অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সম্মেলন শেষে জেলা বিএনপি ঘোষণা করেনি কোন কমিটি’

বোয়ালমারী উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনে ৯ বছর পরে কর্মী সম্মেলন

বোয়ালমারী  (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : নয় বছর পরে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কর্মী সম্মেলনে উৎসবমূখর পরিবেশে লক্ষ্য করা গেছে।

সোমবার (১৬ জুন) জেলা পরিষদ পাঁচশো আসন বিশিষ্ট অডিটরিয়ামে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সম্মেলনকে ঘিরে দুই ভাগে বিভক্ত উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের শোডাউন, শ্লোগান ও হাততালিতে মুখরিত ছিল কর্মী সম্মেলন এলাকাটি। তবে নতুন নেতৃত্ব তৈরিতে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি সম্মেলনে আসা জেলা বিএনপি। তবে বোয়ালমারীতে বিএনপির দুইপক্ষের কোন্দলের কারণে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সম্মেলন শেষে জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ নতুন কমিটির কোন সদস্যের নাম ঘোষণা করেননি বলে জানা গেছে। পরে কমিটি ঘোষণা করে জানিয়ে দেওয়া হবে ফরিদপুর থেকে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রে থেকে ফরিদপুর জেলা বিএনপির সম্মলন করার জন্য গত ২ জুন একমাসের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তারপর শুরু হয় বিলুপ্ত হওয়া বিভিন্ন উপজেলা, পৌর ইউনিট কমিটি গঠন করার। আজ সোমবার বোয়ালমারী উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠনের লক্ষে কর্মী সম্মেলনে জেলার নেতৃবৃন্দ যাওয়ার পর বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। উপজেলা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত। একটি অংশের নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সভাপতি ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক স্বতন্ত্র সাংসদ আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী খন্দকার নাসিরুল ইসলাম নাসির মিয়া। আরেকটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী ভিপি শামসুদ্দীন মিয়া ঝুনু। শামসুদ্দীন মিয়া বিভক্ত কেন্দ্রীয় বিএনপির শামা ওবায়েদ রিংকু গ্রুপের অনুসারি।  অপর দিকে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম সাবেক মন্ত্রী মরহুম চৌধুরী কামাল ইউসুফের মেয়ে ফরিদপুর সদর আসনের সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী চৌধুরী নায়াব ইউসুফের অনুসারী। এ সম্মেলনকে ঘিরে উপজেলা বিএনপির দুইপক্ষের মধ্যে শ্লোগান পাল্টা শ্লোগানে মুখরিত ছিল অডিটরিয়াম মিলনায়তনসহ আশপাশের এলাকা। সম্মেলনকে ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ প্রশাসনের সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে মিলনায়তন চত্ত্বর মুখরিত হয়ে ওঠে। আহ্বায়ক পদে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দী তাদের সমর্থকদের জন্য দুপুরের খাবারের (প্যাকেট) ব্যবস্থা করেন। বিএনপি নেতা শামচুউদ্দিন ঝুনু মিয়ার সমর্থকদের জন্য বোয়ালমারী ওয়াপদার মোড় এলাকায় বিএনপির অস্থায়ী কাযালয়ের সামনে এবং খন্দকার নাসিরুল ইসলামের পক্ষে বোয়ালমারী-মাঝকান্দি আন্চলিক মহাসড়কের পাশে কামারগ্রাম এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সঞ্জয় সাহার অফিস থেকে খাবার বিতরণ করা হয়। সম্মেলনে ফরিদপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির কর্মী সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আফজাল হোসেন খানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী, সদস্য সচিব এ কে এম কিবরিয়া ও যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন।

কর্মী সম্মেলন পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শামীম হোসেন। অনুষ্ঠানস্থলে শুধু বক্তব্যই হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। তবে জেলা নেতাদের হাতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব হিসেবে তিনটি খসড়া কমিটি তুলে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর একটির আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় কৃষক দল নেতা খন্দকার নাসিরুল ও সদস্য সচিব উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, অপরটির আহ্বায়ক শামসুদ্দীন মিয়া ঝুনু ও সদস্য সচিব উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান। এর বাইরে আরেকটি যে কমিটি জমা দেওয়া হয়েছে সেটার আহ্বায়ক উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খন্দকার রাফিকুল ইসলাম ও সদস্য সচিব উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রশিদ ওরফে হেলাল।

সমাপনি বক্তব্যে কর্মী সম্মেলনর সভাপতি আফজাল হোসেন খান বলেন, জমা পড়া প্রস্তাবিত নাম নিয়ে আমরা ফরিদপুর এসেছি। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে ফরিদপুর থেকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নাম চূড়ান্ত করে জানিয়ে দেওয়া হবে।

এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে এম কিবরিয়া বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে বোয়ালমারীতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি লক্ষে কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের হাতে উপজেলা বিএনপির দায়িত্ব নিতে চান এমন বেশ কয়েকজন নেতার নাম জমা পড়েছে। আমরা দুই একদিন সময় নিয়ে যারা মাঠে ময়দানে এবং আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন তাদের প্রাধান্য দিয়ে ফরিদপুরে বসে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে বোয়ালমারীর নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেওয়া হবে।