রাজশাহী ব্যুরো: বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি ও দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে রাজশাহীতেও চালু হয়েছে “আমার আদালত”। আমার আদালত, এটি কোন শ্লোগান নয়, এটি একটি এ্যাপস্ বা সফটওয়্যার। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে জানা যাবে আদালতে কজলিষ্ট, আদেশ ও ধার্য্য তারিখ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, একটি স্মার্ট ফোন হাতে থাকলেই মিলবে আদালতের এসকল তথ্য। এসকল তথ্য পেতে হলে ক্রোম ব্রাউজারে গিয়ে
https://causelist.judiciary.gov.bd বা “আমার আদালত” এ্যাপ (Google piay store) লিংকে ক্লিক করে বিভাগ, জেলা, আদালতের নাম ও তারিখ বাছাই করে অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করলে সংশ্লিষ্ট যেকোন ব্যক্তি ঘরে বসে মামলার পরবর্তী দিন তারিখ, কার্যক্রম, রায় ও আদেশ জানতে পারবে অনায়াসে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদক রাজশাহীর আদালত প্রান্তরে উপস্থিত হলে দেখা মিলে সামিউল ইসলাম নামের এক বিচার প্রার্থীর সাথে। বলে রাখা ভালো, রাজশাহীর সবচেয়ে দুরের উপজেলা হচ্ছে বাগমারা। অর্থাৎ আদালত চত্বর থেকে এই উপজেলার দুরুত্ব প্রায় ৫০ কি:মি:। সেখান থেকে এসেছেন এই সামিউল। সামিউল বাগমারা উপজেলার বাইগাছা গ্রামের মৃত সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে। তিনি ২০১৭ সালে জমি সংক্রান্ত একটি মামলা করেছিলেন। তার জমির উপর বাড়ি করছিল প্রতিবেশি সানোয়ার হোসেন। এতে বাধা দিতে গেলে উল্টো সামিউলের বাড়িঘর ভাংচুর করে সানোয়ার গং। সেই মামলার কোন খবর না পেয়ে, কোর্টের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। তবে তাকে নাস্তানাবুদ করতে উল্টো তার বিরুদ্ধে মামলা করেন বিবাদী সানোয়ার। সেই মামলায় তিনি হাজিরা দিতে এসেছেন। তার বক্তব্য, আমি আগে মামলা করেছি কিন্তু আমার মামলার কোন হদিস নেই। তাকে “আমার আদালত” এ্যপস সম্পর্কে বললে তিনি বলেন, এই এ্যাপ সম্পর্কে আমার জানা নাই। আমি আজই বাসায় গিয়ে ট্রাই করবো। এরপর বাগমারার আরেক ভুক্তভোগী মো: কলম। তিনি একটি চেক এর মামলা করেছেন। এই মামলাটি করতে এ্যাডভোকেট মোটা খরচ নিয়েছেন। তারপরও বর্তমানে মামলাটি কি অবস্থায় আছে তিনি জানতে এসেছেন। তবে এ্যাপের বিষয়টি জানতে পেরে বলেন, আমি আগে জানলে আমি এতদুর হয়রানি হয়ে আসতাম না। ভাল হলো এই এ্যাপ সম্পর্কে জেনে। আরেক ভুক্তভোগী মো: হাবিবুর রহমান (৬০)। তিনি চাপাই নবাবগঞ্জ জেলা থেকে এসেছেন। তিনি চাপাই জেলার সদর উপজেলার বাগডাঙ্গা (দিয়াড়) এলাকার সাবের আলির ছেলে। সে হিরোইন মামলার আসামী। মামলাটি ২২ সালে হওয়ার সুবাদে দীর্ঘদিন থেকে রাজশাহী আদালতে আসতে হয়। হাজিরা দিতে এসে তিনি আক্ষেপ করেন। তিনি হাজিরার বিষয়ে আগে থেকে কিছু জানতেন না। সকল কিছুর খবর রাখেন এ্যাডভোকেট। হঠাৎ রাতে তাকে জানানো হয়েছে মামলার হাজিরার বিষয়ে। পরে আমার আদালত এ্যাপস এর বিষয়ে কথা বললে তিনি এই সম্পর্কে জানেন না বলে জানান। তবে এ্যাপটির বিষয়ে জানতে পেরে তিনি অনেকটা স্বস্তি পান। তিনি বলেন, এখন