1. zillu.akash@gmail.com : admi2017 :
  2. editor@dailynewsbangla.com : Daily NewsBangla : Daily NewsBangla
গোদাগাড়ীতে মারামারির পর মাদকের মামলা দিয়ে ফাঁসিয়েছে ছাত্রকে - dailynewsbangla
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৭:২৫ অপরাহ্ন

গোদাগাড়ীতে মারামারির পর মাদকের মামলা দিয়ে ফাঁসিয়েছে ছাত্রকে

ডেইলী নিউজ বাংলা ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৪

গোদাগাড়ীতে মারামারির পর মাদকের মামলা দিয়ে ফাঁসিয়েছে ছাত্রকে

 

রাজশাহী ব্যুরো: সময়টা মাগরিব মুহুর্ত। গোদাগাড়ীর বাইপাস মোড়ে (উজানপাড়া) হঠাৎ সাদা পোশাকের একজন লোক সাগরের হাত চেপে ধরে। সাগর বুঝতে পারে উনি পুলিশের লোক। সাগরকে চিৎকার চেচামেচি করতে নিষেধ করে। তবুও সাগর কয়েকজনকে চিৎকার করে ডাক দিয়ে বলে, আপনারা দেখেন আমাকে অযথা ধরছে! এরপর কয়েকজন লোক ঐ পুলিশকে জিজ্ঞেস করে, এই ছেলেকে কেন ধরেছেন? সে তো ভাল ছেলে। পুলিশ জানায়, এই ছেলে মাদকের ব্যবসা করে, তাকে ছাড়া যাবে না। এমন কথার পর আরও লোকজন জড়ো হয় এবং উত্তেজিত জনতা পুলিশের উপর হামলা করে বসে। এতে পুলিশ ও তার সাথে আসা আরও সাধারণ দুইজন আহত হয়। এরপর শুরু হয় পুলিশি তান্ডব। সঙ্গে সঙ্গে থানায় খবর দিলে দুই ভ্যান পুলিশ এসে গণ পিটুনি শুরু করে। এতে বাদ যায়নি ছাত্র ও বৃদ্ধরা। এসময় পুলিশের লাঠির আঘাতে প্রচন্ড আহতপ্রাপ্ত হয় সরকারি সার্ভে ইন্সটিটিউট রাজশাহীর প্রথম সেমিস্টারের ছাত্র মেহেদী হাসান (১৬)। মেহেদী হাসান উজানপাড়া এলাকার মোঃ গোলাম মোস্তফার ছেলে। এরপর ঘটনাস্থলের প্রতিটি দোকান মালিককে দোকানের ভিতর ঢুকে টেনেহিচড়ে বের করে মারধর করে এবং তাদের আটক করে। এভাবে ৯জনকে আটক করে পুলিশ। ৫-৬ ঘন্টা আটকে রাখার পর আসাদুজ্জামান নামের একজনকে রেখে বাঁকীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে আসাদুজ্জামানসহ আরও দুইজনকে পলাতক দেখিয়ে ৮০গ্রাম হিরোইনের মামলা দেয় পুলিশ। যার মামলা নাম্বার ৪৩/২৩৬। এমন ঘটনার তিব্র সমালোচনা করে মিডিয়ার সহযোগিতা চেয়েছেন এলাকার সচেতন মানুষ। পরে সরেজমিন খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) মাগরিব আযানের আগ মুহুর্তে গোদাগাড়ী উপজেলার উজানপাড়া বাইপাস মোড়ে পুলিশ সদস্যের সাথে সাধারণ মানুষের মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়ছে অনেকেই। প্রথম সাগর নামের যে ছেলেটিকে ধরার চেষ্টা করা হয়েছিল, সে উজানপাড়া এলাকার মৃত আকবর আলীর ছেলে। সে মাটিকাটা আদর্শ ডিগ্রী কলেজের বিএ (ব্যচেলর অব আর্টস) ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থী। সাংসারিক অভাব অনটনের কারনে ইতিমধ্যে চাকরির জন্য অনেক জায়গায় ধরনাও ধরছেন। শুধু তাই নয়, যাদের বিরুদ্ধে ৮০ গ্রাম হিরোইনের মামলা দেওয়া হয়েছে তাদের কারোর বিরুদ্ধে পূর্বের কোন মামলা নাই। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসির সাথে বললে বাইপাস মোড়ের এক দোকানদার বলেন, এখানে মাদক উদ্ধারের কোন ঘটানা ঘটেনি। পুলিশ মাঝে মাঝে এই এলকার সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ফাইদা হাসিল করে। কেউ মামলা মোকাদ্দমার ভয়ে প্রতিবাদ করে না। আজও এরকম করার চেষ্টা করেছিল। পরে পুলিশের লাঠি চার্জে আহত মেহেদী হাসানের সাথে কথা বললে সে বলে, দেখেন আমাকে মেরে কি করেছে!! বলে প্যান্ট খুলে দেখানোর