রাজশাহী ব্যুরোঃ আয় ও ব্যয় সমপরিমাণ ধরে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ হাজার ৭ কোটি ১৯ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে।
১৯ জুন শনিবার দুপুর ২টায় নগর ভবনের সিটি হলরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বাজেট ঘোষণা দেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের অর্থ ও সংস্থাপন স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। এরআগে সকালে সিটি কর্পোরেশনের বিশেষ সাধারণ সভায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ও ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন হয়।
সংবাদ সম্মেনের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যবৃন্দ, জাতীয় চার নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ, শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন রাসিক মেয়র।
সংবাদ সম্মেলনে রাসিক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৮০ কোটি ২২ লক্ষ ৮৯হাজার ৫৩৬ টাকা ১৭ পয়সা মাত্র। সংশোধিত বাজেটে এর আকার দাঁড়িয়েছে ৭৬৯ কোটি ০২ লক্ষ ৯৪ হাজার ৭৪৪ টাকা ৩৬ পয়সা মাত্র। বাজেট বাস্তবায়নের হার ৭১% এর বেশি। যা ইতোপূর্বে কখনও হয়নি। এদিকে আয় ও ব্যয় সমপরিমাণ ধরে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭ কোটি ১৯ লক্ষ ৬৯ হাজার ৩২৩ টাকা ১০ পয়সা মাত্র।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে আমি ও আমার পরিষদ নির্বাচনী প্রতিশ্রæতিসমূহ বাস্তবায়ন এবং রাজশাহীকে সবুজ, পরিচ্ছন্ন, আধুনিক, উন্নত, বাসযোগ্য ও মডেল মহানগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বিগত চার বছর নিরলস পরিশ্রম করে রাজশাহী মহানগরীকে পরিবেশবান্ধব ও বাসযোগ্য নগরীরূপে গড়ে তোলার স্বীকৃতিস্বরূপ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয়ভাবে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে পরিবেশ পদক-২০২১ প্রদান করে পুরস্কৃত করেছেন। এ গৌরব সমগ্র মহানগরবাসীর। আমি ইতোমধ্যে পদকটি প্রিয় রাজশাহীবাসীকে উৎসর্গ করেছি। এছাড়া ১৮৬৭ কোটি টাকার রাজশাহী মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প ১৪.০৬.২০২২ তারিখে একনেক সভায় অনুমোদন হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদ ও অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। মহানগরজুড়ে যে পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে, তার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে রাজশাহী মহানগরীকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশবান্ধব, পরিচ্ছন্ন, বাসযোগ্য, আধুনিক, কর্মচঞ্চল ও আলো ঝলমলে মহানগরীতে পরিণত করা। যার অনেকটাই বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে আমরা করতে পেরেছি। আগামীতে রাজশাহী মহানগরীকে শুধু বাংলাদেশের মধ্যে নয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম মডেল মহানগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এই লক্ষ্য অর্জনে রাজশাহীবাসী ও সম্মানিত কাউন্সিলরবৃন্দের সহযোগিতায় ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছি।
নগরীর উন্নয়ন কর্মকাÐ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ১৬৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে আলুপট্টি মোড় হতে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়ক চারলেন সড়কে উন্নীত, ১৮৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বিমান চত্বর হতে বিহাস পর্যন্ত ৬.৭৯৩ কিলোমিটার ফোরলেন সংযোগ সড়ক, ১২৬ কোটি ৩৯ লাখ ব্যয়ে উপশহর মোড় হতে মালোপাড়া, রাণীবাজার মোড় হয়ে সাগরপাড়া বটতলা মোড় পর্যন্ত সড়ক, নগরীর বিলসিমলা থেকে কাশিয়াডাঙ্গা সড়ক ফোরলেনে উন্নীত করা হয়েছে। সড়কটির উভয় পাশে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাথ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়েছে। সড়কের আইল্যান্ডে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সৌন্দর্য্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর সরণি সড়কটির রক্ষণাবেক্ষণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় ৩৬.৮১ কিলোমিটার নতুন সড়ক, রাস্তা সংস্কার ৫৮.৬৯ কি.মি. ড্রেন ৩৩.৬০ কি.মি এবং ফুটপাত ১২.৪৩ কি.