কাজি মোস্তফা রুমি, স্টাফ রিপোর্টার: মহামারি করোনা এখনো মানুষের মনে দগদগে। এরই মাঝে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে আরও এক সংক্রামক ব্যাধি ‘মাঙ্কিপক্স’। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি সহ বিশ্বের ১৫ টি রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে এ মাঙ্কিপক্স।
প্রথমে ১২ টি দেশে সংক্রামক দেখা দিলেও পরে আরও ৩ টি দেশে সংক্রামক বৃদ্ধি পায়। বাকি দেশ গুলো হলো – জার্মানি, ফ্রান্স, ইসরায়েল, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, স্পেন, সুইডেন, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া।
WHO – সতর্কবার্তা দিয়ে বলে, আফ্রিকা থেকে ইউরোপ এবং আমেরিকায় এ সংক্রমক বারতে পারে বলে আশংকা করা হয়। এখন থেকেই সবাইকে সচেতন হতে হবে। তবে এ অবস্থায় বিমান বন্দর ও স্থল বন্দরে সতর্কতা জাড়ি করছে বিশ্ব সাস্থ্যসংস্থা অধিদপ্তর।
বিশেষজ্ঞদের থেকে জানা যায়, ১৯৫৮ সালে প্রথম মাঙ্কি পক্সির সন্ধান মিলে। বানরের শরীরে দেখা যায় এ রোগের প্রাদুর্বাব। এ থেকে এ রোগের নাম রাখা হয় ‘মাঙ্কিপক্স’। ১৯৭০ সালে কঙ্গোতে প্রথম মানব দেহে মাঙ্কি পক্সের সন্ধান মিলে।
জনসাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কাজল কৃষ্ণ বনিক বলেন, ১৯৭০ সালে ১ম জানতে পারা যায় মানুষের মধ্যে মাঙ্কিপক্স। মুলত পুরুষ মানুষ পুরুষ মানুষের যৌনতায় বা সমকামিতায় এ রোগ ঘটতে পারে। তবে তাদের মধ্যে বেশি হলে অন্যদের মধ্যে হবে না এমন কিন্তু বিষয়টা না। এটা অনেকটা স্থল পক্সের মত। তবে এটা মারাত্মক ভার আছে। এক্ষেত্রে সবাইকে সচেতনা গ্রহণ করতে হবে।
তবে চিকিৎসকরা বলেন, মাঙ্কিপক্স আসলে একটা বিশেষ ধরনের বসন্ত রোগ। এটা নতুন কিছু নয়। আফ্রিকার বেশ কিছু এলাকায় দেখা যেত। এখন তা অনত্র ছড়িয়ে পরেছে। তবে এর উপসর্গ হলো বসন্তের মত গুটি, জল ফোসকা, প্রচন্ড জ্বালা পোড়া, জ্বর, কাপুনি, মাথা ব্যথা, পিঠে ও ঘাড়ে ব্যাথা।
সায়ন চক্রবর্তী ( সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ – ভারত) বলেন, উপসর্গ শুরু হয় জ্বর, মাথা ব্যথা, গা-হাত পা ব্যাথা। কিছু দিন পর শরীরে একটা রেশের মত হয়, ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে।
ড. এ এস এম আলমগীর (প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা) বলেন, এটি একটি বসন্ত রোগ। রোগীর সংস্পর্শে না আসলে এ রোগ ছড়ায় না। তবে বিভিন্ন প্রানীর মাধ্যমে এ রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা আছে। এছাড়াও শ্বাসনালী, শরীরে তৈরি হওয়া কোন ক্ষত, নাক কিংবা চোখের মাধ্যমেও অন্যর শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তবে এর ঔষধ বিভিন্ন দেশে অনুমোদন পেলেও সহজলভ্যতা পায়নি।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইউরোপ তথা বিদেশ থেকে যারা আসছে, তাদের শরীরে রেশ জাতীয় কিছু নজরে এলে ভর্তি করতে হবে হাসপাতালে। এছাড়া কোন ব্যক্তির শরীরে এ রোগ দেখলে নমুনা সংগ্রহ করে পাঠাতে হবে। এ রোগে সনাক্ত রোগী ২১ দিন যাদের সংস্পর্শে এসেছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। এরপর প্রোয়জন বুজে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।
যদিও এর চিকিৎসা এখন পর্যন্ত বের হয়নি। তবে এ রোগে সংক্রামক কারীর মৃত্যুর হার এখনও ১০ শতাংশেরও কম। ৩ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে এ রোগী ভালো হয়ে উঠতে পারে।
সর্বোপরি বিশ্ব সাস্থ্যসংস্থা বলেন, আরো বিভিন্ন দেশে মাঙ্কিপক্স এর সংক্রামক বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে আতঙ্কিত হবার কিছু নাই। মারাত্বক আকার ধারন করলেও কোভিড-১৯ এর মত মৃত্যু দেখাবেনা। এক্ষেত্রে সবাইকে সচেতনা গ্রহন করতে হবে।