থেকে আমার তথ্য আমি নিজেই জেনে নিব। উল্লেখ্য, একটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে বিচারিক সেবা ও তথ্য প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করতে গত ২২ সালের ১১ জুন আনুষ্ঠানিক ভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি এই মোবাইল অ্যাপটি উদ্বোধন করেন। বিচার বিভাগের এই অনলাইন সেবার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে এটুআই, ইউএনডিপি ও আইন মন্ত্রণালয়। ঢাকা থেকে এ্যাপটির যাত্রা শুরু হলেও আস্তে আস্তে দেশের বিভিন্ন আদালতে এই পরিসেবা চালু হয়েছে। আমার আদালত এ্যাপ সেবা সম্পর্কে রাজশাহী আদালতের জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, দেশ এগুচ্ছে পাশাপাশি বিচার বিভাগ এগিয়ে যাচ্ছে। স্মার্ট জুডিসিয়ারি প্রতিষ্ঠার লক্ষে আমার আদালত এ্যাপটি দারুনভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দেশের অন্যান্য জেলার মত রাজশাহীতেও চালু করা হয়েছে “আমার আদালত” এর কার্যক্রম। ইতোমধ্যে এই সেবা নিশ্চিত করতে প্রায় ৯০% কাজ শেষ করা হয়েছে। আমি রাজশাহীর প্রতিটি বিচার বিভাগে প্রতিদিনের তথ্য প্রতিদিন আপডেট করার নির্দেশনা দিয়েছি। এই এ্যাপ সম্পর্কে এখনও অনেকে জানেনা, এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, আমি কিছু প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। খুব দ্রুত সেগুলো শেষ করা হবে। আদালতের প্রতিটি প্রান্তরে পোষ্টারের মাধ্যমে প্রচারনা করা হবে। আপনারা এই এ্যাপ সম্পর্কে বেশি বেশি লিখালিখি করলে সবাই জানতে পারবে। তবে এই এ্যাপ নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তবে এই এ্যাপের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, এটুআই কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ‘ই-কজলিস্ট’ জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (ITU) কর্তৃক প্রবর্তিত The World Summit on the Information Society (WSIS) পুরস্কার ২০২৪ এর জন্য মনোনীত হয়েছে। এ বিষয়ে অধিক ভোট পেলে আইন ও বিচার বিভাগ আন্তর্জাতিক পুরস্কারটি পেতে পারে। সেলক্ষ্যে এটুআই জুডিসিয়ারি টিম প্রত্যেক জেলার বিচারক, স্টাফ, আইনজীবী, আরও অনেকের নিকট থেকে ভোট চেয়েছেন। ভোট প্রদান ইমেইল আইডি থেকে দিতে হবে এবং একটি আইডি থেকে একটি ভোট দেয়া যাবে। WSIS পুরস্কারের জন্য ভোট করার নিয়মাবলি:
https://www.itu.int/net4/wsis/stocktaking/Prizes/2024 ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ই-মেইল দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করুন। (পাসওয়ার্ডে অন্তত একটি অক্ষর বড় হাতের ও অন্তত একটি সিম্বল থাকা আবশ্যক) রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হওয়ার পর ই-মেইল থেকে রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করে লগইন করুন এবং Vote অপশনে ক্লিক করার পর আপনি Voting Form নামক আরও একটি অপশন দেখতে পাবেন, এখানে ক্লিক করুন। ভোট দানের শেষ সুযোগ ৪ এপ্রিল ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত।