মো.আককাস আলী: শস্যভান্ডার হিসাবে খ্যাত নওগাঁয় ৯৭ শতাংশ অবৈধ ইটভাটা গিলছে তিন ফসলী কৃষি জমি। ইটভাটা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম নীতিই মানা হচ্ছে না। খেয়াল খুশি মতো আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা ওইসব ইটভাটার দূষণে চরম দুর্ভোগে স্থানীয় বাসিন্দারা। এ জেলায় ২০৩টি ইটভাটা কারবার করলেও বৈধ কাগজ রয়েছে মাত্র ৭টির। কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব ভাটায় গণহারে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
এতে ব্যাপকভাবে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে গাছে ধরা ফল। আর ইট তৈরির কাজে কেটে তোলা হচ্ছে জমির টপ সয়েল এতে দীর্ঘ মেয়াদে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
গাছ পালার সবুজ অরণ্যের মাঝেই গড়ে তোলা এসব ইটভাটা নওগাঁর মান্দার মৈনম ও মহাদেবপুরের ছাতুনতলী এলাকায়। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ভাটা গড়ে তোলার এ প্রতিযোগিতা চলছে জেলার ১১ উপজেলাতেই। এসব ভাটায় ইট প্রস্তুত করতে কেটে তোলা হচ্ছে আবাদি জমির টপ সয়েল।
অনাবাদী ও অনাবাসিক এলাকায় ভাটা গড়ে তোলার নিয়ম থাকলেও উল্টো চিত্র এখানে। আবাদি জমি ও আবাসিক এলাকায় ইটভাটা গড়ে তোলার পর ছাড়পত্র নিতে সংশ্লিষ্ট দফতরে চলছে দৌড়ঝাঁপ। সম্প্রতি কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব ভাটায় ইট তৈরিতে জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। স্থানীয়রা বলছেন, এসব ভাটার ভয়াবহ দূষণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ গাছ পালায় দেখা দিয়েছে ফলন বিপর্যয়।
অক্টোবরের শেষ থেকে পুরোদমে ইট তৈরিতে ব্যস্ততা বাড়ে এসব ভাটায়। অন্তত ৫ মাস ইট তৈরির এ কারবার চলে। জেলা পরিবেশ অধিতফতরের তথ্য বলছে, এ জেলায় ২০৩টি ইট ভাটা রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৭টি ইট ভাটার বৈধ কাগজ রয়েছে। এসব ইট ভাটার বেশির ভাগই তোয়াক্কা করছে না আইনের।
এসব ইট ভাটায় উর্বর জমির টপ সয়েল কেটে তোলায় কৃষিতে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. সামসুল ওয়াদুদ। অবৈধ ইটভাটার এমন কর্মযজ্ঞ বন্ধে সংশ্লিষ্ট দফতরের শক্ত ভূমিকা রাখার কথা কিন্তু অবলীলায় কথার বানীতে দায় এড়ানোর চেষ্টা পরিবেশ অধিতফতরের উপ পরিচালক মো. মোকবুর হোসেনের।
আর ব্যবসায়ীরা দেখালেন নানা যুক্তি। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, জেলায় সোয়া দু’লাখ আবাদি জমির মধ্যে প্রতি বছর অন্তত আড়াই হাজার হেক্টর উর্বর জমি ইট ভাটায় ব্যবহার হচ্ছে। জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিবেশ কমিটির সভাপতি খালিদ মেহেদী হাসান জানান, সম্প্রতি নওগাঁ সদর ও বদলগাছী উপজেলার কয়েকটি ইটভাটায় মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করেছেন। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
একই কথা জানান, বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর বগুড়ার পরিচালক সুফিয়া নাজিম। উল্লেখ্য, এ নিয়ে এগ্রিকেয়ারটোয়েন্টিফোর.কমসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে সংশ্লিষ্টরা আইন প্রয়োগের হুঁশিয়ারি বাক্য উচ্চারণ করলেও দৃশ্যমান কোনোই উদ্যোগ নিচ্ছেন না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, মান্দায় ৩৮টি, নওগাঁ সদরে ৩৫টি, মহাদেবপুরে ২০টি, ধামইর হাটে ২১টি, বদলগাছীতে ২৬টি, পত্নীতলায় ১৭টি, আত্রাই ১৬টি, রাণীনগর ১২টি, নিয়ামতপুরে ৬টি, সাপাহারে ২টি এবং পোরশায় ১০টি ইটভাটা রয়েছে।