মি কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। এছাড়াও সড়কসমূহে দৃষ্টিনন্দন সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়েছে। মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সোনাদীঘি মোড় হতে সদর হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত সড়কটির দুই পাশে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাথ নির্মাণ এবং প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হয়েছে। কার্পেটিং নতুন সড়ক ৪.৩২ কি.মি. কার্পেটিং রাস্তা সংস্কার ১.৪২কি.মি এবং সিসি রাস্তা ৫৩.২৯ কি.মি. এবং ৩৬.৭২ কি.মি. ড্রেন নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ১৯৩ কোটি ২৯ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ‘রাজশাহী মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণার্থে নর্দমা নির্মাণ (৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৬.৩৬ কিলোমিটার প্রাইমারী, ১৯.২৯ কিলোমিটার সেকেন্ডারি এবং ৬৭.৭৫ কিলোমিটার টারশিয়ারি নর্দমা নির্মিত হয়েছে। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে নর্দমার কাঁদামাটি অপসারণে ৯টি প্রাইমারি নর্দমার পাশে মোট ৮.৬৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় নির্মিত নর্দমাসমূহে মহানগরীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে।
সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চলমান উন্নয়ন কর্মকাÐ তুলে ধরে সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ২৯৩১ কোটি ৬১ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মহানগরীর উন্নয়নে ১২১৫ কোটি ২৬ লাখ টাকার টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১০৪০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় চলমান কাজের সামগ্রিক অগ্রগতি ৫৫%। অবশিষ্ট কাজ আগামী অর্থবছরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করা যায়। মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্থ ও নতুন রাস্তা এবং নর্দমা নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। সিএন্ডবি মোড়ে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল নির্মিত হয়েছে। মহানগরীর যানজট নিরসনে ভদ্রা, শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান চত্ত¡র, বর্ণালী, নতুন বিলসিমলা, বহরমপুর, রাজশাহী কোর্ট এবং নতুনপাড়া রেলওয়ে ক্রসিং-এ বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী ফ্লাইওভার নির্মাণের নক্সা প্রণয়নের কাজ শেষে টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২৫০ কি.মি. কর্পোটিং সড়ক, ২৬৫ কি.মি. সিমেন্ট কনক্রিট সড়ক, ৩৫৬ কি.মি নর্দমা, ১০৪ কি.মি ফুটপাত নির্মাণ কাজ বাস্তবায়িত হবে। এর মধ্যে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে নতুন কার্পেটিং রাস্তা ৯৯কি.মি., কার্পেটিং রাস্তা পূনঃ নির্মান ১০৭ কি.মি. কার্পেটিং রাস্তা প্রশস্তকরণ ৪৫ কি.মি, নতুন সিমেন্ট কনক্রিট ১৮৫ কি.মি. সিমেন্ট কনক্রিট পূন:নির্মাণ ৮০ কি.মি এবং প্রাইমারী ড্রেন ৪.৫ কি.মি. সেকেন্ডারী ড্রেন ৬০ কি.মি. টারসিয়ারী ড্রেন ২৯২ কি.মি. নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পের আওতায় গোরস্থানসমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন, ৪টি কাঁচা বাজার, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, নিরাপদ চলাচলে ফুটপাথ নির্মাণ, প্রাকৃতিক জলাশয় সমূহের উন্নয়ন, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, গণশোচাগার নির্মাণ, ১০টি ফুটওভার ব্রীজ ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে দরপত্র আহবান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ৪টি ওয়ার্ড কার্যালয়-কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে ৬নং ওয়ার্ড কার্যালয় কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। মিঞাপাড়া পাবলিক লাইব্রেরী ও ধর্ম্মসভার অবশিষ্ট কাজের টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৯৩ কোটি ৪৮ লাখ ব্যয়ে তালাইমারী মোড় হতে কাটাখালী বাজার পর্যন্ত ৬ লেন সড়ক, ৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে বন্ধগেট হতে সিটি হাট সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ ও ভদ্রা মোড় নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ চারলেন সড়কের নির্মাণ। ৪ দশমিক ১৭ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সড়কটি প্রশস্ত হবে ৮০ ফুট। ফোরলেনের সড়ক ছাড়াও দুই লেনের অযান্ত্রিক যানবাহন লেন, সড়ক বিভাজক ও দুইপাশে ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ করা হবে। সড়কগুলোর আইল্যান্ডে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সবুজায়ন করা হবে। সড়কটি নির্মাণে অত্র এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। প্রকল্পের আওতায় ৪০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বুধপাড়া রেলক্রসিং এ অবশিষ্ট দুই লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ চলছে। ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৫৫%। রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ১৯টি জলাশয়ের মধ্যে ০৮টি জলাশয়ে মাটি খনন ও সাইট ফিলিং কাজ এগিয়ে চলেছে। নগরীর গোলজারবাগ ঢালান পশ্চিমপ্রান্ত, লক্ষীপুর বক্ষব্যাধী হাসপাতালের সম্মুখের পুকুর, লক্ষীপুর নির্মাণাধীন শিশু হাসপাতালের সম্মুখে, সপুরা গোরস্থান-১ পুকুর, দড়িখরবোনা গোরস্থান, পবা নতুনপাড়া ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পূর্বপাশের্^, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ সংলগ্ন পুকুর, ২৩নং ওয়ার্ডের কালীপুকুর উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঈদগাহ, গোরস্থান, শশ্মানঘাট উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন কাজ এগিয়ে চলেছে। রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মহানগরীর ৪৪টি গোরস্থান, ঈদগাহ উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ২৭টি টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ৯৩.৮২ কোটি টাকা। নগরীর ২ ও ১৬নং ওয়ার্ডে ৬টি গোরস্থান ৫, ১১, ১৩, ১৪, ১৫নং ওয়ার্ডের ৬টি গোরস্থানের অভ্যন্তরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ১৭নং ওয়ার্ডের ১২টি গোরস্থানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ২৩,৫, ১৬নং ওয়ার্ডের মোট ৮টি গোরস্থানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, বিভিন্ন ওয়ার্ডের গোরস্থানের অভ্যন্তরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, রাজশাহী কেন্দ্রীয় ঈদগাহে মাটি ভরাট, বিভিন্ন গোরস্থানে ১৫টি জানাজা সেড ও ২৮টি ওযুখানা নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে।
তিনি আরো বলেন, ২৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৭ হাজার টাকার ‘হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (র.) দরগাহ শরীফের উন্নয়ন প্রকল্প’ অনুমোদিত হয়েছে। ইসলামী ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও ধর্মযাজক হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (র.) দরগাহ শরীফের অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে ভক্ত আসেকান ও মুসল্লিগণের নামাজ আদায়সহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনা নির্বিঘ্নে পালনের সুবিধার্থে দরগাহ শরীফের উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ২৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৭ হাজার টাকার শাহ মখদুম রূপোশ (র.) দরগাহ শরীফের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মসজিদ ও মাজার কমপ্লেক্স নির্মাণে স্থাপত্য নক্সা ও প্রকৌশল নক্সা প্রণয়ন ও নির্মাণ তদারকিতে পরামর্শক নিয়োগ, ৪ তলা মাজার কমপ্লেক্স-এর প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, ৪ তলা মিনারসহ মসজিদ নির্মাণ, মাজার নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, প্রবেশ গেইট নির্মাণ ও ল্যান্ড স্কেপিং করা হবে। ইতোমধ্যে এটির জন্য পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্পের ব্যাপারে রাসিক মেয়র লিটন বলেন, ৩০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান এঁর সমাধিসৌধ নির্মাণ প্রকল্প, ১২০৯ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নগরীর ২২টি জলাশয়সমূহকে সম্ভাব্য ভরাট রোধকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ করে সংরক্ষণ উন্নয়ন ও ১৪৬৫ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ‘রাজশাহী মহানগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্প সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। প্রকল্পটি তিনটি অনুমোদনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বিভিন্ন উন্নয়ন ও জনকল্যানমুখী কার্যক্রম তুলে ধরে রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহীতে সিআরপি প্রতিষ্ঠায় ১৫ বিঘা জমিদান, পরিবেশ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, সিটি হাসপাতাল চালু, প্রশস্তকৃত সড়ক আলোকায়ন, যানজট কমাতে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ, ডিজিটাল