রাজশাহী ব্যুরো: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৭ দিন বাঁকী। দিন যতই গড়াচ্ছে নির্বাচনী উত্তেজনা ততই বাড়ছে। রাজশাহীর ৬ টি আসনের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াই হবে রাজশাহী ৪ (বাগমারা) আসনে। এই আসনটিতে দলীয় নমিনেশন ঘোষনার পর থেকে আওয়ামী কর্মীদের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। যার ফলশ্রুতিতে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, মারধর, অগ্নিসংযোগসহ অফিস ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। আসনটিতে জেলা প্রশাসক ও এসপিকে দেয়া প্রতিশ্রুতিও মানা হচ্ছে না। এতে শান্ত বাগমারা আবারো অশান্ত হয়ে উঠতে থাকে। পরে নির্বাচনী পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে গত ২৫ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সংঘাতে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু দিন না গড়াতেই প্রতিশ্রুতি ভেঙে আবারও শুরু হয়েছে হামলা মামলা। রক্তাক্ত বাগমারায় শান্তির সুবাতাস এলেও নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারো অশান্ত হয়ে উঠেছে অঞ্চলটি। এখন এই আসনটিতে প্রতিদিন নির্বাচনী অফিস ভাংচুরসহ মামলা যেন নিত্যদিনের সঙ্গি। এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার কয়েক দিন আগে সংসদ সদস্য এনামুল হকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শিকদারীর সালেহা-ইমারত কোল্ড স্টোরেজ এ উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত মতবিনিময় সভা করেন ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপি। এসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার। ঐ সভায় নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য একসঙ্গে মাঠে কাজ করার অঙ্গীকার করেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। সভা শেষে সংসদ সদস্য এনামুল হক মুষ্টি হাতে নেতা-কর্মীদের শপথ বাক্য পাঠ করান। যেখানে তিনি দলের নেতা-কর্মীদের নৌকার বিজয় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে না ফেরার অঙ্গীকার করান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, তার সামনে থাকা দলের বিভিন্ন স্তরের শতাধিক নেতা-কর্মী একই ভঙ্গিতে শপথ করেন। ওই ভিডিওতে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি শপথ করিতেছি যে, দলের নেতা হিসেবে, আমার ওপর যে কোনো দায়িত্ব অর্পিত হবে, তা সুষ্ঠু ভাবে পালন করিবো। এর কোনো ব্যত্যয় হবে না, আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের নৌকা প্রতীক বিজয় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবো না।’ অথচ রাজনৈতিক পরিক্রমায় দলীয় সমর্থন হারান ১৫ বছরের রাজত্ব করা বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। এবার এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নটি পান উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। নিজের সম্মান বাঁচাতে দলের বাইরে থেকে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজেকে জাহির করেন এমপি এনামুল। আগামী নির্বাচনে এনামুল হক কাঁচি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। আসনটিতে রয়েছে বেশ কয়েকজন প্রার্থী। তবে এ আসনে আলোচনায় রয়েছে আওয়ামী লীগেরই দুই প্রার্থী। প্রতীক বরাদ্দের পর গত ১৯ ডিসেম্বর এনামুল হক তার অনুসারী নিয়ে উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ নিউমার্কেট এলাকায় পথসভা করেন। সেখানে তিনি নৌকার বদলে নিজের কাঁচি মার্কায় ভোট চান। তবে এনামুল হকের কয়েকজন সমর্থক উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সংসদ সদস্য এনামুল হকের ওই শপথের কারণে তারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। ভোটারদের কাছে গেলে পাল্টা কথা শুনতে হচ্ছে। সংসদ সদস্যের সঙ্গে শপথ নেওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার আবুল বলেন, তিনিসহ দলের মূল ধারার নেতারা শপথ রক্ষা করে চলেছেন। নেতারা ঐক্যবদ্ধ ভাবে শপথ রক্ষা করে নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। সংসদ সদস্য এনামুল হকের শপথ অনুসারে নৌকার বিজয় নিয়েই তারা ঘরে ফিরবেন। শপথ বাক্য পাঠ করা এনামুল হকের অনুসারী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম মীর বলেন, সংসদ সদস্য তাদের যে শপথ পাঠ করেছেন, তা ভাঙার উপায় নেই, তাই নৌকার পক্ষেই কাজ করছেন। আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, সংসদ সদস্য এনামুল হকের শপথ রক্ষা করা উচিত, তিনি তা ভেঙে কাঁচিতে ভোট চেয়েছেন। এটা প্রতারণা ছাড়া কিছুই না। তবে এনামুল হক সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ওই সময়ের পরিস্থিতিতে তিনি শপথ করিয়েছিলেন। এই বিষয়ে আর কিছু বলতে চাননি তিনি। তবে দলের সিংহভাগ নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান করছে। এজন্য বিপাকে পড়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক। এছাড়াও বিজয়ের আশা নিয়ে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রতীকের অন্যান্য প্রার্থীরা। তবে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দী অবস্থানে রয়েছেন আ’লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ ও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী (ড্যামি) এনামুল হক। এছাড়াও লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আবু তালেব প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় জোরালো প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই সংসদীয় আসনে মোট ছয়জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধ করবেন তারা হলেন, আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাচি প্রতীক নিয়ে এনামুল হক, মাথাল প্রতীক নিয়ে বাবুল হোসেন, জাতীয় পার্টি মনোনিত লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে আবু তালেব প্রামাণিক , বিএনএম মনোনিত নোঙ্গর প্রতীক নিয়ে সাইফুল ইসলাম রায়হান ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) মনোনীত গনতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ সমর্থিত আম প্রতীক নিয়ে জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না। তবে এদের মধ্যে তরুন প্রার্থী হিসেবে অধ্যক্ষ কালাম সাধারণ ভোটারদের মাঝে ব্যাপক প্রচার-প্রচারনা চালাচ্ছেন এবং জনসমর্থনে সবার থেকে এগিয়ে রয়েছেন।