মোহাম্মদ আককাস আলী :
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ ও প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী জবই বিল। এই বিল নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় অবস্থিত। মৎস্য, প্রাকৃতিক ও পর্যটন সম্ভাবনাময় এ বিলটিকে ঘিরে এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সাংসদ ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার একটি ইকো-ট্যুরিজম পার্ক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। বর্তমানে খাদ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্যাহ আল মামুন বিলটিকে পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে নান্দনিক কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, জবই বিলের সৌন্দর্যবর্ধনে, বিলে ব্রিজ ও ব্রিজের রাস্তা ধরে দুই পার্শ্বে সারি সারি পিলারগুলো সংস্কারকরণ এবং লাল হলুদ ও সাদা রঙের ছোঁয়ায় রাঙিয়ে তোলা হয়েছে। যার ফলে বিলের সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিলের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা রাস্তার দুই ধারে দর্শনার্থীদের বসার জন্য দৃষ্টিনন্দন বিশ্রামাগার নির্মাণ এবং প্রবেশ মুখে কনক্রিটের উপর ইসপাত খচিত ‘জবই বিল’ লেখা দৃষ্টিনন্দন ফলক স্থাপনের মধ্যে দিয়ে বিল এলাকা সুসজ্জিত করা হয়েছে। যাতে করে দর্শনার্থীরা বিল পাড়ে বসে থেকে বিলের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে এবং বিল পাড়ে বসে বিশ্রাম নিতে পারে।
এছাড়াও বর্ষা মৌসুমে দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে বিল এলাকায় বসানো হয়েছে বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র। জবই বিলে ইউএনওর নান্দনিক উদ্যোগগুলো বিভিন্ন মহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে।
২০২১ সালের এপ্রিলে সাপাহারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পদে যোগদান করেন মো. আব্দুল্যাহ আল মামুন। তখন করোনা মহামারির প্রকোপ চলমান। সীমান্তবর্তী উপজেলা হিসাবে সাপাহারে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ছিল চ্যালেঞ্জিং। ইউএনওর নেতৃত্বে তার টিম করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও মানুষের সেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি সাপাহার উপজেলার শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখা সহ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছেন। তার নান্দনিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে নতুনরূপে জবই বিল কে সাজানো। তার নান্দনিক উদ্যোগের ফলে আরও আকর্ষণীয় রূপ ধারণ করেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেঘেরা ঐতিহ্যের প্রতীক জবই বিলটি।
জবই বিল জীববৈচিত্র্য ও সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি সোহানুর রহমান সবুজ বলেন, দেশি ও পরিযায়ী পাখিদের নিরাপত্তা বিধানে বন বিভাগের ভূতকুড়ি বিলকে সংরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার দাবি আমাদের দীর্ঘ দিনের। ইতোমধ্যে আমরা বন বিভাগ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হাতে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছি। সংরক্ষিত অঞ্চল ঘোষণা হলে পাখির অভাধ বিচরণ, বংশবিস্তার, মা মাছ রক্ষা ও গবেষণা কাজ করা যাবে এবং পর্যটকদের আকর্ষণ আরও বৃদ্ধি পাবে।
ইউএনও আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, জবই বিল কেন্দ্রিক পর্যটন আর্কষন বৃদ্ধির লক্ষে বিভিন্ন স্থাপনা ইতোমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে, এবং কিছু স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিলে পাখির অভয়ারণ্য তৈরির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে করে ঐতিহ্যবাহী জবই বিলের সুস্বাদু মাছ, পরিযায়ী পাখি এবং পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে সারা দেশে পরিচিতি পাবে এটাই আমার প্রত্যাশা।