বগুড়ার তিন উপজেলায় একজন সাব-রেজিস্ট্রার মধ্যরাত পর্যন্ত চলে জমির দলিল সম্পাদন
(বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়া ও জয়পুরহাটের তিন উপজেলার দায়িত্ব পালন করেছেন একজন সাবরেজিস্ট্রার। সারিয়াকান্দি উপজেলায় রাত ১২ টা পর্যন্ত হয় জমির দলিল রেজিস্ট্রি। চরম দুর্ভোগের শিকার হন চরাঞ্চলের মানুষ। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে এগারোটা। সারিয়াকান্দি উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে তখনও লোকজনের ভিড়। কেউ কেউ রাস্তায় বসে বসে ঝিমাচ্ছিলেন। অনেকেই সারাদিন না খেয়ে একেবারেই নাজেহাল। ছোট শিশুরা মায়ের কোলেই ঘুমিয়ে পড়ে। কখনো উচ্চ স্বরে কাউকে প্রতিবাদ করতে শোনা যায়। ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধকে হোটেল থেকে কিনে আনা ভাত খাওয়ানো হয়। এত রাতেও ভবনের দ্বিতীয়তলায় মানুষের ভিড়। মাঝে মধ্যে যখন বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছিল তখন দুর্ভোগের মাত্রা অসহনীয় হয়ে ওঠে। পরে দুর্ভোগের শিকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে এ উপজেলায় প্রতি সপ্তাহে মাত্র একদিন মঙ্গলবার জমির দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করা হয়। এখানে নিযুক্ত সাব-রেজিস্ট্রার একাই তিন উপজেলার দায়িত্ব পালন করছেন। তাই তিনি সপ্তাহের চারদিন অন্য উপজেলার দায়িত্ব পালন করেন। গত রোববার ও সোমবার তিনি বগুড়ার শিবগঞ্জের দায়িত্ব পালন করেন এবং বুধবার ও বৃহস্পতিবার তিনি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার দায়িত্ব পালন করেন। খোঁজ নিয়ে সারিয়াকান্দি সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাত ১২ টা পর্যন্ত সর্বমোট ১৮০ টি দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়েছে। দুর্গম চরাঞ্চল চালুয়াবাড়ী থেকে দলিল করতে আসা একজন ভুক্তভোগী বলেন, দলিল সম্পাদন করার জন্য খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেছি। এরপর নৌকাযোগে অনেক দূরত্বের যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে সকাল ৯ টার আগে সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরে এসেছি। দুপুরের পরপরই দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হওয়ার কথা। এজন্য দুপুরে শুধুমাত্র পাউরুটি এবং কলা খেয়েই আছি। এখন রাত সাড়ে এগারোটা। জমির দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়নি। ক্ষুধা এবং ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে আসছে। এ রাতে আমরা কোথায় যাব। এই দুর্ভোগের অবসান হওয়া জরুরি। এ বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রার শরিফুল ইসলাম জানান একা তিন উপজেলার দায়িত্ব পালন করতে তিনিও হিমশিম খাচ্ছি। এত রাত জেগে দলিল সম্পন্ন করেও সকালে আবার জয়পুরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে কালাই উপজেলার দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমিও দুর্ভোগে আছি। সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রশাসক মো; তৌহিদুর রহমান বলেন, সারিয়াকান্দিতে সপ্তাহে একদিন মাত্র দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হওয়ার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করার কর্মদিবস বাড়ানোর জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।