রেজা মাহমুদ,নীলফামারীতে জেলা প্রতিনিধি: গরুর অভাবে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ঘানি টানছেন নীলফামারীর জলঢাকার এলাকার আজিজুল ইসলাম নামে ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধ। কলুর বলদের কথাও যখন মানুষ ভুলতে বসেছে, ঠিক সেই সময়েও মানুষকে দিয়ে ঘানি টানিয়ে তেলের ঘানি বানাচ্ছেন তিনি। নিজ চোখে না দেখলে কারো বিশ্বাসই হবে না আজিজুলের এ জীবন সংগ্রামের কাহিনী। সব কিছুর দাম বাড়লেও সে তুলনায় দাম বাড়েনি তার হাতে তৈরী ঘানির তেলের।
এজন্য আক্ষেপের শেষ নেই তার। কিন্তু কে শোনে তার সেই দু:খের কথা।সরে জমিনে জানা যায়, উপজেলার পৌরশহরের পান্থাপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল্লার ছেলে আজিজুলের নিজস্ব কোন জমি না থাকায় পরের জমিতে কোন রকম ছোট্ট একটি কুড়ে ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন। সাংসারিক জীবনে স্ত্রী আর্জিনা বেগম, ৪ মেয়ে ও ১ ছেলে। তেলের ঘানি টেনে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালাতে রীতিমত হিমসিম খেতে হয় তাকে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াসহ যাবতীয় খরচও চলে এ আয়ের উপর নির্ভর করে। ইতোমধ্যে তিনটি মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে একটি ছেলে সুলতান আলীরও লেখাপড়ার বন্ধের উপক্রম। অভাবের সংসারে বাবাকে সহযোগিতা করতে বেছে নিয়েছে ছেড়া বস্তা সেলাইয়ের কাজ। ছোট মেয়ে আছমা একটি দাখিল মাদরাসায় দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। আজিজুল জানান, দীর্ঘ দু’যুগেরও বেশি সময় ধরে স্ত্রীকে নিয়ে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ ঘন্টা ঘানি টেনে খাঁটি সরিষার তেল বের করে বাজারে বিক্রি করছি। সামান্য আয় দিয়েই কষ্ট করে চালাতে হচ্ছে সংসার।
তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সালে পৌরসভার সাবেক মেয়র ইলিয়াস হোসেন বাবলু আমার নিদারুন কষ্ট দেখে আমাকে ঘানি টানার জন্য একটি বলদ গরু কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু অভাব অনটনের সংসারে মেয়ের বিয়ের খরচ যোগাতে সেই গরুটিও বিক্রি করতে হয়েছে আমাকে। স্ত্রীসহ কষ্ট করে ঘানি টানছি তারপরেও লজ্জায় আর কারও দ্বারে হাত পাতিনি কারও সহযোগিতা চাইনি। স্ত্রী আর্জিনা বেগম বলেন, বয়স হয়েছে ঘানি টানতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। কিন্তু উপায়ও নেই, কি করব? উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান বলেন, পরিদর্শন করে ওই বৃদ্ধ দম্পতির জন্য সহযোগীতা করা হবে। তবে তিনি এলাকার বৃত্তবান ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে ওই পরিবারের সহযোগীতায় এগিয়ে আসার আহবান জানান।