রাজশাহী ব্যুরোঃ দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ রাজশাহী মহানগর সম্মেলন নিয়ে উদ্বিগ্ন দলের নেতৃবৃন্দ। তবে কেন্দ্রীয় যুবলীগ থেকে রাজশাহী মহানগর সম্মেলনের ইঙ্গিত পাওয়ার পর থেকে আবারও চাঙ্গা হতে শুরু করেছে যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। ২৩ সালের শেষ অথবা ২৪ সালের শুরুতে ১২তম সংসদ নির্বাচন। আগামীর নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের সুসংগঠিত করতে একের পর এক দলীয় কর্মসুচী ও সম্মেলন দিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসিন দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। সেই ধারাবাহিকতায় রাজশাহী যুবলীগকে সুসংগঠিত করতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে ঐ নির্দেশনা পত্রে শুধু মাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এরপর ২০ ফেব্রুয়ারী জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার শেষ সময় পর্যন্ত ৩০ টি জীবনবৃত্তান্ত জমা হয়েছে বলে জানাগেছে। এর মধ্যে ১১ টি সভাপতি ও ১৯ টি সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজশাহীতে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি ছিলো। একই দিনে জামায়াত বিএনপির দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতার প্রতিবাদে রাজশাহী মহানগর যুবলীগ তাদের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় দলীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করে। অথচ সাংগঠনিক প্রোগ্রামে যোগদান না করে কেন্দ্রীয় নেতাদের তোষামোদিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন মহানগর যুবলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি। এমনটায় অভিযোগ মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক নেতৃবৃন্দ ও তৃনমুল কর্মীদের। এদিকে নাটোর সিংড়া উপজেলা যুবলীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল ও রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. হেলাল উদ্দিনকে নিয়ে নিজে গাড়ি চালিয়ে সিংড়ায় যান মহানগর যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী তৌরিদ আল মাসুদ রনি। সিংড়া উপজেলা ও পৌর শাখার সম্মেলনে যোগ দিতে দুই কেন্দ্রীয় নেতা সকালের ফ্লাইটে ঢাকা থেকে রাজশাহী আসেন। এরপর বিমানবন্দর থেকেই তাদেরকে নিয়ে সিংড়া চলে যান রনি। অর্থাৎ বলা যেতে পারে কেন্দ্র থেকে নির্দেশিত কর্মসূচি বাদ রেখে গাড়ি চালিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের অন্য জেলার সম্মেলনে নিয়ে গিয়েছেন রাজশাহীর এই নেতা। শুধুমাত্র রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সন্তুষ্ট করতেই তিনি এমন কাজ করেছেন এমনটায় অভিযোগ। সে কারণে বিএনপি-জামায়াতের পদযাত্রা কর্মসূচির দিনে যুবলীগের কর্মসূচিকে কেন্দ্র থেকে গুরুত্ব দিলেও ওই সভাপতি প্রার্থীর কাছে সেই প্রোগ্রামের গুরুত্ব পায়নি। বিষয়টি রাজশাহীর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দিলেও যেখানে চলতো, এছাড়াও তাদেরকে সিংড়া রেখে সেখান থেকে ফিরে এসে কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার সুযোগ ছিলো, কিন্তু তৌরিদ আল মাসুদ রনি সিংড়ার সম্মেলনে থেকে যাওয়াটা দৃষ্টিকটু বলে মনে করছেন। কেন্দ্র থেকে প্রার্থিতার জন্য জীবনবৃত্তান্ত চাওয়ার পর প্রার্থী হতে আগ্রহ জানিয়ে জীবনবৃত্তান্ত দাখিল করা একজন নেতার সঙ্গে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বের এমন অযাচিত ভ্রমণ নিয়েও তারা প্রশ্ন তোলেন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়ি, ঢাকায় চেম্বার, টেন্ডারের কাজ, মোবাইল ফোন, রাজশাহীর প্রতি সফরে প্লেনের টিকিট, উন্নত মানের থাকার ব্যবস্থা এবং নিজ গাড়ি ব্যবহারের সুযোগসহ বিভিন্ন ধরনের গিফটের মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে প্রতিনিয়ত অগ্রাধিকার দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন পদপ্রার্থীরা। রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন পক্ষপাত মূলক আচরণ আগামী দিনের নগর রাজনীতিতে অশনি সংকেত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী তৌহিদ আল মাসুদ রনি বলেন, রাজশাহীতে আওয়ামী যুবলীগে বিভাজন থাকলেও আমার নিয়ন্ত্রণে চলে। এই শহরের যুবলীগের ৯৫ ভাগ কর্মী আমার হাতে। আর কেন্দ্রের নেতাদের কথা বলছেন? এটাতো নতুন কিছু না! এতদিন কোথায় ছিলেন এধরনের প্রশ্ন করছেন? একটি পক্ষ আমাকে রাজনৈতিক ভাবে আটকানোর চেষ্টা করছে। আমার কোনকিছু খুঁজে পাচ্ছেনা তাই এখন এমন ইস্যু তুলে ধরছে। তবে তার ঈর্ষা ও প্রভাব বিস্তার মুলক বক্তব্যে প্রতিবেদককে বলেন, এই মহানগর যুবলীগকে কে চালাই জানেন? না জানলে জেনে নেন। আমি চালাই। পরে নিউজের বক্তব্য কোড করার কথা বললে তিনি বলেন, এটা কি নিউজ করা জরুরি? আমিও একটি নিউজ পোর্টালের চেয়ারম্যান এটা তো জানেন? বলে ফোন রেখে দেন।