চেস্টা করে। কিন্তু লোকজন থাকায় প্যান্ট খুলে আঘাতের চিহ্ন দেখা হয়নি। আমি রাজশাহীতে সরকারি সার্ভে ইন্সটিটিউটে পড়াশোনা করি। প্রতিদিন সকাল ৮ টায় চলে যায় এবং দুপুর ২ টায় কলেজ শেষ করে ফিরে আসি। এরপর দুপুরে খাওয়ার পর বিকাল থেকে আব্বুর দোকানে একটু সহযোগিতা করি। ১৮ তারিখ বিকালে আব্বু আমাকে দোকানে বসিয়ে রেখে নামাজের জন্য বের হয়। একটু পর দেখি হঠাৎ চিৎকার চেচামেচি। পরে জানতে পারলাম, একজন সাদা পোশাকের পুলিশ কাউকে ধরেছে। এতে স্থানীয় কয়েকজন বাধা দিয়েছে। কিন্তু কারা বাধা দিয়েছে বা কাকে ধরেছে আমি কিছুই জানিনা। কিছুক্ষণ পর অনেক পুলিশে এসে এখানকার দোকানদারদের দোকন থেকে বের করে পিটিয়েছে। আমাকেও দোকানের ভিতরে ঢুকে গালিগালাজ, কলার ধরে টেনে দোকান থেকে বের করে লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করে। সাংবাদিকের কাছে এমন বিবরণ দিতেই মেহেদী পিতা মোস্তফা আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমি আমার সন্তানের উপর কোন দিন আঘাত করিনি। অথচ বিনা কারনে, বিনা অপরাধে কেন আমার নাবালক সন্তানকে কেনো মারা হলো? এভাবে একে একে সাংবাদিকদের সামনে এসে বলতে শুরু করে উজানপাড়া এলাকার আনুয়ারুল ইসলামের ছেলে মোঃ রায়হান আল হুসাইন (২৮), মৃত এনামুল এর ছেলে আল আমিন (৩৫), আফসার আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪২)সহ অনেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সাংবাদিককে জানান, পুলিশ এভাবে মাঝে মধ্যে সাধারণ মানুষকে ফাঁসান, হয়রানি করান। আবার কারো জীবনের রঙ্গিন পাতায় কালো দাগ ফেলেছে কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যরা। সাগর নামের এই ছেলেটার জীবনে দাগ পড়ে গেল। তার আর সরকারি চাকরিই করা হবে না! এভাবে সাধারণ জনগণের সাথে কথা বলে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেন সেই মাদক মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই আমিরুল। তার সাথে কথা বললে, তিনি মুখে কুলুপ দিয়ে বসেন। কোন পুলিশের সাথে মারামারি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি মারামারির বিষয়ে কিছু জানিনা। আমি মাদক মামলা তদন্ত করছি বলে এড়িয়ে যান। তবে মাদক মামলার প্রত্যাক্ষদর্শী অর্থাৎ দুইজন সাক্ষি বলছে আমরা কিছুই দেখিনি এবং জানিনা। তাদের ফোন কল রেকর্ড মিডিয়ার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। এমন অভিযোগের বিষয়ে গোদাগাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আ: মতিনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সেখানে মাদক উদ্ধার অভিযান চলছিল। ঐ সময় একজন মটরসাইকেল আরোহীকে ধরতে গেলে সে পালিয়ে যায়। সেখানে ৮০ গ্রাম হিরোইন উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর সন্দেহভাজন একজনকে ধরতে গেলে স্থানীয়দের সাথে ভুল বোঝাবুঝি হয়। কোন মারামারি হয়নি। এগুলো মিথ্যা কথা। তাহলে, পুলিশ কেন সেখানকার দোকানদারদের মারধর করলো এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, পুলিশ কেন এমন করবে? পুলিশের সাথে কিসের শত্রুতা? পুলিশ কাউকে মারধর করেনি। আপনার জানার মধ্যে ভুল রয়েছে বলে ফোন রেখে দেন। বি:দ্র: গত দিনের সেই ঘটনায় একজন কনেষ্টেবল, থানার ঝাড়ুদার এনামুল ও কথিত সোর্স হৃদয়কে নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো সংবাদ