রাজশাহী ব্যুরো : বেতন ভাতার দাবীতে অফিস ঘেরাও করেছেন “আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম” (পিইডিপি-৪) প্রকল্পের শিক্ষিকারা। পিইডিপি-৪ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প। প্রকল্পটি ২০২০ সালে ইকো-সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) পেলেও করোনা ভাইরাস বিপর্যয়ের কারনে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়। পরে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হয়। এতে অসংখ্য ঝরে পড়া শিশুদের পড়াশোনার সুযোগ সৃস্টি হয়। সেই প্রকল্প থেকে ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সেখানে কর্মরত শিক্ষিকারা।
মঙ্গলবার (৩ জুন) দুপুরে জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো (জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবস্থিত) প্রায় ১০০ জন শিক্ষিকা এই ঘেরাও কর্মসূচি করেন। এসময় জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো এর সহকারি পরিচালক রায়হানুর রহমানের সাথে শিক্ষিকারা বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। শিক্ষিকাদের দাবি, প্রকল্প শেষ হয়েছে ৬ মাস। দেয়া হয়নি বেতন ভাতা ও ঘর ভাড়া, নেওয়া হয়নি কোন শিক্ষিকাদের খোঁজ খবর। বিভিন্ন বরাদ্দ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। তারপরও তারা এতদিন চুপচাপ ছিল। ৭ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে শিক্ষকদের। পাওনা টাকার দাবি নিয়ে অসংখ্য বার বসা হয়েছে। অবশেষে জুনের ২ তারিখে সম্পুর্ন বকেয়া বেতন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো এর সহকারি পরিচালক রায়হানুর রহমান ও ইএসডিও অফিস। কিন্তু ৫ মাসের বেতন দিলে শিক্ষিকারা ক্ষুব্ধ হয়। এরপর সকলে এক হয়ে জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর অফিস ঘেরাও এর সিদ্ধান্ত নেয়। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষকদের সাথে কথা বললে তারা নানা অভিযোগ ও অসংগতি তুলে ধরেন।
তারা বলেন, বেতনের নেওয়ার জন্য প্রতি মাসে বীমার নাম করে ২০০ টাকা নেয় ইএসডিও। ক্লাসরুম ভাড়া বাবদ ১২০০ টাকা দিলেও সেখান থেকে ২০০ টাকা করে কেটে নেয়। শিশুদের জন্য প্রতিমাসে খাতা কলম বরাদ্দ থাকলেও বছরে একটা করে খাতা দেওয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য প্রতিমাসে ( ৩০০ টাকা মহানগর ও জেলা ১৩০ টাকা ) উপবৃত্তি বরাদ্দ দেয়ার নাম করে সাক্ষর করিয়ে তা আর দেয়া হয়নি। শিশুদের জন্য পোশাক বরাদ্দ থাকলেও মাত্র একবার দেয়া হয়েছে। আপনাদের বেতন কত টাকা দেয়া হয় জানতে চাইলে তারা বলেন, ৫,০০০ জেলা ১০,০০০ মহানগর।
আজকে আপনারা কেন এই অফিসে এসেছেন? প্রশ্নের উত্তরে তারা জানান, আমাদের সাত মাসের বেতন দেয়ার কথা ছিল, কিন্তু আমাদের ৫ মাসের বেতন দিয়েছে। প্রকল্প শেষ হয়েছে ৬ মাস পার হয়েছে। অথচ আমাদের বেতন দেয়নি।
এমন অভিযোগের ব্যাপারে জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো রায়হানুর রহমান এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি প্রথমে ৫ মাসের বেতন দিয়েছিলাম কিন্তু তারা মানেনি, বর্তমানে তাদের (শিক্ষিকা) সাথে কথা বলে ৭ মাসের বেতন পরিশোধ করে দিয়েছি। আপাতত আর ঝামেলা নাই। শিশুদের জন্য উপবৃত্তি, শিক্ষিকাদের থেকে বীমার নামে টাকা ২০০ টাকা কর্তন, শিশুরা খাতা না পাওয়া, সঠিকভাবে ঘর ভাড়া না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি এখানে নতুন এসেছি, তাই অনেক কিছু জানিনা। তবে তারা এর আগে এগুলোর ব্যাপারে জানাই নি। তবে শিক্ষিকাদের থেকে ২০০ টাকা করে কর্তন করা হয় এটা জানি। ইএসডিও অফিস আপদকালিন টাকা কর্তন করে বলে আমার জানা।
শিশুরা যে শিক্ষা উপকরন থেকে বঞ্চিত হয়েছে, এব্যাপারে আপনি জানেন কি না? উত্তরে তিনি জানান, কার্যক্রম পরিদর্শনে গেলে সব কিছু ঠিক ঠাক দেখেছি। তাদের কোন অভিযোগ ছিলনা। পরে আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রামের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় অফিসার ও ইএসডিও এর ফোকাল পার্সন জামিনি কুমার রায়ের মুঠোফোনে বারবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। উল্লেখ্য, প্রায় ২৮ বছর যাবত ঝরে পড়া শিশুদের নিয়ে কাজ করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। শুরুতে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম করলেও পরিবর্তীতে বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।