রাজশাহী ব্যুরো : প্রায় ৮ মাস অনুপস্থিতির পর স্কুলে যোগদান করতে আসলে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির খবর পাওয়া গেছে রাজশাহীর মোহনপুরে। ঘটনাটি উপজেলার মতিহার উচ্চ বিদ্যালয়ের। গত ৯ এপ্রিল স্কুলের কম্পিউটার অপারেটর শামীম হোসেন যোগদান করতে আসলে শুরু হয় এই হাতাহাতি।
বাবা ছিলেন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান এবং স্কুল কমিটির সভাপতি। আর শামীম ছিলেন ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক। সেই সুবাদে এলাকার স্কুলের অফিস সহায়ক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি পেয়েছিলেন শামীম হোসেন। শামীম মোহনপুর উপজেলার মাতিহার গ্রামের হযরত আলী চেয়ারম্যানের ছেলে এবং যুবলীগের নেতা। ২৪ এর ৫ আগষ্টে হাসিনা সরকারের পতন হলে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান শামীম ও পিতা হযরত আলী। দীর্ঘ আট মাস পর স্কুলে যোগদান করতে আসলে শুরু হয় পক্ষ বিপক্ষের বাধা-বিপত্তি। এতে হাতাহাতি হয় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে। তবে কোন বিধানের সূত্রে স্কুলে পুণরায় যোগদান করাবেন বুঝতে পারেননি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন সাহা। কারন দীর্ঘ অনুপস্থিতির ব্যাপারে কোনদিন স্কুল প্রধানকে অবগত করেননি শামীম। এদিকে দুই মাসের অনুপস্থিতির পর রেজুলেশের মাধ্যমে শামীমের বেতন বন্ধ করে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
একটি সূত্র বলছে, শামীম আত্মগোপন থেকে এলাকায় প্রবেশ করায় দিতে হয়েছে মোটা অংকের টাকা। সূত্রটি আরও নিশ্চিত করেছে। বিএনপির একটি পক্ষ সেই টাকা নিয়েছেন। এই খবর জানাজানি হলে আরেকটি পক্ষ এর বিরোধিতা করেন এবং স্কুলে যোগদান করতে দিবেনা মর্মে হুশিয়ার করেন। পরে ৯ এপ্রিল সকালে শামীম স্কুলে যোগদান করতে গেলে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এঘটনায় মিলন সরকার (৩৫) নামের একজন থানায় লিখিত অভিযোগও করেছেন। অবশ্য লিখিত অভিযোগে তিনি স্কুলের ঘটনা উল্লেখ করেন নি। মিলন মতিহার গ্রামের আ: জলিল সরকারের ছেলে।
ব্যাপারটি নিয়ে অভিযোগকারি মিলন সরকারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, মতিহার উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর শামীম হোসেন দীর্ঘদিন ধরে (আট মাস) স্কুলে আসেন নি। অথচ সেই ছেলে হঠাৎ আমাদের একটি গ্রুপকে ম্যানেজ করে স্কুলে যোগদানের চেষ্টা করেছে। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের আমলে তারা বাবা ছেলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ব্যাপক ভাবে অন্যায় দুর্নীতি করেছে। আমরা কিছু সচেতন ছেলেরা এতে আপত্তি জানিয়েছি এবং বাধা প্রদান করি। এসময় ইউনিয়ন যুবদলে সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক আকরাম হোসেনসহ কয়েকজন মিলে আমাদের উপর চড়াও হয় এবং গায়ে হাত দিয়ে বসেন। পরে ব্যাপারটি নিয়ে উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের জানালে তারা দলীয় ইস্যু টানতে নিষেধ করেন। তাই আমার অভিযোগের কারন ও ঘটনা অন্যভাবে লিখতে হয়েছে। আমি ইউনিয়ন কৃষক দলের সদস্য সচিব হিসেবে আছি। এরপর ঘটনার সত্যতা নিয়ে ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকরাম হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
তবে স্কুলের কম্পিউটার অপারেটর শামীম হোসেন,ও তার পিতা হযরত আলী চেয়ারম্যানের ব্যাপারে এলাকায় খোঁজ খবর নিলে জানা যায় অনেক তথ্য। হযরত আলী আওয়ামী সরকারের একক ভোটের চেয়ারম্যান ছিলেন। ছেলে শামীম হোসেন ছিলেন ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। তারা আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘ সময় করেছেন রামরাজত্ব। কামিয়েছেন দু-হাতে। এলাকার জামায়াত শিবির ও বিএনপি নেতা কর্মীদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন বাবা ছেলে। তারা ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে বাধা প্রদানের অন্যতম সহযোগী। এই হযরত আলী চেয়ারম্যান হওয়ার পাশাশাশি হয়েছিলেন মতিহার স্কুলের সভাপতি। তাই ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের সন্তানদের দিয়েছেন স্কুলের চাকরি। এই স্কুলে হযরত আলীর আরেক মেয়ে শিক্ষিকা হিসেবে রয়েছেন।
অনুপস্থিতির কারন জানতে শামীম হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ৬ আগষ্ট রাজশাহী মহানগরীর কাজলা মোড়ে মটর সাইকেল একসিডেন্ট করেছিলেন। তিনি এতদিন কেন অনুপস্থিত ছিলেন জানতে চাইলে তিনি জানান, সে রাজনৈতিক চাপে ছিলেন এবং বিশ্রামে ছিলেন।
দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে যোগদানের ব্যাপারে মতিহার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন সাহা’র সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি কাগজ কলমে এখনও যোগদান করায় নি। সে স্কুলে এসেছে এবং একটি পক্ষ আপত্তি তুলেছে। তিনি কেন এতদিন অনুপস্থিত ছিলেন এর কি কারন বলেছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সে নাকি মটর সাইকেল দুর্ঘনায় আহত ছিলেন। আর দলীয় কিছু চাপ ছিল তাই বলেছে। এতদিন অনুপস্থিত থাকার পর কর্মস্থলে যোগদান করলে এটি বৈধ হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরে কথা হয় স্কুল কমিটির সভাপতি মোখলেছুর রহমান মুকুলের সাথে। তিনি বলেন, শামীমের যোগদানের ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। স্কুল থেকে আমাকে জানানো হয়নি। শামীমের নিয়োগ ও দলীয় কর্মকান্ড নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি কয়েক মাস হয়েছে স্কুল কমিটির দায়িত্বে আসা। তাই তেমন কিছু জানা নাই। আপনি বললেন আমি খোঁজ খরব নিয়ে দেখবো এবং ঘটনার সত্যতা থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নিব। তবে শামীম ও তার বাবা হযরত আলী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।
এব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আ: ওয়াহাব এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এভাবে যোগদান করতে পারেন না। একজন শিক্ষক বা কর্মচারী এক দিন অনুপস্থিত থাকতে পারবে না। সে যদি কোন কারনে অনুপস্থিত থাকে তাহলে স্কুল কর্তৃপক্ষকে অবগত করে ছুটি আকারে দেখাতে হবে। আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন, আমি ব্যবস্থা নিব। তবে গত ৫ আগষ্টের পর অনেক প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।