গোদাগাড়ীতে শিক্ষার্থীকে মাদক দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে জনতার রোষানলে পুলিশ
রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে গোগ্রাম স্কুল এন্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টায় জনতার হাতে এক পুলিশ সদস্য আটক হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঐ পুলিশ উপজেলার প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই।
শনিবার (০৪ মে) রাত ৮.৩০ মি: এর দিকে এই ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনার খবর পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদে অসংখ্য সাধারণ মানুষ ও পুলিশ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে সেখানে উপস্থিত হয়েছেন সহকারি পুলিশ সুপার (সার্কেল), অফিসার ইনচার্জ (ওসি), প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (আইসি), জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এর ওসিসহ অসংখ্য পুলিশ সদস্য।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের সাথে বলে জানা যায়, উপজেলার গোগ্রাম এলাকার মোর্তজা রেজা’র ছেলে মো: সোহানুর রহমান সোহান (১৭), ইসতাকিমের ছেলে নুর আলম (১৮) ও নব্য নমুসলিম শ্রী রাজু কুমারের ছেলে আব্দুর রহিম (১৭) মিলে রাত ৮.৩০ টার দিকে কোল্ডড্রিংকস হাতে নিয়ে স্কুল মাঠে যায়। এরপর এফজেড ও টিভিএস মোটর সাইকেল নিয়ে চারজন লোক এসে তাদের জিজ্ঞেসবাদ করে। এরমধ্যে একজন এসে তাদের হাতে থাকা মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এবং অনেক উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করে। তিনজনের নাম জিজ্ঞেস করে এবং সোহান নামের ছেলেটিকে তুলে নিয়ে চলে যায়। অবশ্য তিনজনের বিকাশ ও নগদ একাউন্ট চেক করে তারা। কিন্তু সোহানের বিকাশ ও নগদে থাকা ৫০০+৮০০ টাকা তারা নিয়ে নেয়। এরপর তার পরিবারের কাছে ২ লক্ষ টাকার দাবী করে। নাহলে হিরোইন মামলা দিয়ে চালান করে দিবে বলে ভয়ভীতি দেখায়। সোহান তার পরিবারের সাথে হুয়াটসএ্যাপে যোগাযোগ করে। সোহানের ফোন থেকে তারাও কথা বলে এবং ডিবি পুলিশের পরিচয় দেয়।
এসময় সোহানের পরিবার সোহানকে খুঁজাখুজি করলে, গোগ্রাম বাজারে প্রেমতলী ফাঁড়ির এএসআই আনোয়ারকে দেখতে পান। এরপর আনোয়ারকে জিজ্ঞেস করলে সে বিষয়টি অস্বীকার করে এবং তাদের থেকে উল্টো জানতে চাই। এতে এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়।
পরে এএসআই আনোয়ারকে আটকে রেখে মেম্বার, চেয়ারম্যান ও ওসিকে ফোন দেয়। এসময় প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপস্থিত হয়ে জনতার উপর লাঠিচার্জ করে। এতে পরিবেশ বেগতিক হয়।
পরে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন গোদাগাড়ী জোনের সহকারি পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো: সোহেল রানা। পরে পুলিশের এই কর্মকর্তা জনতার সাথে কথা বলে সবাই শান্ত করে। শুরু হয় জোরতদন্ত। ঘটনার প্রতিটি স্থান ঘুরে দেখেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সহকারি পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো: সোহেল রানা এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি এই মাত্র এসেছি, বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি। অপরাধী যেই হোক ছাড় পাবে না। আপনারা এসেছেন কোন কিছু জানতে পারলে আমাকে একটু তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। এখানে যে পুলিশের সাথে ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমি ভুক্তভোগী সোহান, নুর আলম ও রহিমের সাথে কথা বলেছি তারা বলেছে এই পুলিশ সদস্য সেখানে ছিলেন না। আমরা বের করার চেষ্টা করছি কারা ছিলেন। তবে মনে হচ্ছে বাইরের কেউ এমনটা করতে পারে।
কি ঘটেছে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী সোহান জানায়, রাত সাড়ে আটটার দিকে স্কুল মাঠে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল। হঠাৎ সাধারণ পোশাকের চার লোক এসে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করেন এবং আমাকে তুলে নিয়ে যায়। তাদের কাছে থাকা হ্যানকাপ আমার হাতে পরিয়ে দেয়। এরপর আমার থেকে ২ লক্ষ টাকা চাই, নাহলে হিরোইন মামলা দিয়ে চালান দিবে বলে ভয় দেখায়। প্রায় আধাঘন্টা আটকে রেখে ছেড়ে দেয় আমাকে। অবশ্য আগামীকাল তারা আবার আসবে বলে জানিয়েছে।
পরবর্তী ঘটনার প্রত্যাক্ষদর্শী এক স্কুল শিক্ষক জানান, গত এক মাসে এই এলাকা থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এই চক্রটি। আজকে যে ছেলেটিকে নিয়ে গিয়েছিল, সে আমার ছাত্র। সে এবার এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছে। এলাকায় উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সবাই ব্যস্ত দিন পার করছে। বিগত দিনে যারা এভাবে টাকা নিয়েছে তাদের মধ্যে গোদাগাড়ী থানা পুলিশের লোক ছিল। আমি ও এলাকার অনেক লোক তাদেরকে চিনে। তাদের সাথে আমাদের এলাকার কয়েকজনও জড়িত রয়েছে। আমরা চাই, আর যেন কোন পরিবার নিঃস্ব না হয়, আর যেন কোন মায়ের বুক খালি না হয়!!!