রাজশাহী ব্যুরো : অভিযোগকারি চেনে না সাংবাদিককে। এমনকি উপস্থিত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই অভিযোগকারির। তবুও কিসের ভিত্তিতে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম চপলকে ? এমন প্রশ্ন এখন জনমনে। এই নিয়ে তোলপাড় রাজশাহীর মিডিয়া পাড়া! ইউএনও এর রোষানলে পড়ে সারাদেশে সাংবাদিকের সাথে একের পর এক ঘটনায় ভাবিয়ে তুলেছে গণমাধ্যমকে। গত ৬ মে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় ইউএনও কে প্রশ্ন করায় দৈনিক গণমুক্তি পত্রিকার রাজশাহী ব্যুরো প্রধান মাজহারুল ইসলাম চপলকে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল ইসলাম। জরিমানা পরিশোধের পর ৮ মে ভুক্তভোগী সাংবাদিক চপল বাদি হয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত ঐ অভিযোগে তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত জাতীয় দৈনিক গণমুক্তি পত্রিকা ও অনলাইন ডেইলী নিউজ বাংলা পোর্টালে রাজশাহী ব্যুরোচীফ হিসেবে কর্মরত রয়েছি।
গত ৬ মে ২০২৫ তারিখে স্থানীয় অভিযোগের ভিত্তিতে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের হড়মবিলে পুকুর খনন সংক্রান্ত বিষয়ে উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে একটি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। সেখানে আমি গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে উপস্থিত হই এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পরিচয় দেয়। এসময় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকারি কর্মকর্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল ইসলাম। এসময় সকলের উপস্থিতিতে সেখানে থাকা এক্সেভেটর বা ভেকু মেশিন ভাংচুরের নির্দেশ দেন ইউএনও। আমি সেখানে গাড়ি ভাংচুরের নিয়ম রয়েছে কিনা জানতে চাই এবং না ভেঙ্গে জব্দ ও জরিমানা অথবা সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উল্টো আমাকে খননকারি বানানোর চেষ্টা করেন এবং খননকারি হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করেন। যা রীতিমত হতাশার বিষয়। এরপর ইউএনও সাহেব আমাকে গ্রেফতারের নির্দেশ প্রদান করেন এবং আমি আটক হই।
পরবর্তীতে সেখান থেকে আটক করে অফিসে নিয়ে আমাকে বিকাল ৫.০০ টার দিকে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। এসময় আমার নিকট এতগুলো টাকা না থাকায় সারারাত আমাকে অভুক্ত আটক রাখা হয়। পরের দিন জরিমানার ২ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে সেখান থেকে মুক্ত হই। এঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ তুলে ধরেন যে, স্থানীয় অভিযোগকারি ব্যক্তি ভ্রাম্যমান আদালতে উপস্থিত ইউএনও কে জানান, তিনি সেখানে থাকা সাংবাদিককে চেনেন না এবং তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নাই। এসময় গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে সাবধান না করে সরাসরি গ্রেফতার করেছেন, গণমাধ্যমের পরিচয় দেওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়েছেন, ঐ সাংবাদিকের কর্মরত পত্রিকাকে অখ্যাত পত্রিকা বলে সম্মানহানী করেছেন, অন্যের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে তিনি ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছেন, সারারাত না খাওয়ে রেখেছেন এবং সাংবাদিকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন করেছেন, পরবর্তীতে তিনি তার পছন্দমত সাংবাদিক ডেকে সংবাদ প্রচার করিয়েছেন যা ভুক্তভোগী সাংবাদিকের সামাজিক ও মানষিকভাবে মানক্ষুন্ন হয়েছে এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
উল্লেখ, ইতিপূর্বে ভুক্তভোগী সাংবাদিক বাগমারা উপজেলার বিভিন্ন অসংগতি ও পুকুর খননের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছে। যার প্রতিফলন হিসেবে গত ৬ মে তার উপর অন্যায়ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এমন ন্যক্কারজনক রায় প্রদান করা হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এর সাথে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করেছেন। এব্যাপারে জেলা প্রশাসক রাজশাহীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভুক্তভোগী সাংবাদিক গতকাল আমার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেছে এবং মৌখিক একটি অভিযোগ দিয়েছে। আমি আজ বাইরে রয়েছি, অফিসে গেলে জানতে পারবো। সাংবাদিক চপলের উপর যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটার কোন প্রমান পেয়েছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাংবাদিক চপলের ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সত্যতা না পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।