রেজা মাহমুদ, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি: পাতার ফাঁকে ফাঁকে কফি ফল। আর সেই ফলের গন্ধে ভীড় করছেন মানুষসহ মৌমাছিরা। কফির এই চিত্র উত্তরের জেলা নীলফামারীতে। সেখানে ক্রমশ সম্ভাবনার ফসল হয়ে উঠছে কফি। পরীক্ষামূলকভাবে চাষে সফলতার পর কিশোরগঞ্জ ও জলঢাকায় শুরু হয়েছে বানিজ্যিক চাষাবাদ। দিন দিন চাষের পরিধি বাড়ছে।
এখানকার উৎপাদিত কফির চারা যাচ্ছে সারা দেশে। এছাড়া কফির ফুল থেকে মধু চাষের সম্ভাবনা সৃস্টি হয়েছে। স্বল্প সময়ে এখানকার কফি বিদেশে রপ্তানী করা যাবে বলে দাবী চাষীদের। জেলার ওই দুই উপজেলায় তিন জন কফি চাষ করছেন। এদের মধ্যে একজন শিক্ষক ও গৃহিনীও রয়েছেন। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ উপজেলা সদরের মুন্সিপাড়া গ্রামের আবদুল কুদ্দুস নামের এক নার্সারীর মালিক প্রথম কফি চাষ শুরু করেন।
কক্সবাজার থেকে ২০০৯ সালে ২০ টাকা দরে ১৫০টি কফির চারা সংগ্রহ করেন তিনি। সংগ্রহকৃত চারাগুলো ৪ শতাংশ জমিতে রোপন করেন। তিন বছরের মাথায় ফল আসতে শুরু করে। বর্তমানে তার বাগানে এক থেকে ছয় ফুট দৈর্ঘ্যরে চারা আছে, প্রতি ফুট চারার মূল্য এক শ থেকে দেড়শ টাকা। এ ব্যাপারে আব্দুল কুদ্দুস বলেন, স্বল্প পরিসরে এলাকায় বিক্রি করতে শুরু করি।
এখন আমি কফির চারা বিক্রির দিকে বেশি নজর দিয়েছি। আমার বাগানের চারা দেশের ৬৪ জেলায় যাচ্ছে। প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ টাকার চারা বিক্রির কথাও জানালেন আবদুল কুদ্দুস। একই উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের কাছারীপাড়া গ্রামের সুলতান আলী ২০১৯ সালে ৮ শতাংশ জমিতে কফি চাষ করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে তাঁর ৯০টি গাছের মধ্যে ৮০টিতে ফল এসেছে। তিনি আরও জানান, একটি বেসরকারি সংস্থার দেওয়া কফিগাছের চারা এবং আর্থিক সহযোগিতায় তিনি কফি চাষ করেছেন।
ফলন দেখে মনে হচ্ছে, লাভ হবে। অন্যদিকে জেলার জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের সুনগর গ্রামের মোছাম্মদ খাদিজা আক্তার গৃহিনীর বড় ছেলের (নর্দান ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থী) পরামর্শে ২০১৯ সালে ৪০ শতাংশ জমিতে কফির বাগান করেছেন। ওই বাগানে এখন ফল আসতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘আমার চার একর জমির ওপর বাড়ি এবং বিভিন্ন ফলের বাগান করেছি। ওই বাগানের ৪০ শতাংশ জায়গায় ৫৮৬টি কফিগাছ আছে। এগুলোর মধ্যে ২৪৬টি গাছে ফল এসেছে।
ফলনও ভালোই হয়েছে। কৃষি বিভাগের লোকজন প্রতিনিয়ত এসে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে ওই ফল সংগ্রহ কীভাবে হবে, সেটি জানার চেষ্টা করছি।’ ব্যাপক আকারে এর চাষ শুরু না হওয়ায় প্রতি বিঘায় লাভ কেমন হবে, এ বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারছেন না কফিচাষিরা। তবে স্থানীয় বাজারে কফি বাজারজাত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, কফি সাধারণত পাহাড়ি ফসল।
উঁচু এবং যেখানে পানি জমে না থাকে এমন সমতল জমিতে কফি চাষ করা যাবে। নীলফামারীর মাটি বেলে-দোঁআশ হওয়ায় এই মাটি কফি চাষের উপযোগী। জেলায় তিনজন কৃষক ইতিমধ্যে ৫২ শতাংশ জমিতে অ্যারাবিয়ান জাতের কফি চাষ করেছেন। তাঁদের গাছে ফলও ভালো এসেছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে এই জেলায় আগামী এক মাসের মধ্যে আমরা একশ বিঘা জমিতে রোবাস্টা জাতের কফি চাষের পরিকল্পনা করেছি। এর ফলন বেশি পাওয়া যায়। আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছি। কৃষি সম্প্রসারণবিভাগ তাঁদের বিনা মূল্যে চারা সরবরাহ করবে।