মো.আককাস আলী: নওগাঁয় নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে চৌবাড়িয়া ও সতিহাট থেকে গরু-ছাগলে অন্তত ১২ লাখ টাকা অতিরিক্ত টোল আদায় অভিযোগ উঠেছে ইজারাদার ও তাঁদের লোকজন বিরুদ্ধে।
এছাড়া ইজারাদারের লাঠিয়াল বাহিনীও চাঁদাবাজি করেছে আরও অন্তত ৫০ হাজার টাকা। একে নিরব চাঁদাবাজি বলছেন ভুক্তভোগী ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পশুর হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকেই খাজনা আদায় করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ইজারাদারের লাঠিয়াল বাহিনীকেও চাঁদা না দিয়ে হাট থেকে বের হওয়ার উপায় নেই।
এসবের কারণে দুরদুরান্তের অনেক ব্যবসায়ী আর হাটে আসছেন না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বাংলা ১৪২৯ সনের জন্য ৫ কোটি ২১ লাখ টাকায় চৌবাড়িয়া হাট ও ১ কোটি ৯ লাখ টাকায় সতিহাট ইজারা প্রদান করা হয়। দরপত্রের মাধ্যমে চৌবাড়িয়া হাটের ইজারা লাভ করেন রাজশাহীর সপুরা এলাকার আবুল বাশার সুজন এবং সতিহাটের ইজারা পান নওগাঁ শহরের মাজেদুল ইসলাম।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রতিটি গরুতে ৫০০ টাকা ও ছাগলে ২০০ টাকা করে টোল আদায়ের সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। বছরের শুরু থেকেই প্রতিটি হাটে টোল আদায়ের সরকারি তালিকা টাঙাতে নির্দেশনার দেওয়া হয়েছে ইজারাদারদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বছরের প্রথম সপ্তাহে চৌবাড়িয়া হাটে অন্তত ৩ হাজার গরু বেচাকেনা হয়েছে। সতিহাটে বেচাকেনা হয়েছে অন্তত ৫০০ গরু। এ দুই হাটে ছাগল বিক্রি হয়েছে কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০। একটি গরুতে সরকারি নির্দেশনা থেকে ২৫০ টাকা ও খাসিতে ২০০ টাকা অতিরিক্ত খাজনা আদায় করেছেন ইজারাদার ও তাঁদের লোকজন। যার পরিমাণ দাঁড়ায় অন্তত ১২ লাখ টাকা।
চৌবাড়িয়া হাটে গরু কিনতে আসা রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গাঙ্গোপাড়া এলাকার বসিন্দা বাহার আলী বলেন, হাটে গাভী-বাছুর কিনে তাঁকে খাজনা দিতে হয়েছে ১৫০০ টাকা। তিনি আরও বলেন, গরু কিনে হাট থেকে বের হতে লাঠিয়াল বাহিনীকে দিতে হয়েছে আরও ২০ টাকা। এখানে তাঁদের কোনো কিছুই করার নেই।
উপজেলার পলাশবাড়ী গ্রামের রাশেদুল ইসলাম বলেন, একজোড়া গরু কিনে তাঁকে খাজনা দিতে হয়েছে ১২০০ টাকা। বিক্রেতার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে আরও ৩০০ টাকা। একই গ্রামের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক হাটে একটি বলদ গরু বিক্রি করায় গুনতে হয়েছে ১৫০ টাকা খাজনা।
এদিকে গত মঙ্গলবার সতিহাটেও একইভাবে প্রতিটি গরুতে ৭৫০ টাকা ও খাসিতে ৪০০ টাকা হারে খাজনা আদায় করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সিপিবি মান্দা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সোবহান বলেন, চৌবাড়িয়াসহ বিভিন্ন পশুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হচ্ছে। বিষয়টি ইউএনও মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে। এরপরও অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধ না হলে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে চৌবাড়িয়া হাটের ইজারাদার আবুল বাশার সুজন বলেন, সাক্ষাতে কথা হবে জানিয়ে মোবাইলফোনের সংযোগ কেটে দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু বাক্কার সিদ্দিক অতিরিক্তি টোল আদায়ের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। আগামি হাটে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।