মো.আককাস আলী,নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডার হিসাবে খ্যাত নওগাঁ জেলায় কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে মাঠে বোরো ধান রোপনে মহা-ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তীব্র শৈত্য প্রবাহের কারনে জেলায় বেশ কিছু বীজতলা নষ্ট হলেও এবং বাজারে কৃষি উপকরণ সার, তেল পর্যাপ্ত সরবরাহের ফলে চলতি মৌসুমে বোরো চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে।
এবছর লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত জমিতে বোরো চাষ হবে বলে সংশ্লিষ্ট কৃষি অধিদপ্তর মনে করছেন। প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে চলছে বোরো রোপন এবং বীজতলা থেকে চারা উত্তোলনের কাজ।অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এসব কৃষি শ্রমিকদের তীব্র শৈত্যপ্রবাহ যেন স্পর্শ
করছেনা। জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল ওয়াদুদ জানান, চলতি বোরো মৌসুমে নওগাঁ জেলায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৪৯ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধান করা হয়েছে। এ পরিমান জমিতে বোরো চাষ করতে ৯ হাজার ১২৩ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরীর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়।
সে ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৯ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরী করা হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় ৭৮ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে চারা রোপন সম্পন্ন হয়েছে। বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন ও জমিতে চারা লাগানো চলছে দ্রুত গতিতে। এবার জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী জমিতে বোরো চাষ হবে বলে তিনি মনে করছেন।
এদিকে প্রতিদিন পূর্ব দিগন্তে সূর্যের আলো ফুটে ওঠার আগেই কোমর বেঁধে ফসলের মাঠে নেমে পড়ছেন কৃষকরা। বীজতলায় ধানের চারা পরিচর্যার পাশাপাশি জমি চাষবাদের কাজ চলছে পুরোদমে। বির্স্তীর্ণ ফসলের মাঠে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা, কোথাও গভীর নলকুপ থেকে চলছে পানিসেচ, কলের লাঙ্গলের পাশাপাশি গরুর লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষের দৃশ্য যেন মন ভরে ওঠে। মাঠের পর মাঠ যেন ব্যস্ত আর ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।
বোরো ধান লাগানোর জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে চারা। আর এ কাজ কোমর বেঁধে করছে নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা। এই চারা তোলা আর বোরো রোপনের ব্যস্ততায় কৃষকের গায়ে শীত যেন স্পর্শ করছেনা। সবমিলিয়ে কৃষকদের একটাই উদ্দেশ্য ঘরে তুলতে হবে বোরো ধান। মহাদেবপুর উপজেলার ঈশ^র গ্রামের কৃষক পানজু সরদার,মাসুদ রানা.সিদ্দিক বলেন, প্রচন্ড শীতের কারণে কৃষি শ্রমিকরা কাজ করতে পারছে না।
এ কারনে অনেকাংশে শ্রমিক সংকটের পাশাপাশি তাদের অতিরিক্ত মজুরি দিতে হচ্ছে। তাদের এই চাহিদা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন গৃহস্তরা। শীতের কারণেই এবছর অনেকাংশে বোরো চাষ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে বলে কৃষকদের অভিমত। ঝলঝলিয়া গ্রামের কৃষক নজমুল হাসান ও আজিজুল ইসলাম জানায়, এ বছর তারা প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে।
তাদের মতে, প্রতি বিঘা জমিতে বোরো চাষ শেষ করতে কমপক্ষে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে ওই খরচের পরিমান আরো বেড়ে যাবে। বর্তমানে বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুত চালিত গভীর নলকূপের আওতায় থাকা বোরো চাষের জমির মালিকরা বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
খোর্দ্দনারায়নপুর গ্রামের কৃষক নাহিদ হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে বাজারে সব সারের মূল্য কম থাকলেও গ্রাম অঞ্চলের হাট-বাজারে থাকা কতিপয় সার ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার আশায় সারের কৃত্রিম সংকট করছে। তারা প্রতিটি সারের দাম বস্তাপ্রতি ১শ’ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে বলে ওইসব কৃষক অভিযোগ করেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা জানান, শৈত্য প্রবাহ দীর্ঘায়িত হওয়ায় বোরো চাষ কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। চারা জমিতে লাগানোর পূর্বে কিছুটা ইউরিয়া ও থিয়োভিট পাউডার স্প্রে করতে হবে। এতে চারা দ্রুত সতেজ হয়ে উঠবে। তিনি আরো বলেন, বাজারে ইউরিয়া, ফসফেট, টিএসপি, পটাশসহ সকল প্রকার সার, তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় বোরো ধানের ভরা মৌসুমে কোন সঙ্কট হওয়ার আশঙ্কা নেই। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।