কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের কল্যানপুরে তাছেরের দরবার নামে পরিচিত এক দরবারের খাদেম কে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করে খুনের অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সুত্র ও প্রত্যাক্ষদর্শীদের বর্ননায় জানা গেছে, রোববার সকালে দরবারে রিসালাত মুজাদ্দেদিয়া দরবারে চরদিয়াড় (অনুসারীদের ভাষায়) -এর কড়া নিরাপত্তা বেষ্টিত এলাকায় শারীরিক ভাবে নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হোন দৌলতপুর উপজেলার রিফায়েতপুর ইউনিয়নের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রাশেদ।
আনুমানিক ৩২ বছর বয়সী রাশেদ ওই দরবারের নিরাপত্তাকর্মী হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন। দরবারের নির্ধারিত নান্দনিক ভাব সম্পন্ন এলাকায় এখন নিয়মিত বসবাস করেন ১২ থেকে ১৫ জন স্বেচ্ছা সেবক। করোনা কালের কারনে এখানে এখন তুলনামূলক কম মানুষের যাতায়াত। দরবারের মূল ফটকে ঢুকতে জাকের ভাই ( অনুসারিদের সম্বোধন) ছাড়া যে কাউকেই নিরাপত্তা বলয়ের কঠিন পরীক্ষা পার হতে হয় নিয়মিত। এমন পরিবেশের পিছনে নদীর কোলে গড়া আছে তিন-চারটি টিনের ঘর, নীচে বসতে হায় মাটিতে মাদুর পেতে। যেখানে রাতের আয়েশ চলে, চা সিগারেট আর অন্যান্যে। দরবারে অবস্থানকারীদের বক্তব্যে জানাগেলো এখানেই নির্যাতন করা হয়েছে নিহত রাশেদ কে। তবে আঘাত করতে না দেখলেও ওইসময় উপস্থিতদের বক্তব্য অনুসারে, সকলে শুধু দেখেছেন রক্তাক্ত মুমূর্ষু রাশেদ কে।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে গুরুতর আহতাবস্থায় রাশেদের আশপাশে থাকা জাকের ভাই ও খাদেমদের নাম।
শারীরিক নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ খোদ রাশেদের পরিবারের। কিন্তু, রাশেদ কে রক্তাক্ত দেখার কথা না জানালেও, অসুস্থ রাশেদ কে দৌলতপুরের পার্শ্ববর্তী উপজেলার হাসপাতালে নিতে জরুরি ভিত্তিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দরবারের হুজুর তাছের।
ঘটনা আরেকটু সন্দেহ জাগায় তখন, যখন জানা যায় ১৫টিরও বেশি সিসি টিভি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এলাকার গত কয়েকদিনের ফুটেজ নাকি মুছে গেছে স্বয়ংক্রিয় ভাবে।
রহস্যজনক এ ঘটনা এখন নানান প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে এমন দাবি দরবারের হুজুর তাছেরের। তিনি বলেন, খোদ আমার ভিতরের লোকদেরও সন্দেহের বাইরে রাখছি না।
দরবার সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র জানায় সম্প্রতি একটি মোবাইল ফোন চুরি আর পারিপার্শ্বিক গন্ডগোলের ঘটনাও রয়েছে দরবারে। প্রচলিত আছে নানা অপরাধে নির্যাতনের কথা।
তবে দুপুরের আগেই ঘটনা শেষের পর দরবারের পক্ষ থেকে পুলিশ কে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হয়েছে বলেও নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে।
দৌলতপুর থানার ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ আমরা ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
দীর্ঘ সময় নিয়ে আলামত নষ্ট করা হয়েছে বলেও অভিমত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের।
ঘটনা প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াসির আরাফাত জানান, তথ্য পাওয়ার সাথে সাথেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করেছে। প্রয়োজনীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আশা করছি খুব শিগগিরই ঘটনা উন্মোচিত হবে। দোষীদের বিচারের আওতায় নেয়া হবে। ঘটনাস্থল মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে।
রাশেদের শরীরে পিটিয়ে রক্তাক্ত করার দাগ দেখেছেন বলে জানান দরবারের খাদেম হাবিল। একই বক্তব্য সুরতহালের অপেক্ষায় থাকা লাশের প্রত্যক্ষদর্শীদের।
সংগ্রহে আসা আরও তথ্য বলছে, রাশেদকে রোববার সকাল থেকে বেলা ১০টার পর পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়েছে নানা কায়দায়।