রাজশাহী ব্যুরো: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর তিনদিন বাঁকি। আগামী নির্বাচনকে গ্রহনযোগ্য ও সফল করতে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও ক্ষমতায় যেতে চাই দলটি। কিন্তু ডামি এই নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষেই কাজ করছে খোদ আওয়ামী লীগের একটি অংশের নেতাকর্মীরা। এই নিয়ে চরম হতাশ ও বিভ্রান্ততে পড়েছে রাজশাহী সদর আসনের জোট সমর্থিত প্রার্থী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জোটের প্রার্থীতা ঘোষনার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রত্যয় নিয়ে নিজেকে তুলে ধরেন মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি রাজশাহী কোর্ট কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা। এতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন অঘোষিত পূর্ণ সমর্থন দিয়ে বসেন। অবশ্য এর পেছনে অনেক ব্যাখ্যাও রয়েছে। লিটনের এই সমর্থনে এক হয়ে নির্বাচনে কাজ করছেন মহানগরের আওয়ামী একটি অংশ। আর বাদশার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কারন, গত তিন ট্রামে মহানগরের কোন দলীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম, আন্দোলন – সংগ্রামে তিনি আসেননি কিংবা আওয়ামী লীগের সাথে সমন্বয় মিটিং করেননি। এছাড়াও আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মীদের কোন খোঁজ খবর নেননি। এরকম অসংখ্য কারন রয়েছে ফজলে হোসেন বাদশার ডাকে সাঁড়া না দেওয়ার। যদিও কিছু নেতা জোটের স্বার্থে ফজলে হোসেন বাদশার পাঁয়ে পাঁ মিলাচ্ছেন। এদিকে শফিকুর রহমান বাদশার পক্ষে ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী সকল সহযোগী সংগঠনগুলো শ্লোগান দিচ্ছে ” লিটন ভাইয়ের সালাম নিন, কাঁচি মার্কায় ভোট দিন। রেনী ভাবির সালাম নিন, কাঁচি মার্কায় ভোট দিন। অর্ণা আপুর সালাম নিন, কাঁচি মার্কায় ভোট দিন”। শুধু তাই রাজশাহীর এই হেবিওয়েট নেতার নির্দেশে ওয়ার্ড কাউন্সিলর বৃন্দ কাঁচি প্রতীকের পক্ষে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন। কাঁচির পক্ষে মিছিল মিটিং করছেন। এই বিষয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সাথে কথা বললে তারা জানান, লিটন ভাইয়ের নির্দেশে আমরা কাঁচির পক্ষে কাজ করছি। তাছাড়া বিগত দিনে আওয়ামী লীগের কোন নেতাকে কাছে ডাকেননি ফজলে হোসেন বাদশা। গত ১৫ বছর ধরে ফজলে হোসেন বাদশাকে নৌকা প্রতীক দেওয়াতে নৌকার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এই রকম রাগ অভিমান রয়েছে ফজলে হোসেন বাদশার প্রতি। এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে দেওয়া নেতাদের সাক্ষাৎকারে অনেক কথা বেরিয়ে এসেছে। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী কামাল দাবি করেছেন, কারো চাপে নয়, স্থানীয় নেতাকর্মীরাই ফজলে হোসেন বাদশাকে চায় না। সে কারণে তাদের অবস্থান স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে। তিনি বলেন, ‘নৌকা তো আমাদের দলের লোক পায়নি। সে কারণে নৌকার জন্য যে আমাদেরকে কাজ করতেই হবে, সেটার তো কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।’ যদিও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের দাবি, যে যত কথাই বলুক, রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা নৌকার পক্ষেই আছেন। তিনি বলেন, ‘নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, সেটা সঙ্গত কারণেই দিয়েছেন। নেত্রী বলেও দিয়েছেন, নৌকার পক্ষে দলের লোকজনকে কাজ করতে হবে। আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো নেত্রীর নির্দেশ মানা। আমরা সেটাই করছি।’ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নামা দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। কাঁচি’ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও কলেজ শিক্ষক সমিতির নেতা শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, ‘এখানে যাকে নৌকা দেয়া হয়েছে, তাকে আমরা দলের লোকজন চাই না। নেত্রী যে কেন তাকে এবারও নৌকা মার্কায় মনোনয়ন দিলেন, সেটা জানি না। আমরা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে আমাদের প্রার্থী বলে মানছি না। এখানে আমিই রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এ ব্যাপারে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘আমাদের ১৪ দলীয় জোটের একটা ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। সেই জায়গা থেকেই আমরা একত্রে লড়াই সংগ্রাম ও নির্বাচন করি। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। আমি ভোটের কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী আমার সঙ্গেই আছেন। তারা আমার পক্ষেই কাজ করছেন।’ তার বিপক্ষে যারা কাজ করছেন তাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনিও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। উল্লেখ্য, গত ২৬ নভেম্বর রোববার বিকেল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দ্বাদশ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে রাজশাহী-২ অর্থাৎ সদর আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পান মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা: আলী কামাল। এরপর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জোটের আসন ভাগাভাগি হলে রাজশাহী সদর আসনে জোট মনোনিত প্রার্থী হন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা।