নাগরপুর প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধলেশ্বরী নদী এলাকায় অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতেছে
শাজান মোল্লা (৭০), ছেলে শরিফ মোল্লা (৩৫), শফিকুল মোল্লা (৩৮), জাকির মোল্লা (৩৫)
মোল্লারা উপজেলার ধলেশ্বরী নদীরপাড় সহ সহবতপুর ইউনিয়নের নলসন্ধ্যা, নন্দপাড়া, জিয়াখালি এলাকার পুরো আবাদযোগ্য কৃষি জমি ও নদীর পাড় কেটে নিচ্ছে ২৪/৭ দিন। করোনা মহামারির আগে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ধলেশ্বরী নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে, নদী খনন করে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেন। কোটি টাকার এ খননে, পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর দুই পাড় মেরামত করে সেখানে গাছের চারা রোপন করে দেয়। আর খননকৃত বালির স্তুপ করে রেখে দেয়। কিন্তু বালু দস্যুরা এসব স্তূপ থেকেও দিনে রাতে নিয়ে যাচ্ছে বালি।
ফলে একদিকে যেমন হাজারো হেক্টর কৃষি জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে গ্রামীন পথঘাট হয়ে পড়েছে চলাচলা যোগ্য। উপরন্তু রয়েছে ইটভাটার তীব্র তাপ ও বায়ু দূষণ। ভূমি দস্যুদের এই কর্মযজ্ঞে আজ ভাঙ্গন হুমকিতে রয়েছে নন্দপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ শত শত বসতি।
উল্লেখ্য সদ্য খননকৃত নদীর পুরো পাড় কেটে নেয়ার আজ নিশ্চিহ্ন হয়েছে গাছ ও নদীপাড়
সরজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বল্লে, তারা বলেন, এসবের দায়ে কে নেবে? বালু দস্যুদের জন্য আজ আমরা ফসল ফলাতে পারছি না। থাকতে হবে অনাহারে। বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে দিয়েও শান্তিতে থাকতে পারিনা, কখন যেন দানব গাড়ির নিচে পড়বে। মধ্য রাত থেকেই শুরু হয় প্রকান্ড শব্দে বালু উত্তোলন, চলে রাত পর্যন্ত। অপরদিকে ইট ভাটার যন্ত্রনা। বালুর গাড়ি চলাচলের ফলে রাস্তাঘাট চলাফের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিবাদ করলে নির্যাতন ও হামলা শিকার হতে হয়। আমাদের দেখার কেউ নেই। যে যেভাবে পারছে মাটি, বালু নিয়ে যাচ্ছে। কেউ ভেকু দিয়ে, কেউ বেলচা দিয়ে, কেউ কোদাল দিয়ে আবার কেউবা ঝাকায় করে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। এ যেন হরিলুটের মেলা। কোথাও ৬ ফুট আবার কোথাও ১০ ফুট গর্ত করে নিচ্ছে মাটি। মাটি কাটতে কাটতে পানি বের হওয়া পর্যন্ত তারা গর্ত করে মাটি নেয়।
অপরিকল্পিত ভাবে আবাদি জমি, নদীর পাড়, নদীর পাড় খননের ফলে খাদ্য শস্য উৎপাদন বিলঙ্ঘিত হচ্ছে। এছাড়াও স্থায়ীভাবে আবাদ যোগ্যতা হারাচ্ছে এসব ভূমি।
আগামী বর্ষা মৌসুমে নদীপাড়ে তীব্র ভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এছাড়া হুমকিতে রয়েছে শত হেক্টর আবাদি জমি ও বসতি।
একাধিক ভেকু দিয়ে শত শত বালুবাহী ট্রলি ট্রাক্টরের সাহায্যে এই বালু উত্তোলন হলেও মোল্লাদের বর্বর নির্যাতের ভয়ে নীরব রয়েছে এলাকাবাসী। জোর করেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেই জমির মালিকদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি সহ মারপিট করার অভিযোগ পাওয়া যায়।
অভিযোগ করে বলেন, আমার ছয় বিঘা জমি সেলোমেশিন দিয়ে ধান আবাদ করি, মেশিনের পাশ থেকে ছয় ফুট গভীর করে মাটি কেটেছে এখন আমার সেলো মেশিন ও সেচের ড্রেন ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে। এখন আমি কি করবো? কার কাছে নালিশ করবো?
স্থানীয়রা জানান, এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষাকালে নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এতে প্রতিবছর বিলীন হয় ফসলি জমি, বসতভিটা, ঘরবাড়ি, মসজিদ-মন্দির, সড়ক, স্কুলসহ নানা স্থাপনা। সে সময় ভাঙ্গরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোটি কোটি টাকার ব্যয়ে জিও ব্যাগ ফেললেও ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
এ বিষয়ে নাগরপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইকবাল হোসেন বলেন, নাগরপুর উপজেলার কোথাও বালু, মাটি উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয়নি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যহত রয়েছে, এ অভিযান চলমান রয়েছে। বালি বা মাটি উত্তোলনের খবর পেলেই আমরা দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নেবো।