রাজশাহী ব্যুরো: আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী কাজে প্রশাসন যখন ব্যস্ত, তখন সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অবৈধ পুকুর খনন নিয়ে ব্যস্ত ভূমি খেকো অসাধু চক্র। রাত হলেই এক্সে লেটার বা ভেকু মেশিনের বিকট শব্দ। ক্লান্ত দেহের আচমকা ঘুম ভাংছে সাধারণ জনগণের। ক্ষতি হচ্ছে কৃষকের তিন ফসলি জমি। শুধু তাই নয় রাতারাতি উধাও হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। এমন অভিযোগপত্র হাতে নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বাগমারা উপজেলার গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের শান্তিপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষকরা। শান্তিপাড়া গ্রামকে অশান্ত করতে কৃষকদের মোটা অংকের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ১২ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করছেন করখন্ড গ্রামের মুনছুরের ছেলে ও ক্ষুদে বিএনপি নেতা বিদ্যুৎ। শান্তিপাড়ার সেই পুকুর খননের শুরুতে ঐ এলাকার কৃষকরা পুকুর খনন বন্ধে দীর্ঘ সাক্ষরিত অভিযোগপত্র উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর দেন। তাতে সাময়িক বাঁধা দিলেও পরবর্তীতে হাটগাঙ্গোপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে আবারও পুকুর খনন শুরু হয়। সেখানে কোন সাংবাদিক উপস্থিত হলেই, তাকে ম্যানেজ করতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন পুলিশ। লোভনীয় অফার দিয়ে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করছেন গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের বিট অফিসার (পুলিশ)। এই ভাবে বাগমারার পশ্চিম অংশে দেদার্সে চলছে অবৈধ পুকুর খনন। আরেক খননকারি শহিদুল। সে মজোপাড়া নিমাই বিলে প্রায় ১৫ বিঘা পুকুর খনন করছেন। কয়েকদিন আগে বানাইপুর বিলে খনন করেছেন ইটভাটা মালিক জিয়া। তবে অভিযোগ পাওয়া শান্তিপাড়া গ্রামে গিয়ে তাদের দেওয়া অভিযোগের সত্যতা মিলেছে মিডিয়াকরামীদের কাছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, পুকুর খনন করতে গিয়ে পাকা রাস্তার ধারে সরকারি কালভার্ট বন্ধ করা হয়েছে। দিনের আলোয় গাড়ি গুলো রাখা হয়েছে পাশের বাঁশঝাড়ে। স্থানীয়দের সাথে কথা বললে, তাদের দাবী এই পুকুর খনন বন্ধে কেউ এগিয়ে আসছে না। আমরা বলতে গেলে মারধরের উদ্দেশ্য তেড়ে আসছে বিদ্যুৎ ও তার লোকজন। পরে আরেক পুকুর খনন নিয়ে শহিদুলের সাথে কথা বললে সে জানায়, সকলকে ম্যানেজ করে করছি। আপনারা এসেছেন চা এর খরচ দিচ্ছি চলে যান। পরে হাটগাঙ্গোপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি এব্যাপারে জানিনা। আপনার এলাকায় এমন কার্যক্রম চলছে আর আপনি জানেন না, বিষয়টি কেমন হলোনা? তাহলে কি আপনি এলাকার খোঁজ খবর রাখেন না? এমন প্রশ্নে তিনি বিব্রত হয়ে প্রতিবেদককে জানান আমি বিষটি দেখছি ভাই। উল্লেখ্য, সরকারের জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা ও মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রীট পিটিশন নং ৪৩৫৩/ ২০১৭ এর গত ৩/৪ /২০১৭ ইং তারিখের প্রদত্ত আদেশ। ঐ আদেশে সুস্পষ্টভাবে জেলা প্রশাসক রাজশাহী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাজশাহী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি ) বাগমারকে কৃষি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন বন্ধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আদালতের উক্ত আদেশ বর্তমানে যথারীতি বলবৎ ও কার্যকর রয়েছে। অথচ এমন বিধিনিষেধ থাকলেও তোয়াক্কা করছেন না ফসলি জমি নষ্টকারি পুকুর খননকারি চক্র। এদিকে নিজেদের পকেট ভারি করতে পুলিশ এই কাজে সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এলাকার সচেতন মহলের। এব্যাপারে রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুর রহমান, পিপিএম এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, পুলিশ এবিষয়টি দেখে না। পুকুর বা জমি সংক্রান্ত বিষয় ইউএনও বা এসিল্যান্ড দেখেন। আপনি তাদের কাছে অভিযোগ দিতে বলেন। পরে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার বিষয়টি জানা নাই। একটু তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন। আমি ব্যবস্থা নিব। তবে আগামী নির্বাচন নিয়ে সবাই একটু ব্যস্ত আছেন। তারপরও আমি দেখছি।