রাজশাহীর দুর্গাপুরে শাহাবুদ্দিনকে ম্যানেজ না করলে হবেনা পুকুর খনন
রাজশাহী ব্যুরো: ফসলি জমিতে পুকুর খননে আদালতের নিষেধাক্কা থাকলেও কোনভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না অবৈধ পুকুর খনন। রাজশাহীর দুর্গাপুর এলাকা থেকে সাংবাদিকদের জানানো হচ্ছে এমপি মন্ত্রী’র নাম ভাঙ্গিয়ে প্রায় ৩০০ বিঘার পুকুর খনন চলছে। স্খানীয়রা বলছে, এই উজালখলসি বিলে কেউ জমি দিতে না চাইলেও জোর করে তার জমি কাটা হচ্ছে। কৃষকরা প্রসাশনের কাছে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেননা।
এছাড়াও ঐ উপজেলা থেকে একের পর এক অভিযোগ আসছে সাংবাদিক ও প্রসাশনের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা তোলা হচ্ছে। কিন্তু কেউ জানেনা টাকা কোথায় যাচ্ছে! এমন অভিযোগ শুধু এলাকাবাসির নয়, এই অভিযোগ আসছে খোদ সংবাদকর্মীদের নিকট থেকে। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্গাপুর এলাকায় সরেজমিন গেলে মিলেছে অভিযোগের সত্যতা। উপজেলায় প্রবেশ করতেই প্রথমে দেখা হয় ২ নং কিসমত গনকড় ইউনিয়নের সদস্য ফজলুর রহমানের সাথে। তার ভাষ্যমতে, দুর্গাপুর উপজেলায় কেউ পুকুর খনন করতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয়দানকারি শাহাবুদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করতেই হয়! নাহলে পুকুর খনন সম্ভব হবেনা। এমন কথা শুনে ঐ মেম্বারের থেকে জানতে চাইলাম, কে এই শাহাবুদ্দিন?
খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, শাহাবুদ্দিন ঢাকা থেকে প্রকাশিত অগ্রযাত্রা পত্রিকায় কাজ করেন।
এলাকায় খোঁজ নিতে কয়েকজনের নাম মিডিয়ার সামনে উঠে আসলো, যাদের থেকে টাকা চেয়েছেন এবং নিয়েছেন।
এমন এক ভুক্তভোগী রাতুগ্রামের হাফিজুর রহমান। তার দাবি, আমি পুকুর খনন করছি এমন সময় এই সাংবাদিক শাহাবুদ্দিন হাজির হয়। তার কথা, কার অনুমতি নিয়ে আমি পুকুর খনন করছি? পরে তাকে সেখান থেকে বিদায় করলে সে ভয়ভীতি দেখিয়ে চলে যায়। তাকে টাকা না দেওয়ায় প্রসাশনকে ভুলভাল তথ্য দিয়ে কয়েক বারে গাড়ি পুড়িয়ে আমার ১০ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ক্ষতি করেছে। হাফিজুরের এই সকল কথার রেকর্ড রয়েছে মিডিয়ার হাতে।
এরকম আরেক ভুক্তভোগী নাজমুল। নাজমুলের বাড়ি কয়ামজমপুর। সে কয়ামজমপুর বিলে পুকুর খনন করার প্রস্তুতি নিলে হাজির হয় শাহাবুদ্দিন। শাহাবুদ্দিন সকল কিছু ম্যানেজ করার জন্য ৮ লক্ষ চায় নাজমুলের থেকে। শুধু তাই নয়, এছাড়াও যতদিন কাজ চলবে প্রতিদিন তাকে দিতে হবে ২ হাজার টাকা করে। শাহাবুদ্দিনের এমন প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নাজমুলেরও ক্ষতি করা হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। কারন তারও গাড়ি পোড়ানো হয়েছে।
দুর্গাপুর সাংবাদিকদের টাকা দেয়া হয়েছে, এমন তথ্য জানতে ফোন করা হয় রাতুগ্রামের মোস্তফার সাথে। সে বলছে, আমি রাতুগ্রামে পুকুর খনন করেছি। যার সকল দেখভাল করেছে শাহাবুদ্দিন। তার মাধ্যমে দুর্গাপুরের সাংবাদিকদের টাকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু দুর্গাপুরের সাংবাদিকরা এব্যাপারে তারা কিছু জানেই না। এসকল অভিযোগের পর যায় উপজেলার উজালখলসি বিলে। সেখানে ৩০০ বিঘার পুকুর খননের ছবি নিলে, ক্ষিপ্ত হয় সেখানে ক্যাডার বাহিনীরা। প্রতিবেদকের থেকে জোর করে ফোন কেড়ে নিয়ে ছবি ডিলেট করেন তাহেরপুর পৌরসভার ৩ নং কাউন্সিলর কার্তিক শাহ ও সাংবাদিক শাহাবুদ্দিন। ব্যাপারটি উপজেলার সাংবাদিকদের জানালে তারা প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হন এবং দূঃখ প্রকাশ করেন।
এব্যাপারে দুর্গাপুরের কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে কথা হলে তারা জানান, এই শাহাবুদ্দিনের ব্যাপারে অনেক অভিযোগ রয়েছে আমাদের কাছে। তার অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়ায় আমরা তাকে প্রেসক্লাব থেকে বের করে দিয়েছি।
পরে এমন অভিযোগের ব্যাপারে শাহাবুদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে সে জানায়, আমি কারো থেকে টাকা নেয়নি। আপনার কাছে তথ্য প্রমান থাকলে আপনার যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। মিডিয়ার পরিচয় জানতে চাইলে সে জানায়, অগ্রযাত্রা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন এবং রাজশাহীর একটি প্রেসক্লাবের সাথে যুক্ত আছেন। পরে সংবাদ প্রকাশের ব্যাপারে বললে সেও বলেন, আমিও লিখবো আপনিও টাকা চেয়েছেন। অর্থাৎ এই প্রতিবেদককে উল্টো ব্ল্যাকমেইল করে বসেন শাহাবুদ্দিন।
পুকুর খনন ও প্রসাশনকে ম্যানেজ করার বিষয়ে দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য ও মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।