয়ের চাচা মোয়াজ্জেম হোসেন (৩২) বাদী হয়ে বাগমারা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ।
এছাড়াও সরদার জান মোহাস্মদের নানা অপকর্ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধানে নামে প্রশাসন ও মিডিয়াকর্মীরা। অনুসন্ধানে জানাযায়, ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে বড় ব্যবধানে পরাজিত হন সাবেক এই চেয়ারম্যান। তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের দুর্নীতি, পুকুর জবর দখল, বিচার সালিশের নামে টাকা আত্নসাৎ সহ নানা অপকর্ম করেছেন। এছাড়াও সাধারণ মানুষকে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করা, মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো যেন তার নিত্যনৈমিত্য ঘটনা। যা আগামী পর্বে তুলে ধরা হবে।
তবে সর্বশেষ বাগমারা উপজেলার মুগাইপাড়া গ্রামের একটি বিল/পুকুর জবরদখল করেছেন বলে ভুক্তভোগীদের দাবী। ২০১৭ সালে উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নে মুগাইপাড়া বাজার সংলগ্ন একটি বিল কৃষকের নিকট থেকে প্রায় ৫৫ বিঘা জমি ১০ বছরের জন্য লিজ নেয় মুগাইপাড়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মাসুদ মাষ্টার, লায়েবুল্লার ছেলে মারুফ হাসানসহ ৮ জন পার্টনার। কিন্তু ২০১৯ সালে ৭ জন পার্টনারের নিকট থেকে প্রায় বিশ লক্ষ টাকা দিয়ে মাসুদ মাষ্টার কিনে নেয়।
বিলটি মাছ চাষ উপযোগী না হওয়ায় পুনরায় ২০২১ সাল থেকে নতুনভাবে ১০ বছরের ডিড করে এবং নতুন করে খনন করে। খনন কালে মাবুদ সরকার অনিক ও মারুফ হাসানকে পার্টনার হিসেবে নতুন ভাবে যুক্ত করেন। পরবর্তীতে দুই পার্টনারের সম্মতিতে বিলটি চেয়ারম্যান সরদার জান মোহাম্মাদের নিকট বিক্রয় করে। ৮০ লক্ষ টাকা পুকুর মাত্র ৪০ লক্ষ টাকায় জোর করে লিখে নেয়। প্রাথমিকভাবে দশ লক্ষ টাকা
দেয় এবং পরবর্তীতে আট মাসের সময় চেয়ে নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে ডিড করেন। আরেক পার্টনার আবুল কাশেমের থেকে জোর করে ৫ লক্ষ টাকা দিতে চাই। এতে আবুল কাশেম রাজি নাহলে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে জোরজবস্থি নন জুডিমিয়াল ফাঁকা ষ্ট্যাম্পে সাক্ষর নেয়। পরে এবিষয়ে কোর্টে একটি মামলাও করে আবুল কাশেমের পরিবার।
কিন্তু দুই পার্টনারের ৩০ লাখ টাকা আজও দেয়নি চেয়ারম্যান জান মোহাম্মাদ। অর্থাৎ এখানে সময় অতিবাহিত হলেও টাকা না দিয়ে জোর করে মাছ চাষ করছে বলে ভুক্তভোগীদের দাবী। বিল/পুকুরটি নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে হতাহত ও একাধিকবার ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। যা বর্তমানে বিষয়টি চরম পর্যায়ে রয়েছে। এবিষয়ে ৫০% শেয়ারের মালিক মারুফ হাসানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি ও মাবুদ সরকার অনিক দুই পার্টনার চেয়ারম্যানের নিকট ৪০ লাখ টাকায় পুকুরটি বিক্রয় করি।
প্রাথমিক ১০ লাখ টাকা দেওয়ার পর আর কোন টাকা দেয়নি। পরে আরেক পার্টনার আবুল কাশেমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, উক্ত পুকুরের আমার অংশ জবর দখল করে নিয়েছে চেয়ারম্যান। সে টাকা না দিয়ে বিভিন্ন পায়তারা করছেন। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দিয়েছেন। আমার পুকুর আমি মাছ চাষ করতে পারছিনা। আমি বলবো, হয় সে নায্যমুল্য দিয়ে পুকুর কিনে নিবে অথবা সে যে টাকা দিয়েছে তা ফেরত নিয়ে এখানে শান্তি শৃংখলা ফিরিয়ে দিবে।