রাজশাহী ব্যুরো: গত ৬ মে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের হড়মবিলে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহাবুবুল ইসলাম। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করার সময় ইউএনওকে প্রশ্ন করার দায়ে এক সাংবাদিককে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই মাসের কারাদন্ড প্রদান করেছেন ইউএনও।
বিষয়টি গণমাধ্যমে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এনিয়ে জেলায় কর্মরত বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠণের নেতৃবৃন্দরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাস পূর্বে
উপজেলার গোবিন্দপাড়া ইউপির মাড়িয়া হড়মবিলে পতিত ও অনাবাদি জমির একটি অংশে পুকুর খনন করছিলেন করখন্ড এলাকার বিদ্যুৎ। তিনি যেখানে পুকুর খনন করছিলেন সেখানে বারো মাস পানি জমে থাকায় কোন ফসল আবাদ হয়না। জমির কৃষকরা ভূমির সদব্যবহার করতে পুকুর খননের জন্য বিদ্যুৎ কে লীজ দেন। এতে বড় বাধা হয় পার্শ্ববর্তী বাকশৈল গ্রামের মাইনুদ্দিন, তার স্ত্রী রোকসানা ও এলাকার একটি কুচক্রি মহল। তারা পুকুর খনন করতে লীজ গ্রহীতা বিদ্যুৎ এর নিকট থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। বিভিন্ন সময়ে বিদ্যুত তাদের ম্যানেজ করে সেখানে কোনভাবে বাউন্ডারি দিতে পারলেও মাইনুদ্দিন ও তার স্ত্রী রোকসানাবেগমকে চাহিদামত টাকা না দিতে পারায় পুকুর খনন করতে দেননি। বাউন্ডারির একটি অংশে ওয়ারিশান ঝামেলাপূর্ণ
মাইনুদ্দিনের ২৫ শতাংশ জমি রয়েছে। পুকুর খননের সময় ঝামেলায় পরিপূর্ণ জমিটি ছেড়ে রেখে কাটলেও আবারো মোটা অংকের অর্থ দাবি করে মাইনুদ্দিন ও তার স্ত্রী। বিদ্যুৎ তাদের দাবি না মানায় বিভিন্ন দপ্তরে একের পর এক অভিযোগ দিতে থাকে তারা।
মাইনুদ্দিন দম্পতির অর্থ দাবির ব্যাপারে স্থানীয় অনেকেই অবগত আছেন। স্থানীয় বকুলের হাত থেকে ইতিপূর্বে রোকসানা নগদ ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন বলেও জানা গেছে। অবশেষে সেই অভিযোগকারিদের অত্যাচারে বিদ্যুৎ খনন কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
এলাকার সরকারি উন্নয়নমূলক রাস্তাঘাট তৈরি করতে ভরাটের জন্য মাটির প্রয়োজন হলে দীর্ঘ দুই মাস পর সেখান থেকে মাটি উত্তলনের সিদ্ধান্ত হয়। গত ৩০ এপ্রিল মাটির প্রয়োজন জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত আবেদন জমা দেন এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ার। ওই আবেদনে খননের স্থানও উল্লেখ করেন এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ার। সেই মোতাবেক গত ৫ মে রাতে সেখানে ভেকু মেশিন এনে রাখা হয়েছিল। খনন কার্যক্রম শুরু করার আগেই অর্থলোভী মাইনুদ্দিন দম্পতি ইউএনও’কে মিথ্যা ও বিভ্রান্তকর তথ্য দিলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করেন ইউএনও মাহাবুবুল ইসলাম। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার খবর পেয়ে সেখানে যান জাতীয় দৈনিক গণমুক্তি পত্রিকার বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম চপল। তিনি ঘটনাস্থলে পৌছামাত্র কোন কিছুর বুঝে ওঠার আগেই তাকে আটকাদেশ দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাহাবুবুল ইসলাম। এতে চরমভাবে হতাশ হন সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম চপল। এরপর ভাংচুর করা হয় ভেকু মেশিন। যার ক্ষতির পরিমান প্রায় তিন লাখ টাকা। এরপর নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে বসে বিনা স্বাক্ষীতে নিরাপরাধ গণমাধ্যমকর্মী মাজহারুল ইসলাম চপলকে দুই লাখ টাকা অনাদায়ে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন ইউএনও। বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি ঘরে তাকে আটক রাখা হলেও পানি পান করতে চেয়েও তাকে পানি ও খাবার কিছুই দেওয়া হয়নি। সন্ধ্যার পরে তাকে বাগমারা থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরের দিন ৭ মে গতকাল বিকালে জেলা মিটিং থেকে ফিরে নগদ ২ লাখ টাকা ইউএনও অফিসে জমা দিয়ে রেহাই মিলে সাংবাদিক চপলের।
এঘটনায় নিরাপরাধ সাংবাদিক চপলকে আটক ও তাকে ২ লাখ টাকা জরিমানা, সাংবাদিক ও পত্রিকা নিয়ে বাজে মন্তব্য করায় জেলায় কর্মরত সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য সাংবাদিকরা ইউএনও এর প্রতি নিন্দাজ্ঞাপন করেছেন। তারা মনে করেন স্বাধীন গনমাধ্যমের উপর নগ্নহস্তক্ষেপ করেছেন ইউএনও মাহাবুবুল ইসলাম।
এঘটনায় ইউএনও তার পছন্দের কিছু সাংবাদিকদের ডেকে তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করান। এরপর কিছু সংবাদ মাধ্যমে ব্যাক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে মিথ্যাচার করেন। যা ওই সাংবাদিক সামাজিকভাবে চরমভাবে হেয়পতিপন্ন করেছে।
থানা হেফাজত থেকে বের হয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম চপল জানান,
ইউএনও উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে মোবাইলে কথা বলার সময় বলেন “স্যার এই সাংবাদিক একটা অখ্যাত পত্রিকার পরিচয় দিচ্ছেন”। ইউএনও’র এমন কথায় পত্রিকাটির চরম মানহানী ও সুনাম নষ্ট হয়েছে। ইউএনও আমার সাথে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। চাইলে তিনি আমাকে ওয়ার্নিং (হুশিয়ারি) দিয়ে ছেড়ে দিতে পারতেন। তার আচরন ছিল সাংবাদিক বিদ্বেষী। তিনি আমাকে সারাদিন না খেয়ে রেখেছেন। পরে থানায় নেওয়ার পর রাত ১২ টার দিকে হালকা খাবার খেয়ে রাত কাটিয়েছি।
এবিষয়ে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহাবুবুল ইসলাম এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি নিয়মানুযায়ী সব কিছু করেছি। ভুক্তভোগীর ধানক্ষেত নষ্ট করছিল। সরেজমিনে তাকে পেয়েছি, আমি আটক করে আইনানুযায়ী জরিমানা করেছি।