নিম্নমানের খাবার দিয়ে চলছে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
রাজশাহী ব্যুরো: ৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের জন্য বরাদ্দ খাবার বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগ উঠেছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগী ও রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি বরাদ্দে যে খাবার সরবরাহ করার তালিকা রয়েছে, সে অনুযায়ী খাবার না দিয়ে নিম্নমানের খাবার দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে রোগীসহ সংশিষ্টদের ক্ষোভ বাড়লেও দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. রাশিদুল ইসলাম নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত বরাদ্দে প্রতিটি রোগীর জন্য সকালে ও দুপুরে যে ধরনের খাবার ও যে পরিমাণ খাবার সরবরাহ করার
কথা, রোগীরা সে পরিমাণ খাবার পাচ্ছেন না। এখানে পরিবেশন করা সকল খাবারই নিম্নমানের। এ হাসপাতালে মাছ, মুরগী ও খাসির মাংস থাকার কথা থাকলেও প্রায় প্রতিদিন-ই পোলট্রি (ব্রয়লার) মুরগির মাংস, সিলভার কার্প জাতীয় সস্তা মাছ, নিম্নমানের চালের ভাত-সহ নিম্নমানের খাবার দেয়া হচ্ছে। এছাড়া, নিয়মানুযায়ী প্রতিদিনের খাবার তৈরির জন্য ঠিকাদারের লোকজন যা সরবরাহ করবে তার ওজন ও মান পরীক্ষা করার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। কিন্তু বাবুর্চির মুখের কথাই চলছেন আরএমও। তাই ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে আঁতাত করে নিম্নমানের খাবার ও ওজনে কম দেয়া হচ্ছে বলে সমালোচনা চলছে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
বিষয়টি নিয়ে তথ্য অনুসন্ধান শনিবার (১৩ মে) দুপুরে দি ডেইলি ইন্ডাস্ট্রি রাজশাহীর বিভাগীয় প্রতিনিধি শাহিন সাগর, আঞ্চলিক পত্রিকা সোনালি সংবাদ’র ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি রফিকুল আলম সোহেল, উত্তরা প্রতিদিন’র কেশরহাট পৌর প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম ও দৈনিক রাজশাহীর আলো’র কেশরহাট পৌর প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মনির মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে রোগীদের সাথে কথা বলেন এবং অভিযোগের সত্যতা পান। তারা জানতে পারেন খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদার বিপুল প্রতিদিন রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করেন, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) সশরীরে রান্না ঘরে এসে খাবারের ওজন ও মান দেখার কথা থাকলেও তিনি তা করেন না। ঠিকাদারের লোকজন যখন রান্না ঘরে খাবার দিয়ে যান, তখন আরএমওকে মুঠোফোন তা জানানো হয়। ঠিকাদারের প্রতিনিধিরা যে বাজার করে দিয়ে যান তা দেখে বাবর্চি মালঞ্চি সাইদি আরএমও কে যা বলেন তিনি তা-ই লিখে রাখেন।’
একাধিক রোগীরা জানান, প্রতিদিন পোলট্রি মুরগির মাংস কিংবা সিলভার কার্প জাতীয় মাছসহ নিম্নমানের খাবার দেয়া হয়। যা অনেকে খেতে পারেন না। এসব খাবারের পুষ্টিমান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। এছাড়াও ঠিকাদার ও আরএমও মিলে রোগী ভর্তি না থাকলেও তা রেজিস্ট্রার ভর্তি দেখিয়ে সরকারের বিপুল পরিমান টাকা লোপাট করছেন বলেও গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, বর্তমান সরকার সেবা খাতকে জনকল্যাণমূলক করতে
নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। হাসপাতালে যারা ভর্তি থাকেন তাদের বেশিরভাগই গরিব রোগী। তাদের চিকিৎসার পাশাপাশি খাদ্য সরবরাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খাবারের মান নিয়ে যেহেতু রোগীদের অভিযোগ রয়েছে, তাই এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। এদিকে, খাবার ব্যবস্থাপনার নীতিমালা ও প্রতিদিনের বরাদ্দপত্র সাথে পরিবেশন করা খাবারের মান খু্বই নিম্নমানের। এসব বিষয় নিয়ে হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকরা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আরিফুল কবির ও আরএমও ডাঃ মোঃ রাশিদুল ইসলামের সাথে দেখা করে হাসপাতালের নানা অনিয়ম নিয়ে কথা বলে বের হয়ে পাশের কক্ষে প্রয়োজনীয় তথ্যের কাগজ সংগ্রহকালে হাসপাতালে খাবার পরিবেশেনকারী ঠিকাদার মেসার্স রিয়া এন্টারপ্রাইজ এর প্রোপাইটর বিপুল হোসেন সাংবাদিক শাহিন সাগরকে অন্যায়ভাবে অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ মারতে তেড়ে আসেন। এসময় অন্যান্য সাংবাদিকরা তাকে বাধা দিলে বিপুলের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা হলে ভবিষ্যতে এক সাংবাদিককে মারধোর ও প্রাণে মেরে ফেলাসহ বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকিও দেন।
উল্লেখ্য: বিপুল বিগত প্রায় ৭বছর ধরে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহ ও পরিবেশন করে বিপুল পরিমান সরকারি অর্থ আত্মসাত করেছেন। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় সাংসদকে ম্যানেজ করে প্রতিবার বিপুল এই হাসপাতালের ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ পান এবং সংসদ সদস্যের দাপট দেখিয়ে রোগীদের যা ইচ্ছে তাই খেতে দিচ্ছেন। হাসপাতাল সংলগ্ন বাড়ি হওয়ায় এবং যাকে তাকে কেনার সামর্থ্য থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করে কোন লাভ হয়না। নিরুপায় রোগীরা তাই মুখ বুজে সহ্য করেন।
এব্যাপারে জানতে ঠিকাদার বিপুল হোসেন’কে একাধিক বার তার মুঠোফোনে চেষ্টা করে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের বিষয় জানতে চাইলে আরএমও ডা. রাশিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সত্য নয়, আমি নিয়মিত খাবার সরবরাহ, খাবাবের মান ও ওজন পর্যবেক্ষণ করি।
পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আরিফুর কবির বলেন, সরকারি নিয়মনীতি মেনে ঠিকাদার দেয়া আছে, তিনি যে বাজার করেন এবং সরবরাহ করেন সেটি সরকারি নিয়ম মোতাবেক হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত দেখভাল করা হয়।
রাজশাহী’র সিভিল সার্জন ডা: আবু সাইদ মোঃ ফারুক বলেন, আমি কয়েকদিন আগেই সব কিছু দেখে এসেছি। সব ঠিক ছিল। পরবর্তীতে আমার কাছে এমন কোন অভিযোগ আসেনি। আমি আবারও খোঁজ নেব ; যদি এরকম কিছু ঘটে থাকে, তাহলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।
মুঠোফোনে জানতে চাইলে মোহনপুর উপজেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও পবা-মোহনপুর ৩ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আয়েন উদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, যথাযথ তদন্ত করে যাহা যাহা অনিয়ম আছে,সুন্দর করে লিখে দেবেন। যদি হাসপাতালের বা জনগণের শুভাকাঙ্খী হয়ে থাকেন, তাহলে যাহা যাহা অনিয়ম আছে সব কিছু সুন্দর করে লিখবেন, তাহলে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ হবে আর দৃষ্টি আকর্ষণ হলে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।