বগুড়ায় স্বামীকে হত্যার দায়ে স্ত্রীর যাবজ্জীবন ও প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড
(বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার বহুল আলোচিত জামাল উদ্দিন ওরফে খাজা হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রীর যাবজ্জীবন এবং তাঁর পরকীয়া প্রেমিককে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে বগুড়ার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ হাবিবা মন্ডল এই রায় দেন। দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- নিহত জামালের স্ত্রী জেসমিন আকতার এবং তাঁর পরকীয়া প্রেমিক মোজাফফর হোসেন। রায়ে জেসমিন আকতারের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও তা অনাদায়ে ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড এবং মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি মোজাফ্ফরেরও একই পরিমাণ জরিমানা করা হয়। রায় ঘোষণার সময় দুই আসামিই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী ফেরদৌসী আকতার রুনা। উল্লেখ্য, গত ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে শহরের বৃন্দাবন পূর্বপাড়া এলাকায় শোবার ঘর থেকে জামাল উদ্দিন খাজার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত খাজা ওই এলাকার মৃত আমির আলী খলিফার ছেলে। তিনি একটি বেকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। আইনজীবী রুনা জানান, জামালের স্ত্রীর সাথে মোজাফফরের সাথে সম্পর্ক ছিল। খাজার স্ত্রী এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করলেও মোজাফফর বারবার তাকে বিয়ের চাপ দিতে থাকে। এদিকে গত ২৫ নভেম্বর খাজার বোন আম্বিয়া মারা গেলে খাজা স্ত্রী ও সন্তানসহ শাজাহানপুর উপজেলার ফুলদিঘী এলাকায় যায়। সেখানে খাজার পরিবারের অন্যান্য লোকজনসহ মোজাফফরও উপস্থিত ছিল। গত শুক্রবার ফুলদিঘী থেকে খাজার স্ত্রী তার ছেলেকে রিমনকে সাথে নিয়ে তার বাবার বাড়ি সদর উপজেলার চাঁদমোহা হরিপুর খেরুয়াপাড়া যায় এবং খাজা সন্ধ্যার আগে নিজ বাড়িতে যায়। খাজার স্ত্রী-সন্তান বাসায় না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে মোজাফফর ওইদিন রাত পৌণে ৯টার দিকে খাজার বাড়িতে যায়। সেখানে যেয়ে খাজাকে উত্তেজিত করার জন্য তার স্ত্রীর এর সম্পর্কে নানা ধরণের অশালীন ও বাজে কথাবার্তা বলতে থাকে। এতে খাজার সাথে মোজাফফরের বাক-বিতন্ডতা শুরু হয়। একপর্যায়ে মোজাফফর ঘরের মধ্যে থাকা লোহার শাবল দিয়ে খাজার মাথায় এলোপাথারী আঘাত করে। এতে খাজা মারা যায়। পরে মেঝেতে লাশ কম্বল দিয়ে ঢেকে রেখে শয়নঘরের দরজা বাহির থেকে বন্ধ করে দেওয়াল ডিঙিয়ে কৌশলে পালিয়ে যায়। পরেদিন শনিবার সকালে খাজার ছেলে জেমস রিমন তার নানা বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে এসে দরজায় ডাকাডাকি করলেও ভেতর থেকে কোন শব্দ পায় না। পরে ছেলে বাড়ীর প্রাচীর ডিঙিয়ে ভেতরে গিয়ে দরজা খুলে খাজার মরদেহ দেখতে পায়। তিনি আরও জানান পরে এ ঘটনায় জামালের ছেলে জেমস রিমন হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় আদালতে সকল সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে আদালত নিহত খাজার স্ত্রীর যাবজ্জীবন এবং তার পরকীয়া প্রেমিক মোজাফফরকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন।