রুয়েট কর্মকর্তার প্রাণনাশের হুমকি রাজাকারের শ্যালকের পক্ষ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে
রাজশাহী ব্যুরোঃ রাজাকারের শ্যালক ও বিএনপি নেতার ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) পরিষদ শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার শাহ মো. আলবেরুনী ফারুকের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। সম্প্রতি মোহনপুর থানায় জিডিটি করেছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শ্রম বিষয়ক সম্পাদক সুরঞ্জিত সরকার।
জানা যায়, রাজশাহীর মোহনপুর গার্লস ডিগ্রি কলেজে সভাপতি পদের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার নেন শাহ মো. আলবেরুনী ফারুকের বন্ধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক একরামুল হক। কিন্তু তার (একরামুল হক) বড় ভাই আলতাব হোসেন মোহনপুর উপজেলার রায়ঘাটি ইউনিয়ন বিএনপির তিনবারের সাবেক সভাপতি এবং তার আপন ভগ্নিপতি ব্যাংকার আয়াজ উদ্দিন তালিকাভুক্ত রাজাকার বলে সাংবাদিকদের জানান সুরঞ্জিত সরকার, ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বন্ধুর পক্ষ নিয়ে গত ৯ এপ্রিল রাত পৌনে ৮টায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পরিচয় দিয়ে মোবাইলে সুরঞ্জিত সরকারকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজসহ প্রাণনাশের হুমকি দেন আলবেরুনী ফারুক। মোবাইল ফোনে রেকড করে তা প্রমাণ হিসেবে রেখে মোহনপুর থানায় জিডি করে সুরঞ্জিত। এছাড়া, তাদের কথপকথনের সেই অডিওটাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অভিযুক্ত শাহ মো. আলবেরুনী ফারুক মোহনপুর উপজেলার সইপাড়া গ্রামের মো. আব্দুস ছামাদ শাহর ছেলে। তিনি রুয়েটের পরিষদ শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি এর আগেও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। তার মধ্যে ২০১২ সালে রুয়েটে পিএস টু ভিসি পদে চাকরির লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় মৌখিক পরীক্ষায় নির্বাচিত হননি। তবুও তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নগ্নভাবে ব্যবহার করে তৎকালীন উপাচার্যকে নানাভাবে হুমকি ও চাপ প্রয়োগে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ওই পদে নিজের চাকরি বাগিয়ে নেয়া, চাকরি পেয়েই রুয়েটে নিজের আধিপত্ত্ব বিস্তারের অংশ হিসেবে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজী, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অশালীন আচরণসহ ক্যাম্পাসে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দেয়া, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ক্যাম্পাসে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাওয়ায় রুয়েটের শুদ্ধাচার কৌশল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত ‘আকশ্মিক পরিদর্শন কমিটি’র সদস্যদের হুমকি প্রদান। এছাড়া, কাফনের কাপড় পাঠিয়ে রুয়েটের ৯ শিক্ষক কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকির অন্যতম সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে আদালতে তলব করা হয়। এবার এক আওয়ামী লীগ নেতাকে হুমকি দিয়ে তিনি আবারও আলোচনায় এসেছেন।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত আলবেরুনী ফারুক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া একটা এলাকার সুনাম ও ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু আমার বন্ধু রাবির দর্শন বিভাগের শিক্ষক একরামুল হককে নিয়ে সুরঞ্জিত সরকার বাজে কথা বলেছে। তাই আমি তাকে বলেছি, এটা ঠিক না। একরাম ছাত্রলীগ করা ছেলে আর আওয়ামী লীগের আমলেই নিয়োগ পাওয়া।
তিনি আরও বলেন, যে ভাষায় আমি কথা বলেছি তাতে জিডি হয় না। তবে সে নিজেই নিজের বাড়িতে আগুন দিয়ে থানায় জিডি করা মানুষ। তার জাতপাত নাই, সে হাফ হিন্দু, হাফ মুসলমান। সে মুসলমান মেয়েকে বিয়ে করে মুসলমান হয়েছিল। সেই কাগজপত্রও আছে। আর জিডির বিষয়ে তদন্ত হলে হবে আমার কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু থানা থেকে আমাকে এখনও কিছু বলা হয়নি।