মাজহারুল ইসলাম চপল, ব্যুরোচীফঃ চিকিৎসা সেবায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় খুব অল্প সয়য়ে এগিয়েছে ভারত। তাই বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে বর্ডার ছাড়ছে হাজার হাজার ভুক্তভোগী অসহায় মানুষ। শুধু চিকিৎসা নয়, এ দেশ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ছুটছে ভ্রমন ও ব্যবসার কাজেও। যার কারনে ভারতীয় ভিসা পেতে অপেক্ষার ঘন্টা যেন অনেকটাই দীর্ঘ হয়। ভিসা আবেদন জমা দিতে গিয়েও অসহায় মানুষদের হতে হচ্ছে হয়রানি ও লাঞ্চিত। লাঞ্চিত শুধু দেশের নাগরিক নয় অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাদের লাঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে সংবাদকর্মীকেও। এমন দৃশ্যও উঠে এসেছে সাংবাদিকের ক্যামেরায়। তবুও অপেক্ষা, হয়রানি ও লাঞ্চনার পালা শেষ করে আবেদন জমা দিলেও মিলছেনা ভারতীয় ভিসা। এ যেন সোনার হরিন পাওয়ার মত অবস্থা। এখানেই শেষ নয়, ভারতীয় ভিসা কার্যক্রমের কারনে বাংলাদেশ থেকে চলে যাচ্ছে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা। এর মধ্যে কয়েক কোটি যাচ্ছে দুর্নীতির কারনে। আসুন এবার ভারতীয় ভিসা অফিসের দুর্নীতির কারন ও ধরন গুলো জেনে নিইঃ
(১) একজন নাগরিককে ভারতীয় ভিসা পেতে হলে অবশ্যই ভিসা আবেদন করতে হবে। এই আবেদনের জন্য পে ওয়াল সফটওয়ার কোম্পানির মাধ্যমে ষ্টেট ব্যাং অব ইন্ডিয়া নিচ্ছে ৮০০ টাকা, ২৪ টাকা ভ্যাট, ৬ টাকা অনলাইন দোকানদার। অর্থাৎ ভারতীয় ভিসা পেতে মোট ৮৩০ টাকা খরচ হবে। সারাদেশে ভারতীয় ভিসা সেন্টার রয়েছে ১৫ টি। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ১৮ তারিখে দৈনিক কালেরকন্ঠ ও বাংলাদেশ প্রতিদিনে একটি প্রতিবেদনে বলেন একদিনেই এগারো হাজার ভিসা আবেদন জমা হয়েছে। সেই হিসাব মোতাবেক দেশের ১৫ টি ভারতীয় ভিসা সেন্টার থেকে গড় প্রতিদিন দশ থেকে বার হাজার আবেদন জমা হয়। কিন্তু সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভিসা দেওয়া হয় মাত্র ৫০-৬০% মানুষকে। অর্থাৎ পাঁচ থেকে ছয় হাজার, বড় জোর সাত হাজার মানুষ ভারতীয় ভিসা পাচ্ছে। অথচ তিন থেকে চার হাজার মানুষকে ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। যদি ধরেই নিই তিন হাজার মানুষকে ভিসা দেওয়া হচ্ছে না, তাহলে তিন হাজার গুন ৮৩০ টাকা। ষ্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া প্রতিদিন এই টাকাটা বিনা খরচে হাতিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ থেকে।
(২) ভিসা আবেদনের সময় অনলাইনে ছোটখাট ভুল হয়। যেমন নামের বানান বা এনআইডি কার্ডের নাম্বারের যেকোন সংখ্যা ভুল হয়ে থাকে। আবার কারো কারো পাসপোর্টের জটিলতাও থেকে থাকে। যেমন পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে পুনরায় নতুন পাসপোর্টের ব্যাপার। আবেদনটি জমা দিতে গেলে ঐ আবেদনটি রিজেক্ট করা হয়। অথচ অতিরিক্ত ফি নিয়ে ভুল হওয়া জায়গাটিকে সংশোধন করতে পারবে। কিন্তু তা করা হয় না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদেশে প্রতিদিন এভাবে রিজেক্ট হয় দেড় থেকে দুই শত আবেদন। অর্থাৎ দুইশত গুন ৮৩০ টাকা। এই টাকাটাও উধাও হচ্ছে চোখের পলকে।
(৩)ভিসা আবেদন সঠিক হলে ফাইলটি জমা করতে এবার লাইনে দাঁড়ানোর পালা। প্রায় ৭-৮ ঘন্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর আবেদনটি জমা করা হয়। আবার লাইন ভেঙ্গে জমা করতে গেলেই গুনতে হবে এক থেকে দুই হাজার টাকা। এই ভাবে গড়ে প্রতিদিন দেড় থেকে দুইশত আবেদন জমা হয়। আবার ভিসা মুঞ্জুর হয়ে গেলে পাসপোর্ট বই তুলতে আবারও লাইনে দাঁড়াতে হয়। লাইন ভেঙ্গে তুলতে গেলেই সেই একই পদ্ধতি। যার তথ্য প্রমান গত পর্বে অনেক মিডিয়াতে প্রকাশ হয়েছে। অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, প্রতিটি ভিসা সেন্টরে আবেদন জমা দানের বুথ রয়েছে যথেষ্ট পরিমানে। কিন্তু সেই বুথগুলো বন্ধ রেখে কয়েকটি বুথ চালু রেখেছে তারা (বিশেষ করে রাজশাহী সেন্টার)। কারন ভোগান্তি বাড়াতে হবে। ভোগান্তি না বাড়ালে অবৈধ আয়ের পথ তৈরি হবে না। তবে লাইন ভেঙ্গে ঢোকানোর এই অবৈধ আয়ের কাজ কিছুটা করানো হয় সিকিউরিটি গার্ডকে দিয়ে। এছাড়াও প্রতিটি ভিসা অফিসারের রয়েছে নিজস্ব দালাল। যাদের কোন লাইন লাগেনা। লাইন ছাড়া পার হয় ব্যাগ ভর্তি আবেদন। শুধু তাই নয়, ব্যবসা ভিসা পেতে গেলে বছর অনুযায়ী কন্টাক্ট করতে হয়। এর জন্য অবৈধভাবে গুনতে হবে সর্বনিম্ন দশ হাজার টাকা। প্রতিদিন গড় জমা হয় তিনশত থেকে পাঁচশত ব্যবসা ভিসা আবেদন। এই সমীকরণের হিসাব আপনাদের কাছে থাকলো। তবে সুত্র বলছে, এই অবৈধ আয়ের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে বাংলাদেশে অবস্থানরত ষ্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার উর্ধ্বতন কর্মকতাদের হাতে। কারন জাল ডলার এন্ডোর্সমেন্ট, ব্যাংক ষ্টেটমেন্ট ও পাসপোর্ট মালিক ছাড়াই বই দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। যার তথ্য প্রমান মিডিয়াকর্মীর হাতে আছে। এছাড়াও উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে করা হচ্ছে এমন স্বিকারুক্তিও দিয়েছে রংপুরের ভিসা ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন। যার ফোন কল রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে। বাংলাদেশের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসা কর্মকর্তা (ডেকো) গৌরব চক্রবর্তী, ঢাকাস্থ ষ্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সিইও সুমন্ত ঘোষ ও ঢাকাস্থ ষ্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার কান্ট্রি হেড অমিত কুমার এর পিএস কৃপানাথ দে এর মুঠোফোনের (হুয়াটস এ্যাপ) মাধ্যমে মিডিয়াকর্মী তথ্য প্রমান দিলেও কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো মিডিয়াকর্মীর ফোন ব্ল্যাকলিষ্ট করে দেয়, যা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। তবে তাদের এমন আচরন বলে দিচ্ছে এসকল দুর্নীতির সাথে ষ্টেট ব্যাংক কর্মকর্তাদের সক্রিয়তা রয়েছে।
বিষয়গুলো নিয়ে অনুসন্ধানে গেলে, মুখে কুলুপ দিয়ে বসেন সকলেই। প্রতিদিন গড়ে কতটি ভিসা দেওয়া হচ্ছে বা প্রতিদিন ষ্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া কত টাকার লেনদেন করছে, তার খবর বাংলাদেশ ব্যাংকও জানে না। এমনকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও খোঁজ মেলেনি ভারতীয় ভিসার হিসাবের দ্বায়িত্বে কে রয়েছে। তাহলে কে নিবে এই সকল কার্যক্রমের হিসাব, আর কে নিবে এই সকল দুর্নীতির দায়ভার কার? আবার অনেকেরই প্রশ্ন আসছে ভারতীয় ভিসা নিতে যে টাকাটা নেওয়া হচ্ছে তা কি ভিসার মুল্য, নাকি সার্ভিস চার্জ? এমন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আগামী পর্বে হাজির হবো। চোখ রাখুন পরবর্তী প্রতিবেদনের অপেক্ষায়।