কার্যক্রম, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে উন্নয়ন, পিপিপির মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ, বিরতিহীন বনলতা ট্রেন ট্রেন চালু করা হয়েছে। এছাড়া ড্রেজিংও মাধ্যমে ভারতের মুর্শিবাদের ধূলিয়ান থেকে রাজশাহী হয়ে পাবনার ঈশ^রদী পর্যন্ত নৌরুট চালু ও নৌবরন্দ প্রতিষ্ঠা, রাজশাহী-আব্দুলপুর রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীত এবং শাহ মখদুম বিমানবন্দর স¤প্রসারণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া নতুন কবরস্থান ও ঈদগাহ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ, প্রস্তাবিত রাজশাহী সিটি মিউজিয়াম, রাজশাহী সিটি লাইব্রেরি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাথে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যোগাযোগে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক শাখা খোলা হয়েছে। এই শাখার মাধ্যমে বিভিন্ন দাতা সংস্থার সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের রাজশাহীতে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহী করা হচ্ছে।
শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে রাসিক মেয়র বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীতে তিনটি শিল্পাঞ্চল অনুমোদন দিয়েছেন। এরমধ্যে বিসিক কর্তৃক বিসিক শিল্পনগরী-২ বাস্তবায়ন শেষ পর্যায়ে। এখানে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে সেখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। বিশেষ অর্থনৈতিক জোন ও চামড়া শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠা করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপকে রাজশাহীতে বিনিয়োগে তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা চলছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক পুরোপুরি চালু হলে সেখানে ১৪ হাজারের অধিক তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া রাজশাহী মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় ও বিকেএসপি প্রকল্প বাস্তবায়নের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং প্রকল্পের পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মাণের ফলে শহর আরো বিকশিত ও কর্মমুখর হবে। ইতোমধ্যে নগরীতে ব্যাপক অবকাঠামো নির্মিত হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের ব্যাপারে মেয়র লিটন বলেন, শিক্ষানগরী রাজশাহীতে নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ১৮৬৭ কোটি টাকার রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদিত হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে বাংলাদেশের মধ্যে ১ম পুর্নাঙ্গ পরিকল্পিত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহীস্থ বড়বনগ্রাম, বাজে সিলিন্দা ও বাড়ইপাড়া মৌজায় ৬৮ একর জায়গার উপর রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবায় উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষানগরী রাজশাহী আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পূর্বের ন্যায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে।
ক্রীড়া ও বিনোদনের উন্নয়নের ব্যাপারে রাসিক মেয়র বলেন, দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় রাজশাহীতে হতে যাচ্ছে বহুল কাঙ্খিত বিকেএসপি। নানা কারণে প্রতিষ্ঠানটি রাজশাহীতে না হয়ে অন্য জায়গায় হতে যাচ্ছিল। আনন্দের বিষয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করে আমরা সেটা রাজশাহী আনতে পেরেছি। ইতোমধ্যে বিকেএসপির জন্য পবা উপজেলার খিরসন মৌজার অভয়ের মোড় এলাকায় প্রায় ১৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে বিকেএসপি প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন হবে।শহীদ এ.এইচ. এম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা উন্নয়ন করে আকর্ষনীয় করে গড়ে তুলতে উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরে “নভোথিয়েটার” নির্মাণের কাজ দ্রæত এগিয়ে চলছে। পদ্মাপাড়ে ২টি ঝুলন্ত ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। লালনশাহ পার্কের উন্নয়ন কাজও চলছে। বিনোদনপ্রেমীর ২টি বিচ বাইক ও ১০টি বিচ চেয়ার চালু করা হয়েছে। চার কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে শেখ রাসেল শিশুপার্ক নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ৫ কোটি ২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সিএন্ডবি মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছে। এটি উচ্চতা হবে ৬০ ফুট। ম্যুরালের মূল অংশে বঙ্গবন্ধুর ছবিটি ৫৫´৪০ ফিট। এটির ফাউন্ডেশনে ২২টি পাইলিং করা হচ্ছে। বাউন্ডারী ওয়ালের দুই ধারে ৭০০ বর্গফুট টেরাকাটায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের লোকজ সাংস্কৃতির নানা চিত্র ফুঁটিয়ে তোলা হবে। গ্যালারি, ল্যান্ডস্কেপিং, সুসজ্জিত বৈদ্যুতিক বাল্ব দ্বারা নাইটভিশন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে রাসিক মেয়র জানান, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও বেকার জনগণের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে পিপিপির মাধ্যমে নব নির্মিত আধুনিক মার্কেটসমূহের কার্যক্রম আগামী অর্থবছর হতে পুরোপুরি চালু হবে। সেই লক্ষ্যে ইতেমধ্যে স্বপ্নচুড়া, বৈশাখী, সিমলা সুপার ও সিটি সেন্টার মার্কেটের বরাদ্দ প্রক্রিয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। রাজস্ব আয় অনেকাংশে বৃদ্ধি পাওয়ায় মাসের শুরুতেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা সম্ভবপর হচ্ছে। এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া পাওনা পর্যায়ক্রমে পরিশোধের কার্যক্রম চালু আছে এবং আগামীঅর্থ বছরে সকল দেনা-পাওনা পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নগরীতে নতুন নতুন বাড়ি এ্যাপার্টমেন্টসহ বহুবিধ স্থাপনা নির্মাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে হোল্ডিং সংখ্যা বিগত ৫৭ হাজার ৯৫৯ হতে ৬৭ হাজার ৪৩২টিতে উন্নীত হয়েছে। ফলে সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটের বৈশিষ্টগুলো উল্লেখ্য করে রাসিক মেয়র বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট সম্পূর্ণ উন্নয়নমূখী। আগামীঅর্থ বছরে প্রায় আটশত কোটি টাকা উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়ন হবে। এ বাজেটে নতুন কোন বর্ধিত কর আরোপ করা হয়নি। বকেয়া পৌরকর আদায়, নবনির্মিত সকল স্থাপনার উপর প্রচলিত নিয়মে কর ধার্য্য এবং নিজস্ব আয়ের উৎস স¤প্রসারণের মাধ্যমে কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। শহরের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়নে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। শহরের সড়ক ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বাজেটে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নের সাথে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের উপর এ বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ বাজেটে নাগরিক সেবা সম্প্রসারণ ও সেবার মান উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, পার্ক, ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং আরসিসি’র বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ডেঙ্গু ও পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে মশক নিধন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের স্বনির্ভর করে গড়ের তোলার দিক-নির্দেশনা এ বাজেটে আছে। বহুতল ভবন নির্মাণ কর আরোপের মাধ্যমে ভবন নির্মাণের পূর্বে সিটি কর্পোরেশনের কাছে অনুমতি নেওয়ার বিধান কার্যকর করা হবে। ফলে একদিকে সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আয় হবে, অন্যদিকে মহানগরীতে ইমারত/বহুতল ভবন নির্মাণে শৃঙ্খলা আসবে।
সিটি মেয়র আরো বলেন, রাজশাহীকে বদলে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচনী ওয়াদা পুরণে প্রায় চার বছর কাজ করছি। যা আজ দৃশ্যমান হয়েছে। রাজশাহীর চেহারা প্রতিনিয়তই বদলে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন ও চলমান উন্নয়ন কাজ শেষ হলে রাজশাহী মহানগরীকে নতুনরূপে দেখতে পাওয়া যাবে। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, বিনোদনের প্রসারসহ সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক পরিমÐলে রাজশাহী সিটি গুরুত্ব পাবে।
সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন অর্থ ও সংস্থাপন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল হামিদ সরকার টেকন, প্যানেল মেয়র-২ রজব আলী, প্যানেল মেয়র-৩ তাহেরা খাতুন মিলি, সচিব মোঃ মশিউর রহমান, বাজেট কাম হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম খান, প্রধান প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম। এ সময় সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরবৃন্দ, বিভাগীয় প্রধানগণ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।